দেশের বড় বড় নৌঘাটগুলোতে পণ্য খালাস কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে। মূলত করোনা সংক্রমণ এড়াতে প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনের কড়াকড়ির কারণে ঘাটে শ্রমিক আসছে না। ফলে দিনের বেলা কোনো ঘাটেই ব্যবসায়ীরা পণ্য খালাস করতে পারছে না। তবে কিছু কিছু ঘাটে দ্বিগুণ টাকা দিয়ে কোনো কোনো ব্যবসায়ী রাতের বেলায় সীমিত আকারে পণ্য খালাস করছে। এমন পরিস্থিতিতে রমজানের পণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল খালাসে ব্যবসায়ীরা শিথিলতা চায়। আর প্রশাসন চাচ্ছে শ্রমিকদের নিরাপত্তা। যাতে পণ্য খালাস করতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ না বাড়ে সেজন্যই শ্রমিকদের সুরক্ষা চাওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ী এবং নৌঘাট সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রমজানের জন্য আনা ছোলা, চিনি, ডালসহ প্রায় ১০ লাখ টন পণ্য নিয়ে সাগরে ভাসছে ৯ শতাধিক জাহাজ। ওসব জাহাজে সিমেন্ট ক্লিংকারসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামালও রয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন। তাই দেশের বড় ৫৬টি ঘাটেই ব্যাহত হচ্ছে পণ্য খালাস কার্যক্রম।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া কনটেইনারবিহীন পণ্যের প্রায় ৭৪ শতাংশই বহির্নোঙরে খালাস করা হয়। তার পরিমাণ গত অর্থবছরে ছিল প্রায় ২ কোটি ৬৭ লাখ টন। বহির্নোঙরে বিদেশি জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করা হয় অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের লাইটারেজ জাহাজে। সেখান থেকে নৌপথে ওই পণ্য দেশের ৫৬টি ঘাটে নেয়া হয়। আর চট্টগ্রামে ওসব পণ্য খালাসে ১৬টি ঘাট রয়েছে। তাছাড়া লাইটারেজ জাহাজ দিয়ে নারায়ণগঞ্জ, বাঘাবাড়ী, নগরবাড়ী, নিতাইগঞ্জ, এমআই সিমেন্ট, বসুন্ধরা, মিরপুর, আকিজ সিমেন্ট, স্ক্যান সিমেন্ট, আনোয়ার সিমেন্ট, শাহ সিমেন্ট, মেট্রো সিমেন্ট, সেভেন সার্কেল, সিয়াম সিটি, হোলসিম, মীর সিমেন্ট, ভৈরত, আশুগঞ্জ, কাটপট্টি, খুলনার মোংলা, নোয়াপাড়া, আবদুল মোনায়েম ঘাট, বরিশাল, ভোলা, দাউদকান্দি, ফরিদপুর, সিঅ্যান্ডবি ঘাট, কাঞ্চন ঘাট, রূপগঞ্জ, ধাপাঘাট, সিটি গ্রুপ, ছাতক, মোক্তাপুর, ঝালকাঠি, পায়রা, ফুলতলা, দেশবন্ধুঘাটসহ দেশের ৫৬টি পয়েন্টে পণ্য পরিবহন করা হয়। কিন্তু সব ঘাটই এখন প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, দেশের শিল্প মালিকদের অধীনে কিছু লাইটারেজ জাহাজ আছে। তবে বেশিরভাগ জাহাজই ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের অধীনে চলছে। মোট এক হাজার ২০০ লাইটারেজ জাহাজের মধ্যে প্রায় ৯৫০টি জাহাজ এখন পণ্য নিয়ে বিভিন্ন ঘাটে ভাসছে। সব জাহাজে প্রায় ১০ লাখ টন পণ্য রয়েছে। দিনের বেলা কোনো ঘাটে পণ্য খালাস করা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে কেউ কেউ রাতের বেলা দ্বিগুণ মজুরিতে কিছু শ্রমিক নিয়ে সীমিত পরিসরে কিছু পণ্য খালাস করা হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে রমজান ও শিল্প খাতের পণ্য খালাসে অচলাবস্থা তৈরি হবে। বর্তমানে শিল্পের কয়েক লাখ টন কাঁচামাল সাগরে ভাসছে। সেগুলো এখন খালাস না করা হলে রমজানের পণ্য পরিবহন করতে গিয়ে লাইটারেজ জাহাজের সঙ্কট তৈরি হবে। আর বিদেশি মাদার ভেসেলকেও ব্যবসায়ীদের প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ গুনতে হবে।
এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বহির্নোঙরে পণ্য খালাস কার্যক্রম তদারকি করা বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং ও বার্থ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান একেএম শামসুজ্জামান রাসেল জানান, বিভিন্ন ঘাটে প্রশাসনের কড়াকড়ি আরোপের কারণে পণ্য খালাস কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তবে চট্টগ্রামের ১৬টি ঘাটে পণ্য খালাসে এখন কিছুটা শিথিলতা থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। বন্দরের বহির্নোঙরে বিদেশি ২৬টি বড় জাহাজ থেকে এখন পণ্য খালাস করা হচ্ছে।
অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন জানান, করোনার সংক্রমণ কোথায় হবে আর কোথায় হবে না তা নিশ্চিত করে কেউই বলতে পারে না। সেজন্য ঘাটে শ্রমিক উপস্থিতিতে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। কিন্তু রমজানের কথা বিবেচনা করে এখন নিয়ম কিছুটা শিথিল করা হচ্ছে। শ্রমিকদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে ঘাটে কাজ করা যাবে। তবে প্রশাসনের লোকজন তা মনিটর করবে। কারণ আগে জীবনের নিরাপত্তা, পরে অন্য কিছু।