প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাবে শিক্ষিত যুবকরা উদ্যোক্তা হতে পারছে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন উদ্যোক্তা ও নারীদের ঋণ দিতে আগ্রহী হচ্ছে না। উপরন্তু ঋণ পেতে ঘুষ ও কমিশন দিতে হয়। ফলে প্রতিবছর যে পরিমাণ নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হওয়ার কথা তা হচ্ছে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই চাকরির বাজারে ক্রমাগত চাপ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী গত বছর ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে (এসএমই) নতুন উদ্যোক্তা ও ঋণ বিতরণ দুই-ই কমেছে। ওই সময়ে প্রায় ৭ হাজার নতুন উদ্যোক্তা কমেছে। আর ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ। শুধু তাই নয়, একই সময়ে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যাও কমে গেছে। তবে সার্বিকভাবে এসএমই ঋণ বিতরণ প্রায় ৫ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সঙ্কটের কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধিতে মন্থরগতি বিরাজ করছে। এসএমই খাতেও তার প্রভাব পড়েছে। বিগত ২০১৯ সালের পুরো সময়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ করেছে এক লাখ ৬৭ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। নতুন-পুরনো মিলে ৭ লাখ ৭৪ হাজার ১২২ জন উদ্যোক্তা ওই ঋণ পেয়েছে। আর ২০১৮ সালে ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৫২২ জন উদ্যোক্তা এক লাখ ৫৯ হাজার ৫১০ কোটি টাকার ঋণ পেয়েছিল। গত এক বছরের ব্যবধানে এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৮ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। আর উদ্যোক্তার সংখ্যা বেড়েছে ৮৬ হাজার ৬০০ জন। তবে ওই সময়ে নতুন উদ্যোক্তার সংখ্যা ও ঋণ দুটিই কমেছে।
সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলো গত বছর ২ লাখ ৬ হাজার ৯৭৪ জন নতুন উদ্যোক্তাকে এসএমই ঋণ দিয়েছে। তাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ২৬ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। আর ২০১৮ সালের পুরো সময়ে এক লাখ ৩৫ হাজার ৯৪১ উদ্যোক্তার মাঝে ২৬ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। অর্থাৎ গত বছর নতুন উদ্যোক্তা কমেছে ৪ হাজার ৯৩৮ জন এবং ঋণ বিতরণ কমেছে ৩ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা।
এ সময়ে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যাও কমেছে। ব্যাংকগুলো ২০১৮ সালে ৫৭ হাজার ৫৭১ জন নারী উদ্যোক্তাকে অর্থায়ন করলেও গত বছর করেছে ৫৬ হাজার ৭০৬ জনকে। তবে নারী উদ্যোক্তা কমলেও ওই খাতে ঋণ বিতরণ সামান্য বেড়েছে। গত বছর ওই খাতে ৬ হাজার ১০৯ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। আর আগের বছর বিতরণ হয়েছিল ৫ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। তবে এ সময়ে জামানতবিহীন ঋণ ও গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণ বিতরণ বেড়েছে।
গত বছর ২ লাখ ৬ হাজার ৯৭৪ উদ্যোক্তাকে জামানত ছাড়া ২৬ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকার ঋণ দেয়া হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে এক লাখ ৭৩ হাজার ৮১৫ উদ্যোক্তা পেয়েছিলেন ২৪ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকার ঋণ। ওই হিসাবে গত বছর জামানত ছাড়া ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। গত বছর নারী উদ্যোক্তা খাতে ৬ হাজার ১০৯ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ৫৬ হাজার ৭০৬ জন নারী উদ্যোক্তা ওই ঋণ পেয়েছেন। আগের বছর ৫৭ হাজার ৫৭১ জন উদ্যোক্তা ৫ হাজার ৫১৭ কোটি টাকার ঋণ পেয়েছিলেন।
এদিকে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি জাতীয় এসএমই পণ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তরুণ গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, পাস করে চাকরির পিছে না ছুটে, ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এজন্য ঋণের সুদের হার কমিয়ে সিঙ্গেল ডিজিট করা হয়েছে; যাতে করে আমাদের উদ্যোক্তারা ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।