করোনা ভাইরাসের আক্রমণে সারা বিশ্বই এখন দিশেহারা। এদেশেও এর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার দেশজুড়ে ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি সারা দেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে মোট ৪ হাজার ৫১৫টি আইসোলেশন বেড।
তার মধ্যে শুধু ঢাকাতেই প্রস্তুত করা হয়েছে ১ হাজার ৫০টি। ঢাকার মোট ৫টি হাসপাতালে এ ইউনিট গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু ওই ৫টি হাসপাতালে মোট ২৯টি ভেন্টিলেশন সুবিধা রয়েছে। তাছাড়া করোনা রোগীর চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত ঢাকার বাইরে কোনো আইসোলেশন ইউনিটে কোনো ধরনের ভেন্টিলেশন সুবিধা দেয়া হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নভেল করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত সংকটাপন্ন রোগীর চিকিৎসায় কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্র বা ভেন্টিলেটর ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু করোনার চিকিৎসায় শুধুমাত্র রাজধানীতে এ সুবিধা রয়েছে। দেশের বাকি জেলাগুলোতে ভেন্টিলেশন সুবিধা নেই। ইতিমধ্যে বিশ্বের বিপুলসংখ্যক দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও করোনা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
যেভাবে করোনা রোগী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শনাক্ত হচ্ছে, তাতে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভেন্টিলেটরের সংখ্যা খুবই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যদি অতি দ্রুত করোনা রোগীদের পরিস্থিতি খারাপ হয়ে ওঠে, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তবে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় আরো ১০০টি ভেন্টিলেটর প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে ওই ভেন্টিলেটরগুলো ঢাকার বাইরে ব্যবহার করা হবে কিনা তা এখন নিশ্চিত নয়।
সূত্র জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মান অনুযায়ী একটি দেশের হাসপাতালে রোগীর জন্য যতগুলো শয্যা রয়েছে, তার ১০ শতাংশ আইসিইউ থাকার কথা। তবে তা সম্ভব না হলে ন্যূনতম ৪ শতাংশ থাকতে হবে। ওই হিসেবে বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোয় সব মিলিয়ে রোগীর শয্যা রয়েছে ৩১ হাজার ২২০টি। হিসাব অনুযায়ী ওসব হাসপাতালে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর থাকার কথা সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি।
ন্যূনতম ধরলেও ওই সংখ্যা হওয়ার কথা ছিল ১২শর মতো। তবে ওসব হাসপাতালে বর্তমানে আইসিইউ রয়েছে মাত্র ২২১টি, যার সবগুলোতে ভেন্টিলেশন সুবিধা নেই। অথচ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ (১০ শতাংশ) মানুষের করোনা সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদি এর ১ শতাংশও আক্রান্ত হয়, তবে হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার কোনো সক্ষমতা থাকবে না।
সূত্র আরো জানায়, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ থেকে ২০ শতাংশ রোগীকে আইসিইউতে রাখার প্রয়োজন হতে পারে। ওসব রোগীর শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি দিতে ভেন্টিলেটর প্রয়োজন। সেই তুলনায় এদেশের হাসপাতালগুলোতে ভেন্টিলেটর সক্ষমতা খুবই কম। এখন করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর বেডের সংখ্যা জরুরিভাবে বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। বরং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভেন্টিলেটর বেড প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন। তা না হলে সামনের দিনগুলোতে করোনা মহাবিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি করতে পারে।
এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে দেশে বর্তমানে কতজন করোনা রোগী রয়েছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। মাত্র ৭০০ মানুষের পরীক্ষা করে ৩৯ জন শনাক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যে অধিকসংখ্যক লোকের মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা গেছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) মো. আমিনুল হাসান জানান, করোনা ভাইরাসে আক্রাÍ ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সরকারের পক্ষ থেকে ৫০০টি আইসিইউ বেড তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। তার মধ্যে ১০০টি ভেন্টিলেটর স্থাপনের কাজ চলছে। করোনা পরিস্থিতি সার্বিক বিবেচনা করে সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।