বিশ্ব শ্রমবাজারগুলো থেকে ছুটি দেশে আসা বিপুলসংখ্যক প্রবাসী এখন চাকরি হারানোর শঙ্কায় ভুগছে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে তারা এখন আর কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারছে না। এমনকি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও তারা আগের কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারবে কিনা তা নিয়েও সন্দিহান। পুলিশের বিশেষ শাখার তথ্যানুযায়ী চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৩৭৭ জন প্রবাসী বাংলাদেশী বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছে। আর মার্চের প্রথম ২০ দিনেই দেশে এসেছে ২ লাখ ৯৩ হাজার প্রবাসী। তার মধ্যে শ্রমিক রয়েছে প্রায় ৫ লাখ। তাছাড়া করোনা ভাইরাস বিস্তারে প্রবাসীদের নিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক থাকায় দেশে ফিরেও তাদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে থাকতে হচ্ছে। এশাধিক ভুক্তভোগী প্রবাসী এবং রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, যদিও সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সরকার সেসব দেশে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ফিরিয়ে নেয়ার ও ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর নিশ্চয়তা দিয়েছে। তারপরও প্রবাসীরা স্বস্তিতে নেই। তাদের আশঙ্কা, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে একসঙ্গে অনেক শ্রমিক কর্মস্থলে ফিরে যেতে উড়োজাহাজের টিকিটের খোঁজ করবে। ফলে চাহিদা বেড়ে সে সময় টিকিটের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে বাংলাদেশের প্রধানতম শ্রমবাজারগুলোর মধ্যে সৗদি আরব, কুয়েত, কাতার, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশেই কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। ফলে ওসব দেশগুলোর পর্যটন ও এয়ারলাইনস ব্যবসায় ধস নেমেছে। যার নেতিপ্রভাব অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও পড়তে শুরু করেছে। ফলে প্রবাসীদের মধ্যে সামনের দিনগুলোয় কাজ হারানোর আশঙ্কা বাড়ছে। তাছাড়া প্রবাসে বিভিন্ন ছোট ও মাঝারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশীরা পুঁজি হারানোর ভয় করছে। আর ওসব প্রতিষ্ঠানে ছোটখাটো কাজ করা বাংলাদেশী শ্রমিক যারা দেশে এসেছে, তারা কবে যেতে পারবেন তার নিশ্চয়তা নেই। কারণ করোনার প্রভাবে ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে অনেক প্রতিষ্ঠানই কম জনবল নিয়ে কাজ চালাতে চাইবে। যা প্রবাসীদের চাকরির ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। এখন বিষয়টি সরকারকে বিবেচনা করে দেখতে হবে।
সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী সদ্য শেষ হওয়া মার্চ মাসে প্রবাসীরা ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। যা গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। আর আগের মাস ফেব্রুয়ারির চেয়ে ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত ডিসেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছে ১৬৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। জানুয়ারিতে এসেছে ১৬৩ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। আর ফেব্রুয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স আয়ের পরিমাণ ছিল ১৪৫ কোটি ২০ লাখ ডলার।
এদিকে দেশে আসা প্রবাসীরা বলছেন, দেশে ফেরা অনেক প্রবাসীর পক্ষেই এদেশে এখন নতুন করে কোনো চাকরিতে ঢোকার পরিস্থিতি নেই। যদিও কোনো কোনো দেশের কোম্পানি থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের বলা হচ্ছে- পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা আবারো ওদেশে যেতে পারবে। কিন্তু কবে সব ঠিক হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এমন পরিস্থিতিতে দেশে ফেরা প্রবাসীরা সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা না পেলে তাদের পক্ষে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) পরিচালক ড. সিআর আবরার জানান, প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে সবসময়ই বড় অবদান রেখে আসছে। এখন নভেল করোনাভাইরাসের কারণে কাজ না থাকায় অনেকেই দেশে টাকা পাঠাতে পারছে না। আবার যারা ছুটি নিয়ে দেশে এসেছে, তারাও অনিশ্চয়তায় পড়েছে। সরকারের এখনই উচিত তাদের জীবন ধারণের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানোর ব্যবস্থা করা।