করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে অঘোষিত লকডাউনে স্থবির দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-। এতে অনেকদিন ধরে ঘরবন্দি কর্মজীবী মানুষ। থমকে রয়েছে সবার জীবন-জীবিকা। যেন অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে চলছে সবাই। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পোশাককর্মীসহ খেটে খাওয়া মানুষের হাহাকার। এ থেকে মুক্তি পেতে গত রোববার থেকে বেশকিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং জরুরি সেবার সব অফিস খুলেছে। সে সঙ্গে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে সীমিত আকারে চালু হয়েছে পোশাক কারখানা। এছাড়া বিশ্বব্যাপী মহামারির মধ্যেও অনেক পোশাক কারখানার ক্রয়াদেশ বহাল রয়েছে। এসব অর্ডার যেন বাতিল না হয় সেজন্য কারখানা খুলে দিতে মালিকদেরও চাপ রয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় সরকারের অনুমতিতে প্রথমে সীমিত আকারে কিছু পোশাক কারখানা চালু করে পরে ধাপে ধাপে সব কারখানা খুলে দেওয়া হবে। এর আগে কারখানা খোলার বিষয়টি অবহিত করে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠায় বিজিএমইএ। ওই চিঠিতে জানানো হয়, শুরুতে ২৬ এপ্রিল ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কিছু কারখানা, ২৮ থেকে ৩০ এপ্রিল আশুলিয়া, সাভার, ধামরাই ও মানিকগঞ্জের কারখানা, ৩০ এপ্রিল রূপগঞ্জ, নরসিংদী, কাঁচপুর এলাকা, ২ ও ৩ মে গাজীপুর ও ময়মনসিংহ এলাকার কারখানা চালু করা হবে। কারখানা খোলার ক্ষেত্রে শুরুতে উৎপাদন ক্ষমতার ৩০ শতাংশ চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে তা বাড়ানো হবে। এই চিঠি পাওয়ার পর শ্রম মন্ত্রণালয়ও তাৎক্ষণিক একটি চিঠি ইস্যু করে। এতে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালু করার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে কারখানা খোলার ক্ষেত্রে কী ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে সে বিষয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) সহযোগিতায় একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে বিজিএমইএ। ওই গাইডলাইন অনুযায়ী, দূরবর্তী এলাকা কিংবা ঢাকার বাইরে চলে যাওয়া শ্রমিকদের বাদ দিয়ে আপাতত কারখানার কাছাকাছি থাকা শ্রমিকদের দিয়ে উৎপাদন কাজ চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এখন কোনও শ্রমিক ঢাকার বাইরে থেকে নিয়ে আসা যাবে না -এমন শর্ত থাকলেও কারখানা খোলার খবরে অনেক শ্রমিক কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেন। অনেককে কারখানা থেকে ফোন করেও আসতে বলা হয় বলে জানা গেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কেউ হেঁটে, আবার কেউ অতিরিক্ত ভাড়ায় রিকশা ও ভ্যানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করেছেন। এসময় সামাজিক দূরত্ব রক্ষার বিষয়টি উপেক্ষিতই থেকে গেছে। যদিও কিছু কারখানা কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় শ্রমিকদের গায়ে স্প্রে করে দিচ্ছেন, থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে জ¦র পরীক্ষা করে কর্মীদের কারখানায় ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সবার হাত ধোয়া এবং মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু কোনও কোনও কারখানার ভেতরে এর কোনও বালাই নেই বলে অভিযোগ অনেক শ্রমিকের। তারা জানিয়েছেন, শুধু কারখানায় ঢোকার সময় শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু কাজের সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না। এছাড়া অনেক কারখানায় প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় এবং যাতায়াতের সময় শ্রমিকরা সামাজিক দূরত্ব মানছে না। রিকশায়, রাস্তায় ভিড় করে চলাফেরা করছে। কারখানাগুলোতে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে না মেনে কাজ করা এবং যাতায়াত-চলাফেরার সময় নির্দিষ্ট দূরত্ব না রাখা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়চ্ছে।
করোনা প্রতিরোধ করার সর্বোত্তম পন্থা হলো, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলা। কিন্তু গার্মেন্টস শ্রমিকরা এখন যেভাবে চলাচল করছে এটি এখন সামাজিক দূরত্বে সঙ্গে খাপ খায় না। এটা একেবারে বিপরীত। এতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে। এটা মারাত্মক হয়ে দেখা দিতে পারে। যদিও গার্মেন্টস মালিক ও শ্রমিক উভয়ের স্বার্থেই কারখানা খোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু কারখানা খোলা হলেও স্বাস্থ্যবিধি কতটা মানা হবে বা কতটুকু মনিটরিং করা যাবে সেটাও দেখার বিষয়। শ্রমিকরা যেন চার ফিট দূরে দূরে বসে কাজ করতে পারে সে ব্যবস্থা করা, যাদের সর্দি-কাশি আছে তাদের কাজে যোগদান থেকে বিরত রাখাসহ শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ। একজন মানুষ করোনা আক্রান্ত মানে সে একা নয়, তার আশেপাশে যারা আছে বা যারা সংস্পর্শে আসবে তারাসহ অনেক মানুষের আক্রান্ত হওয়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। তাই, যদি গার্মেন্ট খোলা রাখতেই হয় তাহলে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে অগ্রধিকার দিতে হবে। এক্ষেত্রে অবহেলা করা হলে অর্থনীতি রক্ষার জন্য যে কারখানা খোলা হচ্ছে তা অর্থনীতির জন্যই আত্মঘাতী হবে।