করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দেশ চিংড়ি রফতানি এবং কারখানাগুলে বন্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চিংড়ি শিল্পে জড়িত খামারিরা মারাত্মক বিপাকে পড়েছে। তারা খামারে উৎপাদিত চিংড়ি বিক্রি করতে পারছে না। আর স্থানীয় বাজারগুলোতেও অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে গলদা ও বাগদা চিংড়ির দাম। ১৪০০ টাকা দরের চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। আর ১২০০ টাকা দরের চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায়। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে মাছ বিক্রির কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা। এ অবস্থায় আগামী অর্থবছরে শুধু সাতক্ষীরা জেলাতেই মৎস্য খাতে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে। এমন অবস্থায় দেশের চিংড়িশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা খুব দ্রুত বাস্তবায়নের পাশাপাশি ব্যাংক ঋণ মওকুফের দাবি জানিয়েছে সংশিলষ্ট চিংড়িচাষি, ব্যবসায়ী ও হ্যাচারির মালিকরা। চিংড়ি খামারি এবং মৎস্য অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের উপকূলীয় জেলা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় ২ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হয়। ওই অঞ্চলেই বিদেশে রপ্তানিকৃত চিংড়ির সিংহভাগ উৎপাদিত হয়। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে ১০ লাখ মানুষ। গতবছর চিংড়ি খাত থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। কিন্তু এখন যুক্তরাজ্যসহ চিংড়ি রপ্তানির দেশগুলোতে সব ধরনের শিপমেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং দেশের হিমায়িত কারখানাগুলোর অধিকাংশ বন্ধ থাকাসহ খাদ্য সংকটের কারণে অনেকেই চিংড়ি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। ফলে রপ্তানিমুখী চিংড়ি খাতের উৎপাদন অনেকাংশে কমে গেছে।
সূত্র জানায়, চিংড়ি উৎপাদনে অন্যতম স্থান সাতক্ষীরা জেলায় ২ লাখ মৎস্যচাষি রয়েছে। তার মধ্যে দেড় লাখই প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষি। আর চিংড়ি শিল্পের সঙ্গে ওই জেলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২ লাখ ২৫ হাজার মানুষ নানাভাবে জড়িত। কিন্তু বর্তমানে করোনার কারণে মাছের ন্যায়সম্মত বাজারমূল্য না পাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে মৎস্যশিল্প। এ অবস্থায় সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে আধানিবিড় প্রকল্পের চিংড়িচাষিরা। প্রথম পর্যায়ে আধানিবিড় চিংড়ি প্রকল্পে ১০টি পুকুর প্রস্তুত করতে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা খরচ হয়। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাটে বহু আধানিবিড় চিংড়ি প্রকল্প রয়েছে। এ অবস্থায় তারা সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে। চিংড়ির দাম অর্ধেকে নেমে আসা, খাদ্য সংকট, বিদ্যুৎ বিল এবং ঘের কর্মচারীদের বেতন নিয়ে চিংড়ি উৎপাদন করতে হিমশিম খাচ্ছেন খামারিরা। এমন অবস্থায় ব্যাংক সুদ মওকুফের পাশাপাশি সরকারকে নতুন করে স্বল্প সুদে চিংড়ি খামারিদের ব্যাংক ঋণ দেয়ার দাবি জানিয়েছে চিংড়ি শিল্পসংশ্লিষ্ট।
এদিকে সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান জানান, সাতক্ষীরায় ৮৮ হাজার ৭৯ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হয়। তার মধ্যে ৬৬ হাজার ৮০৬ হেক্টর জমিতে বাগদা ও ৯ হাজার ১৭ হেক্টর জমিতে গলদা চাষ হয়ে থাকে। তার বাইরে ধান চাষের সঙ্গে ১২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সাদা মাছ ও চিংড়ি চাষ হয়। গত বছর সাতক্ষীরায় ৩৯ হাজার মেট্রিক টন চিংড়ি উৎপাদিত হয়েছে। এ বছর ৪২ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু করোনার কারণে হুমকির মুখে চিংড়ি শিল্প। এ ভরা মৌসুমেও ঘের মালিকরা ঘেরে ঠিকমতো চিংড়ি রেণু ছাড়তে পারেনি। বাজারে মাছের খাদ্য সংকট। চিংড়ি বিক্রিতে দাম কম। সব মিলিয়ে এ জেলায় ঘের, হ্যাচারি ও নার্সারিসহ চিংড়িশিল্পে ২০০ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে সাতক্ষীরা জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম বাবলা জানান, জেলার চাহিদা মিটিয়ে সাতক্ষীরা থেকে প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ ট্রাক সাদা মাছ রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হতো। করোনার কারণে রাস্তাঘাট বন্ধ থাকায় এখন মাত্র দু-একটি ট্রাক বাইরে যাচ্ছে।