করোনা পরিস্থিতি চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের সরকারি-বেসরকারি আইসিডিগুলোতে বাড়ছে কনটেইনার জট। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মাঝেও আমদানি-রফতানি স্বাভাবিক রাখার জন্য বন্দর, আইসিডি, বিএসটিআই, উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র ও রেডিয়েশন দফতরসহ প্রয়োজনীয় অফিস ও সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো খোলা থাকলেও সেগুলো থেকে প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না আমদানিকারকরা। এর ফলে সময়মতো কনটেইনার ছাড় করানো যাচ্ছে না এবং বন্দরগুলোতে তৈরি হচ্ছে কনটেইনার জট। পণ্য খালাস না হওয়ার মাশুল কিন্তু দিতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। তাদের বাড়তি ভাড়া, জরিমানা ও বিভিন্ন চার্জ গুনতে হচ্ছে। এতে করে বর্তমান কঠিন পরিস্থিতিতে পণ্যের দামে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তাই এই অবস্থায় কন্টেইনার জট দ্রুত নিরসনের বিকল্প নেই।
এজন্য বন্দর, আইসিডি ও বন্দর সংশ্লিষ্ট সব দফতরের সমন্বয় এবং সীমিত পরিসরে নির্বিঘেœ ট্রাক ও লরি চলার বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগ নিতে হবে। আমদানি-রফতানিসহ সার্বিক অর্থনীতি রক্ষায় সরকার নানা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে; কিন্তু মাঠপর্যায়ে সেগুলোর সমন্বিত বাস্তবায়ন করা না গেলে খুব বেশি সুফল পাওয়া যাবে না। আমরা মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতির, বিশেষত আমদানি-রফতানির গতি যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার জন্য ট্রান্সপোর্ট, বন্দর, আমদানি-রফতানিকারক ও সরকারের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দফতরের বিশেষ মনোযোগ দেয়া দরকার। কারণ এরইমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর তার ক্ষমতার ব্যবহার করে ফেলেছে, সেখানে কনটেইনার রাখার আর কোনো জায়গা নেই। এ কারণে বন্দরের ভেতরে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের কাজও কমে গেছে। বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক করার জন্য, কনটেইনার জট দূর করে ব্যবসায়ীদের বাড়তি ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য দ্রুত উদ্যোগ নেয়া দরকার। চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি কমলাপুর আইসিডিতেও কনটেইনার রাখার কোনো জায়গা নেই। ফলে পানগাঁও আইসিডিতে পাঠানো হচ্ছে অনেক কনটেইনার; কিন্তু সেখানেও জটের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে পানগাঁও পাঠানোর বাড়তি জাহাজ ভাড়া তো ব্যবসায়ীদের ঘাড়েই চাপবে, যার প্রভাব পড়বে বাজারে। এ অবস্থায় আমদানি-রফতানি স্বাভাবিক করার জন্য এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে জরুরি সেবার আওতায় এনে কনটেইনার ব্যবস্থাপনা গতিশীল করার বিকল্প নেই।
যদিও এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জট নিরসনে সব ধরণের পণ্য চালান শর্ত সাপেক্ষে ১৯টি বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোতে (অফডক) সংরক্ষণ ও সেখান থেকে খালাসের অনুমতি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে আগামী ৩০ জুনের পর এ আদেশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল বলে গণ্য হবে। ২৩ এপ্রিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও চট্টগ্রামের কাস্টমস কমিশনার বরাবর পাঠানো চিঠিতে হয়, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরে সৃষ্ট কন্টেইনার জট নিরসনের লক্ষ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দরে আগত সব ধরণের পণ্যচালান সংশ্লিষ্ট কন্টেইনার শর্তসাপেক্ষে চট্টগ্রামে অবস্থিত ১৯টি অফডক (প্রাইভেট আইসিডি) এ সংরক্ষণ ও আনস্টাফিং করার এবং ওই অফডকসমূহ হতে খালাস প্রদানের অনুমতি প্রদান করা হলো। শর্তগুলো হলো- অফডকসমূহে স্থানান্তরের সময় শতভাগ কন্টেইনার আবশ্যিকভাবে স্ক্যানিং করতে হবে এবং স্ক্যানিং এর রিপোর্ট যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। অফডকে স্থানান্তরিত সব কমার্শিয়াল পণ্য চালান আবশ্যিকভাবে কাস্টমস হাউস, চট্টগ্রাম এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রতিনিধির সমন্বয়ে যৌথভাবে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। করোনা সংকটের আগে বন্দর দিয়ে আমদানি করা ৩৮ ধরনের পণ্য বেসরকারি ডিপোতে নিয়ে খালাসের সুযোগ ছিল। বন্দরে জট শুরুর এক সপ্তাহ আগে অতিরিক্ত আরও ছয় ধরনের পণ্য ডিপোতে সরিয়ে নেওয়ার অনুমোদন দেয় এনবিআর। কনটেইনার জট তীব্র হয়ে ওঠায় পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার সব পণ্য বেসরকারি ডিপোতে স্থানান্তরের অনুমোদন দেওয়া হলো। আমরা আশা করি এতে করে বন্দরে কন্টেইনার জটের সমস্যা সাময়িকভাবে কিছুটা লাঘব হবে। তবে স্থায়ীভাবে এই সমস্যা সমাধানের চিন্তা করতে হবে।