করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশব্যাপী চলছে সাধারণ ছুটি। একই সঙ্গে সরকার পক্ষ থেকে দেশবাসীকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছে না। বহু জায়গায় নেমে এসেছে লকডাউন। ফলে নিত্যপণ্যের দোকান খোলা থাকলেও অনেকেই বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। এমন অবস্থায় নিত্যপণ্য কেনার ক্ষেত্রে অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মানুষের নির্ভরতা বাড়ছে। ইতিমধ্যে অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলোর নিত্যপণ্য বিক্রি কয়েকগুণ বেড়েছে। আর হঠাৎ করেই বিক্রির চাপ বেড়ে যাওয়ায় ওসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চাহিদামতো সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অবশ্য অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, পণ্যের মজুতে কোনো কমতি নেই। তবে সরবরাহ ব্যবস্থায় বাড়তি চাপের কারণেই অনেক ক্ষেত্রে সেবা দিতে দেরি হচ্ছে। অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মধ্যে চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনির মতো পণ্যগুলো অনলাইনে কেনার চাহিদা ২০ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। একই সাথে বেড়েছে জীবাণুমুক্ত করার বিভিন্ন দ্রব্য যেমন- হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, ঘর জীবাণুমুক্ত করার জীবাণুনাশকের মতো পণ্যগুলোর চাহিদাও। তাছাড়া হ্যান্ড গ্লাভস, থার্মাল স্কানার, মাস্কসহ করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে ব্যক্তিগত সুরক্ষার পণ্যগুলোও অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বেশ বিক্রি হচ্ছে। অর্ডার সামাল দিতে অনলাইন মাধ্যমে পণ্য বিক্রেতারা সাধারণ ছুটির দিনগুলোতে অন্যান্য পণ্য, যেগুলোর এখনই প্রয়োজন নেই ওসব পণ্যগুলোর ডেলিভারি দেওয়া আপাতত বন্ধ রেখেছে। এখন শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর বিক্রির অর্ডার নেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ভবিষ্যতের খারাপ অবস্থার কথা চিন্তা করে এক শ্রেণীর ক্রেতা অনলাইন থেকে বেশি বেশি পণ্য কিনে তা মজুত করার চেষ্টা করছে। তাদের এ মজুত ঠেকাতে এবং বেশিসংখ্যক গ্রাহককে পণ্য দিতে ব্যবস্থা নিয়েছে অনলাইন বিক্রেতারা। একই ধরনের পণ্য যাতে বেশিসংখ্যক অর্ডার দিতে না পারে সেজন্যও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যেমন একজন ব্যক্তি একই একাউন্ট থেকে কোনো পণ্য পাঁচটির বেশি অর্ডার করতে পারবে না।
সূত্র আরো জানায়, হঠাৎ করে অনলাইনে নিত্যপণ্যের ওপর চাপ বেশি হওয়ায় অনেক কোম্পানিই ডেলিভারি দিতে হিমশিম খাচ্ছে। কারণ এসময়ে ডেলিভারিম্যানও অনেক কমে গেছে। করোনা আতঙ্কে অনেকেই রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। আবার অনেক ডেলিভারিম্যান যারা ঢাকায় আছে, তারাও কাজে বের হচ্ছে না। অবশ্য ডেলিভারি কর্মীরা যাতে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকে সেজন্য কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তাদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার, গ্লাভস, মাস্ক, পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) দেয়া হচ্ছে। আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যাতে ডেলিভারি কর্মীদের সম্পর্কে জানতে পারে সেজন্য তৈরি করা হয়েছে বিশেষ অ্যাপস।
এদিকে এ প্রসঙ্গে দারায বাংলাদেশের চিফ অপারেটিং অফিসার খন্দকার তাসফিন আলম জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলোর চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ২০ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। অর্ডার অনুযায়ী ডেলিভারি দিতে কর্মীদের অতিরিক্ত সময় দিতে হচ্ছে। দারাজ ডটকমের প্রায় ১৫০০-এর মতো ডেলিভারিম্যান আছে। তাদের মধ্যে ৬০ ভাগের মতোই প্রতিদিন কাজে যোগ দিচ্ছে। কয়েকদিন করোনা আতঙ্কে অনেকেই আগে আসছিল না। এখন তারাও কাজে আসতে শুরু করেছে। সব ধরনের নিরাপত্তা রেখেই কাজগুলো করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত যে অবস্থা আছে তাতে নির্বিঘেœই অর্ডারগুলো দেয়া যাচ্ছে। এখন শুধু ঢাকার মধ্যে দারাজ ডেলিভারি দিচ্ছে। শিগগিরই ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতেও দারাজ ডেলিভারি দিতে শুরু করবে।
অন্যদিকে ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পণ্য বিক্রি করে সিন্দাবাদ ডট কম। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিসান কিংশুক হক জানান, সিন্দাবাদ ডট কম সাধারণত ব্যাংক, বিমাসহ করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে পণ্য সরবরাহ করে থাকে। সাধারণ ছুটির কারণে ওসব প্রতিষ্ঠানে বিক্রি শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। তবে প্রয়োজনের তাগিদে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও খুচরা পর্যায়েও সিন্দাবাদ বিক্রি করছে। সিন্দাবাদের মতো বড়ো কোম্পানির মজুত নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। তবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও আমদানিকারকরা কতদিন সরবরাহ করতে পারবে সে বিষয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে। ডেলিভারি কর্মীদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কথা চিন্তা করে সব ধরনের দূরত্ব বজায় ও ব্যক্তিগত সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।