চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে জরুরিভাবে পণ্য সরবরাহের সমন্বিত ও জোরালো পদক্ষেপ না নিলে যে কোনো মুহুর্তে বন্দরের কার্যক্রম অচল হয়ে যেতে পারে। তাতে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যেনেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেইনার রাখার ধারণক্ষমতা প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় গত কয়েকদিন ধরেই জেটিতে থাকা জাহাজ থেকে রেশনিং করে পণ্যভর্তি কন্টেইনার নামানো হচ্ছিল। অর্থাৎ যতটুকু খালি স্থান পাওয়া যায় ততোটুকু কন্টেইনার নামানো হচ্ছিল। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে বন্দর কর্তৃপক্ষএখন জেটিতে নতুন করে জাহাজ ভিড়তে দিচ্ছে না। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার রাখার ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার একক। তার বিপরীতে গত শুক্রবার সকাল পর্যন্ত কন্টেননার ছিল প্রায় ৪৫ হাজার একক। আর বন্দর থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেলিভারি হয়েছে মাত্র ২০১৮ একক। ২ এপ্রিল ডেলিভারি ছিল ১ হাজার ৮৭৩ একক। কন্টেইনার ডেলিভারি দিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সক্রিয় থাকলেও ডেলিভারি বাড়ছে না। আর সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নে এখন পর্যন্ত কোনো সমন্বয় বৈঠক বা ব্যবহারকারীদের নিয়ে বৈঠক বা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে সরকারি ছুটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নতির তেমন আশা নেই।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং সাধারণ দুই ধরনের কন্টেইনার রাখার ধারণক্ষমতাই পূর্ণ হয়ে গেছে। কিন্তু তার বিপরীতে বন্দর থেকে কন্টেইনার ডেলিভারি হচ্ছে খুবই কম। ফলে যে স্থানটুকু খালি হচ্ছে ওই স্থানেই জাহাজ থেকে কন্টেইনার নামিয়ে রাখা হচ্ছে। এমন অবস্থায় জেটিতে থাকা জাহাজগুলো বাড়তি সময় বন্দরে থাকতে হচ্ছে। তাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। মূলত জেটিতে থাকা জাহাজগুলো দ্রুত সময়ে বন্দর ছেড়ে যাওয়ার ওপরই নতুন জাহাজ জেটিতে আসা নির্ভর করে। বর্তমানে জেটিতে থাকা জাহাজের অবস্থাও করুণ। কারণ যে জাহাজ ৪ এপ্রিল বন্দর ছেড়ে যাওয়ার শিডিউল ছিল শুক্রবার পর্যন্ত ওই জাহাজের ২০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কন্টেইনার জাহাজ থেকে নামানো যায়নি।
সূত্র আরো জানায়, বিদেশি জাহাজ বিএলপিএল গ্রেস রমজানের ভোগ্যপণ্য, খাদ্যপণ্য, ফল ও তৈরি পোশাক শিল্পের ১ হাজার ২৮ একক কন্টেইনার পণ্য নিয়ে গত ৩১ মার্চ বহির্নোঙরে পৌঁছে। ১ এপ্রিল জাহাজটিকে জেটিতে ভেড়ার অনুমতি দেয়া হয়। ইয়ার্ডে কন্টেইনার ধারণক্ষমতা কমে আসায় জাহাজটি ১ এপ্রিলে ভিড়তে না দিয়ে ২ এপ্রিল ভিড়ার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু এখনো জাহাজটি জেটিতে ভিড়তে পারেনি। জাহাজটি ৭২ ঘণ্টা বহির্নোঙরে বসে থাকার পরও জেটিতে ভেড়ার অনুমতি পায়নি। কারণ জেটিতে থাকা আরেকটি জাহাজ ‘ওইএল ডেল্টা’ ৯৬ ঘণ্টা জেটিতে থাকার পরও শুক্রবার পর্যন্ত সব আমদানি কন্টেইনার নামাতে পারেনি। ইয়ার্ডে স্থান না থাকায় জাহাজ থেকে পণ্য নামেনি। এমন অবস্থায় কখন রপ্তানি কন্টেইনার জাহাজীকরণ করা হবে এবং কখন জাহাজটি জেটি ছাড়বে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া একই সময়ে আসা ‘টিজিনি’ নামের একটি জাহাজ ৭২ ঘণ্টা পার হওয়ার পরও জেটিতে ভিড়তে পারেনি। অথচ ১ এপ্রিল আরো চারটি জাহাজ বহির্নোঙরে পৌঁছেছে; পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সেসব জাহাজও জেটিতে ভেড়া পিছিয়ে যাবে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানান, সরকারি ছুটির সময় কাস্টমসের কাজের পরিধি, ব্যাংকিং কর্মঘণ্টা বাড়ানো, কোয়ারেন্টিন অফিস খোলা রাখাসহ কিছু পদক্ষেপের কারণে কন্টেইনার ডেলিভারি বেড়েছে; তবে সেটা কাক্সিক্ষত নয়। তারপরও বিজিএমইএ, চেম্বার, কন্টেইনার ডিপোসহ বিভিন্ন সংগঠনকে চিঠি লিখে তাগাদা দেয়া হচ্ছে। যাতে দ্রুত কন্টেইনার ডেলিভারি নেয়। তাছাড়া কন্টেইনার রাখার জন্য নতুন নির্মিত ওভারফ্লো ইয়ার্ডকেও ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। আশা করা যায় আগামী সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতি উন্নতি হবে।