বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে ভয়াবহ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। সমগ্র বিশ্ব এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে চলছে। নতুন আক্রান্ত আর মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। লকডাউন, আইসোলেশন, সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে সম্পূর্ণভাবে থমকে পড়েছে স্বাভাবিক জীবন। প্রতিটি দেশ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে পরিত্রাণ পেতে অন্য দেশ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। ভয়ংকর এক কঠিন পরিস্থিতিতে উপনীত হয়েছি আমরাসহ বিশ্ববাসী। এমন অবস্থা দেশের মানুষ কখনও দেখেনি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রথম ধাপে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় পরে তিন দফায় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সেই ছুটি বাড়ানো হয়, যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সময়ে মানুষকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। এতে লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্মহীন ও দুস্থদের জন্য তাৎক্ষণিক মানবিক সহায়তা হিসেবে বিতরণের জন্য আরেক দফায় ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা ও ৯ হাজার ৬০০ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা ত্রাণ হিসেবে বিতরণ ও এক কোটি ৬০ লাখ টাকা শিশুখাদ্য কিনতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দেশের ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে এই বরাদ্দ দিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর এর আগে কয়েক দফায় ৬৪ জেলার দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৪১ কোটি ৫ লাখ ৭২ হাজার ২৬৪ টাকা (শিশুখাদ্য কেনাসহ) ও ৮৫ হাজার ৬৭ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়।
জেলা প্রশাসকরা দুর্যোগ পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়র নির্দেশিকা অনুসরণ করে এ বরাদ্দ বিতরণ করবেন এবং প্রয়োজনীয় হিসাব সংরক্ষণ করবেন বলে বরাদ্দপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন এবং পৌর এলাকায় বেশি সংখ্যক কর্মজীবী মানুষ বসবাস করেন বিধায় জেলা প্রশাসকদের বরাদ্দের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকাকে বেশি গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। শিশুখাদ্য ক্রয়ের শর্তাবলীতে বলা হয়, শিশুখাদ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয়বিধিসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিধি-বিধান ও আর্থিক নিয়মাচার যথাযথভাবে প্রতিফলন করতে হবে। জিটুজি পদ্ধতিতে কিনে মিল্কভিটার উৎপাদিত গুঁড়াদুধ চলমান কাজে ত্রাণসামগ্রী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এছাড়া শিশুখাদ্য হিসেবে খেজুর, বিস্কুট, ফর্টিফাইড তেল, ব্রাউন চিনি, সুজি, মসুরি ডাল, সাগু, ফর্টিফাইড চাল, ওয়াটার পিউরিফায়ার ট্যাবলেট, বাদাম, মানসম্মত রেডিমেড ফুড ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য স্থানীয়ভাবে কিনে বিতরণ করতে হবে। জেলা প্রশাসকরা আরোপিত শর্তাবলী যথাযথভাবে অনুসরণ করে ছাড় করা অর্থে শিশুখাদ্য কিনে বিতরণ করবেন এবং নিরীক্ষার জন্য হিসাব সংরক্ষণ করবেন।
কথা হচ্ছে, দরিদ্রদের জন্য সরকারি-বেসরকারি বরাদ্দ কম নয়। বেসরকারিভাবে যেগুলো বরাদ্দ হয় সেগুলো ব্যক্তি উদ্যোগে সরাসরি বা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অসহায়দের কাছে পৌঁছানো হচ্ছে। কিন্তু বিপত্তি সরকারি বরদ্দ নিয়ে। সরকারি ত্রাণ বিতরণ নিয়ে নয়-ছয় চলছে শুরু থেকেই। ত্রাণ আত্মসাৎ, দুঃস্থদের তালিকা তৈরিতে স্বজনপ্রীতি ও উৎকোচ গ্রহণ, পরিমাপে কম দেওয়াসহ নানা অভিযোগের খরব পাওয়া যাচ্ছে গণমাধ্যমে। বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধি আটক হচ্ছে, লুট হওয়া ত্রাণ উদ্ধার হচ্ছে এমনকি জনপ্রতিনিধির ঘরের মেঝে খুঁড়েও ত্রাণের চাল উদ্ধার করা হয়েছে। অনেকে আটক হচ্ছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অনেককে শাস্তিও দেওয়া হচ্ছে। এতকিছুর পরও অনিয়ম থেমে নেই। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ বিতরণের জন্য সারাদেশে স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি করতে বলেছেন, যার প্রক্রিয়া চলছে। তবে এখানে যাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে তারা কতটুকু স্বচ্ছ সে প্রশ্ন থেকেই যায়। দেশের মানুষ প্রচ- কষ্টে দিনযাপন করছে। এই অবস্থায় পর্যাপ্ত সহায়তা না পেলে তারা ঘরে বসে থাকতে পারছে না, এতে করোনা ঠেকাতে যে লকডাউন দেয়া হয়েছে সেটিও ফলপ্রসূ হচ্ছে না। তাই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমকে স্বচ্ছ ও নিয়মমাফিক করার বিকল্প নেই।