সনাতন পদ্ধতির চিংড়ি ও মাছ চাষের বাইরে গিয়ে মাত্র ৫ জন মৎস্যচাষীকে নিয়ে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চাষ করে অধিক মুনাফা অর্ঝন করতে সক্ষম হচ্ছেন চাষীরা। জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের বড়ডাঙ্গা চিংড়ি চাষের বড়ডাঙ্গা মডেল হিসেবে মঃস্য অধিদপ্তরের স্বীকৃতি পেয়েছে। মৎস্য অধিপ্তরের ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ কাজের সফলতায় এ মড়েলটি সৃষ্টি হয়েছে। মৎস্য বিভাগ বর্তমানে কলাস্টার পদ্ধতিতে সারা দেশে এই পদ্ধতি বাস্তবায়নে কাজ করছে।
৫ জন চাষীকে নিয়ে শুরু করা ক্লাস্টার পদ্ধতিতে এখন ৫০জন চাষী চিংড়ি ও মাছ চাষ করছেন। সনাতন পদ্ধতির মাছ চাষ থেকে সওে এসে আধুনিক প্রযুক্তির ও হালকা উন্নত প্রযুক্তির দিকে চাষীদেও আগ্রহ বাড়ছে। বড়ডাঙ্গা গ্রামের চিংড়ি চাষীরা এক যুগ ধওে চিংড়ি চাষ কওে আসছে। সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার ফলে উৎপাদন ছিল খুবই কম। তাছাড়া রোগ বালাই লেগেই থাকতো। ২০১৩ সালে ডুমুরিয়া উপজেলার তৎকালিন সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সরোজ কুমার মিস্ত্রী চাষীদেও এই ক্ষতির কথা চিন্তা করে একটি প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেন। এক্ষেত্রে অধিক রঅববান ও রোগবালাই মুক্ত চিংড়ি ও মাছ চাষ করতে চারটি পদ্ধতি অনুসরন করতে চাষীদের উৎসাহ দেন। এরমধ্যে ঘেরের পানির গভীরতা কমপক্ষে ৩ ফুট রাখা, পরিকল্পিত নার্সারী স্থাপন করা, ভাইরাসমুক্ত বাগদার পোনা মজুদ করা ও নিয়মিত সম্পুরক খাদ্য প্রয়োগ করা।
মাছ চাষীদের সাথে আলাপকালে জানা যায় সনাতন পদ্ধতির চিংড়ি চাষ করার ফলে আগে হেক্টও প্রতি উৎপাদন ছিল গলদা ৪০০ কেজি এবং বাগদা ৫০০ কেজির মত। পরিকল্পিতভাবে চাষ করার ফলে হেক্টর প্রতি গড়ে সাড়ে ৬ শত কেজির মত চিংড়ি উৎপাদন হয়। এই পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের ফলে ফলন উৎপাদন বেশি হওযায় ওই এলাকার চিংড়িচাষীরা ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ শুরু করে। নতুন এই পদ্ধতি চিংড়ি চাষের কৌশল, প্রশিক্ষণ দিতে এগিয়ে আসেন তৎকালিন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার সরোজ কুমার মিস্ত্রী। তিনি বড়ডাঙ্গা একটি মন্দিরে মাঠ স্কুল পরিচালনা করে চাষীদের হাতে- কলমে ও বাস্তবে প্রয়োগ করা শুরু করেন। বর্তমানে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ বড় ডাঙ্গা মডেলটি মৎস্য অধিদপ্তর স্বীকৃতি দিয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তর সরোজ কুমার মিস্ত্রীর উদ্ভাবিত ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি উৎপাদনের এই পদ্ধতি সারাদেশে প্রয়োগ করা চিন্তা ভাবনা করছে।
এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলার তৎকালিন সিনিয়র মৎস্য অফিসার সরোজ কুমার মিস্ত্রী ( বর্তমানে উপ- প্রকল্প পরিচালক সাসটেইনেবল কোস্টাল এ্যান্ড মেরিন ফিসারিজ প্রজেক্ট) ২০১৩ সালের দিকে মাছ চাষীদের কথা চিন্তা করে কম খরচে রোগমুক্তভাবে কিভাবে উৎপাদন বাড়ানো যায় সেটা নিয়ে গবেষনা করতে থাকি। এক পর্যায়ে মাত্র ৫ জন চাষীকে উদ্ভূদ্ধ করে পরিকল্পিতভাবে চারটি মৌলক দিক বিবেচনা করে চিংড়ি ও মাছ চাষের জন্য কলাকৌশল শিখিয়ে দেই। এই চাষ পদ্ধতিতে খাবার হিসেবে কোন অপদ্রব্য ( যেমন: গোবর, হাঁস-মুরগীর বিষ্ঠা, রাসায়সিক দ্রব্য ও এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় না। প্রয়োগ করা হয় না। এজন্য এখানকার উৎপাদিত মাছ ও চিংড়ির বাজার মূল্য অনেক। চাহিদাও বেশ।
খুলনা জেলা মৎস্য অফিসার মো: আবু ছাইদ ক্লাস্টার পদ্ধতিতে মাছ ও চিংড়ি চাষ বিষয়ে বলেন, বড়ডাঙ্গা মডেলটি দেশের চিংড়ি ও মাছ চাষে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। এখানে সম্পূর্ন জৈব নিরাপত্তা বজায় রেখে সম্পূর্ন পরিবেশ বান্ধব উপায়ে চাষাবাদ করা হচ্ছে। উৎপাদিত চিংড়ি কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবরেটরীতে পরিক্ষা কওে এ যাবত কোন ক্ষতিকর দ্রব্য পাওয়া যায়নি। দূষন পাওয়া যায়নি। এটি একটি নিরাপদ চিংড়ি চাষ এলাকা। দেশে নিরাপদ চিংড়ি উৎপাদনে এ মডেল বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।