ঈদগড়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিরোধীয় জমিতে জোরপূর্বক পাকা দেয়াল ও টিনশেড ঘর নির্মান করা হয়েছে। ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড মাইজ পাড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে।সংঘটিত ঘটনায় স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার রহস্যজনক নীরবতায় নানা কানাঘুষা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, ঈদগড় মৌজার সৃজিত বিএস ২৯৬৯ খতিয়ানের দুইটি বিএস দাগের আন্দর ০.১৩৪ একর জমির মালিক হচ্ছেন ঈদগড় মাইজ পাড়ার আজিজুল হকের পুত্র রায়হান উদ্দিন ও তৌহিদুল ইসলাম। ২৫/৯/২০১৯ তারিখে তাদের নামে চূড়ান্ত খতিয়ান প্রচার হয়েছে। এ জমির বিষয়ে রায়হান ও তৌহিদ ৮ জনকে আসামি করে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, কক্সবাজারে এম, আর মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ৩৪৬/২০। ফৌজদারী কার্যবিধি মতে এ মামলার আবেদন করা হয়েছে। মামলার আসামিরা হচ্ছেন ঈদগড় বদর মোকাম এলাকার মৃত আহমদ আলী মাতব্বরের পুত্র নুরুল আলম ফেরদৌসি, মৃত আনু মিয়ার পুত্র রেজাউল করিম, জানে আলম, লিয়াকত আলী, হাসনা কাটা নিবাসী নুরুল আজিম, বদর মোকামের জিয়াউর রহমান ও মাইজ পাড়ার এনামুল হক ও আব্দুল্লাহ। বাদী পক্ষের দাবি, নালিশি জমি তাদের ভোগ দখলে রয়েছে। জমির সকল ডকুমেন্ট ও আছে। বিবাদীরা জোরপূর্বক জমি দখল করতে চায়। এতে শান্তিভঙ্গের আশঙ্কা বিদ্যমান রয়েছে। আদালত নথি পর্যালোচনা শেষে সার্বিক বিবেচনায় সহকারী কমিশনার (ভূমি), রামুকে বিরোধীয় জায়গার বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত পূর্বক মতামতসহ রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ দেন। এবং রামু থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ কে ওই জমিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বলা হয়। এম, আর মামলার আদালতের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ঈদগড় পুলিশ ফাঁড়ির বদলি হওয়া এএসআই মোরশেদ আলম পক্ষদের নোটিশ জারি করে নালিশি জমিতে প্রবেশ বারণ করেন। আদালতের পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত ওই জমিতে অনুপ্রবেশ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে এরূপ সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন। মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখ ১৩/৭/২০ ইংরেজি পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়া হলেও বিবাদীরা কিছুদিন পূর্বে এ জমির একাংশে পাকা দেয়াল ও টিন শেড স্থাপনা নির্মাণ করে। জোরপূর্বক নির্মাণ কাজ আরম্ভ করার পূর্বে ঈদগড় পুলিশ ফাঁড়ির বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএসআই সেলিমের নিকট আদালতের নির্দেশনার বিষয়টি নজরে আনলে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বলেন। এদিকে বাদীর পিতা আজিজুল হক জানান, পুলিশ কর্মকর্তার নিষেধের কয়েকদিনের মধ্যেই রহস্যজনকভাবে বিবাদীরা স্থাপনা নির্মাণ কাজ শেষ করে। এতে তিনি মোটা অংকের টাকার লেনদেন হয়েছে বলে দাবি করেন। এদিকে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নালিশি জমিতে বাড়ি নির্মাণের ঘটনায় রহস্যজনক নীরবতায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা এর ব্যাপারে এলাকায় ব্যাপক কানাঘুষা ও সমালোচনা চলছে।
এ ব্যাপারে প্রধান অভিযুক্ত নুরুল আলম ফেরদৌসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, রায়হান ও তৌহিদ এর পিতা ও দাদার সম্পত্তি ইতঃপূর্বে তারা বিক্রি করে ফেলেছেন। বিএস খতিয়ানে ভুল রেকর্ড হয়েছে। তাই তারা সম্পত্তির মালিক হতে পারে না। যদিও তারা তাদের নামে পৃথক বিএস খতিয়ান সৃজন করেছে। অন্যদিকে ঈদগড় পুলিশ ফাঁড়ির বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএসআই সেলিম জানান, বাদীপক্ষ আদালতের নির্দেশনার কপিটি আমার দৃষ্টিগোচর করলে আমি তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণকজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিই। পরবর্তীতে স্থাপনা নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ করার বিষয়টি তিনি অবহিত নয় বলে জানান। তিনি আরো বলেন, নোটিশ জারির পর পর বিষয়টির রিপোর্ট আদালতে চলে গেলে সেই ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইন-শৃংখলা বাহিনীর কোন ভূমিকা থাকে না। এদিকে এর আগে বিবাদীদের পিতা আজিজুল হক উপরুক্ত আসামি সহ অন্যান্যের বিরুদ্ধে রামু থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন যে, ঈদগড় মৌজার ৩৭.৩৭ শতক জমি তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি হয়। ওই সম্পত্তি এজমালি থাকা অবস্থায় তার পিতা মারা যান। পরবর্তীতে বিবাদীরা তার প্রাপ্য জমি জোরপূর্বক দখল করে রাখে। তফসিলের জমিজমা বন্টন করে তার অংশ তাকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য বারবার বিবাদীদের কে বলা হলেও তারা নানা অজুহাতে কালক্ষেপন করতে থাকে। এ ব্যাপারে স্থানীয় ভাবে অনেক সালিশের আয়োজন করা হলেও বিবাদীর সেসবের কোন তোয়াক্কা করে না। তার প্রকৃত জমি বারবার ভাগ বন্টন করে দেয়ার জন্য বলা হলেও তারা তাকে ভাগ বন্টনের মাধ্যমে জমি বুঝিয়ে না দিয়ে বরং উল্টো হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।