করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ক্রমাগত ক্রয়াদেশ হারাচ্ছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। পাশাপাশি নতুন অর্ডারও আসছে না। তাছাড়া পোশাক তৈরির অধিকাংশ কাঁচামাল চীন থেকে আনা হয়। কিন্তু চীনে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে এদেশের গার্মেন্ট কারখানাগুলোতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের পোশাক কারখানাগুলোতে কাপড়ের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অনেক কারখানাই রফতানিতে বড় ধাক্কা খাবে। পাশাপাশি বিশ্ববাজারের পরিস্থিতিও ভালো নয়। পাকিস্তান, তুরস্ক ও প্রতিবেশী ভারত পোশাক পণ্যের দাম কমিয়ে দেয়ায় বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যা পোশাক শিল্পের জন্য উদ্বেগজনক। এমন পরিস্থিতিতে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে বেকার হয়ে পড়বে বিপুল পরিমাণ শ্রমিক। ফলে দেশের গার্মেন্ট খাতের বেকার শ্রমিকরা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি এবং অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। গার্মেন্টস খাত এবং গোয়েন্দা সংস্থা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ব্যাংক ঋণ ও আর্থিক সঙ্কটের কারণে গত বছর প্রায় অর্ধশতাধিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষিতে অপেক্ষাকৃত বৃহৎ কারখানাগুলো টিকে থাকতে না পারায় অর্ডারের অভাবে একের পর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এক ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানা। এ অবস্থায় গার্মেন্ট শিল্পের যন্ত্রপাতি, ফ্যাব্রিক্স, সুতা, বোতাম, রং, কেমিক্যাল আমদানি বন্ধ থাকায় গার্মেন্ট শিল্প অচিরেই বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ বিপুলসংখ্যক শ্রমিক কর্মহীন বা বেকার হয়ে পড়লে তারা গার্মেন্ট খাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া তাদের নানারকম অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে ব্যর্থ গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে ওসব কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে কারখানা ভাংচুর, রাস্তা অবরোধ, অন্য কারখানায় হামলা চালিয়ে ক্ষতিসাধন ও উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টিসহ আইনশৃঙ্খলা বিঘœকারী কর্মকা-ে লিপ্ত হতে পারে।
সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিদেশি ক্রেতারা প্রতিদিনই অর্ডার বাতিল করছে। মূলত গ্যাপ, নাইকি, প্রাইমার্ক, ইন্ডিটেক্সের মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডগুলো ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন দেশে তাদের বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়ায় অর্ডার বাতিল করছে ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো। ইউরোপ বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। ইউরোপে করোনা ভাইরাস হানা দেয়ায় সেখানকার ক্রেতারা নতুন অর্ডার দিচ্ছে না। এমনকি যেসব অর্ডার আগে দেয়া ছিল, সেগুলোও বাতিল অথবা কাঁটছাট করে কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। অর্ডার না থাকলে গার্মেন্টস খোলা রাখা অনেক মালিকের পক্ষ সম্ভব নয়। কারণ কাজ থাকুক আর নাই থাকুক, কারখানা খোলা রাখলে মালিকদের গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল ও শ্রমিকদের মজুরি দিতে হবে। আর শ্রমিকদের বসিয়ে বেতন দেয়ার মতো সক্ষমতা অনেক মালিকের নেই। আবার একক সিদ্ধান্তে কোনো মালিক কারখানা বন্ধ করে দিলে শ্রমিকদের রাস্তায় নামার ভয় রয়েছে। সব মিলিয়ে মালিকরা উভয় সংকটের মধ্যে পড়েছে।
সূত্র আরো জানায়, সাধারণ শ্রমিকরা অতীতে কখনই ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ে লিপ্ত হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। কারণ কোনো সাধারণ শ্রমিক যে কারখানায় কাজ করে সে কারখানা কখনই ভাংচুর করতে পারে না। কারণ ওই কারখানা তার রুটি-রুজির সংস্থান করে। তবে তথাকথিত কিছু শ্রমিক ইউনিয়ন আছে, যারা সংকটময় পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সাধারণ শ্রমিকদের উস্কানি দেয়। দেশের শিল্প ধ্বংস করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায়। তারা মূলত বিদেশের এজেন্ট হয়ে কাজ করে। অতীতে একাধিকবার তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই ধরনের শ্রমিক সংগঠন নামধারীদের ব্যাপারে সরকার ও মালিকদের সতর্ক থাকতে হবে।
এদিকে বিদ্যমান অবস্থায় সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় একাধিক সুপারিশ জানানো হয়েছে। ওসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- শ্রমিক অসন্তোষ রোধে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহ। তাছাড়া বৃহৎ কারখানাগুলোর সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি গার্মেন্ট কারখানাগুলো অর্ডার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দরকষাকষি করে যাতে টিকে থাকতে পারে সে ব্যাপারে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বাণিজ্য ও শ্রম মন্ত্রণালয় সমন্বিত পদক্ষেপ গস্খহণ।
অন্যদিকে এ বিষয়ে এফবিসিসিআই’র সহসভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানান, পরিস্থিতির ওপর সবকিছু নির্ভর করছে। মালিকরা শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে যতক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব কারখানা চালিয়ে যাবে। তবে সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গার্মেন্ট শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। এ পরিস্থিতিতে সবাইকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। শ্রমিকদেরও পরিস্থিতি অনুধাবন করতে হবে। কারণ কোনো মালিকই চায় না তার কারখানা বন্ধ থাকুক।