করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বিস্তারের মধ্যেই দেশে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী এসেছে। কিন্তু তাদের অনেকেই কোয়ারেন্টিনে না থেকে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে, স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে মেলামেশা করছে। এমনকি বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও যোগ দিচ্ছে। যা দেশের করোনা বিস্তারের মারাত্মক ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সম্প্রতি বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসীদের অবস্থান শনাক্তের দায়িত্ব পুলিশ বাহিনীকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওই প্রবাসীরা বিভিন্ন কৌশলে লুকিয়ে থাকায় তাদের শনাক্তে পুলিশ বাহিনীকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত ২১ মার্চ থেকে অবতরণ করা সব বিদেশীর হাতে পরবর্তী ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার অমোচনীয় সিল লাগাচ্ছে পুলিশ সদস্যরা। তবে তার আগে অর্থাৎ মার্চের প্রথম দুই সপ্তাহে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসীদের কেবল মৌখিকভাবে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের মধ্যে অধিকাংশই হোম কোয়ারেন্টিনে না থেকে স্বজনদের সঙ্গে মিশে যায়। ফলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে চলতি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে বিদেশ থেকে শুধুমাত্র ঝালকাঠিতে ফেরা ১ হাজার ২৩ জনের তালিকা পাঠানো হয়। অথচ ওই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী এখন পর্যন্ত তাদের কাছে মাত্র ১৪৫ জনের তালিকা রয়েছে। তবে তাদের সবাই হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছে।
সূত্র জানায়, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাসে পুলিশ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত সভা থেকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) দেশে ছড়িয়ে পড়া প্রবাসীদের অবস্থান শনাক্তের জন্যও মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দিয়েছেন। পুলিশ সদস্যরা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা প্রবাসীদের তালিকা ধরে তাদের অবস্থান শনাক্তে কাজ শুরু করেছে। কিন্তু অধিকাংশ প্রবাসীকে পাসপোর্টে উল্লেখ করা ঠিকানায় পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তাদের খুঁজে পেতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাঠ পর্যায়ের সদস্যরা হিমশিম খাচ্ছে। কারণ প্রবাসীদের কিছু ঠিকানা সঠিক থাকলেও সেখানে গিয়ে প্রবাসীদের পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকার সঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগের তালিকার কোনো মিল নেই। তবে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা কোথাও বিদেশফেরত ব্যক্তিরা ঘুরে বেড়ানোর খবর দিলে স্বাস্থ্য বিভাগ হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠাচ্ছে। আর স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে তারা জরিমানা করছে। কিন্তু এখনো বিপুলসংখ্যক বিদেশ থেকে আগত প্রবাসী আত্মগোপনে রয়েছে বা শহর ছেড়ে গ্রামাঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
সূত্র আরো জানায়, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিদেশ থেকে আসা কেউই আপাতত ঘর থেকে বের হতে পারবেন না। তাদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। ইমিধ্যে যারা ঘর ছেড়ে বাইরে গিয়েছে, তাদের জরিমানা করে আবার নিজের ঘরে পাঠানো হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউ আইন অমান্য করলে জেল-জরিমানাসহ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা জানান, সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক আইজিপির নির্দেশনায় প্রবাসীদের অবস্থান শনাক্তে এবং তাদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে কাজ করছে পুলিশ। ওই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তারা কাজও শুরু করেছেন।