করোনার প্রভাবে প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে প্রবাহে ভয়াবহ ধম নেমেছে। আর করোনা মহামারীর কবলে পড়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ সহসা চাঙ্গা হওয়ারও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। চলতি বছরের মার্চ থেকেই এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি এপ্রিলের প্রথম ১৩ দিনে দেশে মাত্র ৩৩ কোটি ২০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। অথচ আগের বছরের একই সময় দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৫১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। কয়েক দিনেই রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ১৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ৩৫ শতাংশ। প্রবাসীরা গত মার্চে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে, যা গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। যা আগের মাস ফেব্রুয়ারির চেয়ে ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম। আর মার্চ মাসের রেমিট্যান্স গত এক বছর তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ১২০ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। বাংলাদেশের জিডিপিতে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিশে^র বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাস মহামারী রূপ ধারণ করায় গত মার্চ মাসে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছে। বিশে^র বিভিন্ন দেশে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি রয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশে আসে ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৫৩০ জন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদেশেও প্রবাসীরা লকডাউনে রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন দেশে ব্যাংকগুলো সীমিত আকারে খোলা। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে প্রবাসীরা কাজ হারিয়ে ঘরবন্দি দিন কাটাচ্ছে। আবার অনেকে বেতন পেলেও এক্সচেঞ্জ হাউস ও ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট সেবা বন্ধ থাকার কারণে তারা দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছে না। ফলে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ক্রমশ কমছে। সামনের দিনগুলোয় পরিস্থিতি কী দাঁড়ায় এখন তা নিয়েই দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বিশ্ব অর্থনীতি আরো সঙ্কটের মধ্যে পড়বে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কায়দায় পড়বে মধ্যপ্রাচ্যের তেলনির্ভর অর্থনীতি। আর বাংলাদেশ রেমিট্যান্স প্রবাহের ওপর তার সরাসরি প্রভাব পড়বে। অথচ প্রবাসীদের রেমিট্যান্সই দেশে অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে আশার আলো জাগিয়ে রাখে। করোনার মহামারী তাতেও ছায়া ফেলেছে। গোটা বিশ্ব করোনা মহামারীর কবলে পড়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ যে সহসা জেগে উঠবে না সে বিষয়ে অর্থনীতিবিদদের কোনো সংশয় নেই।
সূত্র আরো জানায়, ২০১৯-২০ অর্থবছর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহে সুখবর নিয়ে শুরু হয়েছিল। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে আসে ১৫৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। আগস্টে ১৪৪ কোটি ৪৭ লাখ এবং সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৪৭ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। অক্টোবরে ১৬৪ কোটি, নভেম্বরে ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে আসে যথাক্রমে ১৬৯ কোটি ১৭ লাখ ও ১৬৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলার আর ফেব্রুয়ারিতে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১৪৫ কোটি ২২ লাখ ডলার। প্রবাসীরা গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল। যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল আরো বেশি; ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। এর আগে সরকার ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়ায় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেড়েছিল। তাতে বাজারে ডলারের সরবরাহও বেড়েছিল। তাছাড়া করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কারণে চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি কমে যাওয়ার কারণে ব্যাংকগুলোর ডলারের প্রয়োজনও কমে এসেছিল। এ পরিস্থিতিতে বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ডলার কেনা শুরু করে। এর আগে প্রায় ৩ বছর বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে কোনো ডলার কেনেনি। এখন বাজারে ডলার ঘাটতির কারণে ব্যাংকগুলো আমদানি পর্যায়ে ডলারপ্রতি দাম দেড় থেকে দুই টাকা বেড়ে গেছে। তাতে আমদানিনির্ভর শিল্পগুলোর আমদানি ব্যয়ও অনেক বেড়ে গেছে।