বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে নজিরবিহীন লকডাউনে (অবরুদ্ধ) রয়েছে প্রায় গোটা বিশ্ব। এ পরিস্থিতিতে রপ্তানিতে ভয়াবহ ধস দেখল বাংলাদেশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, গত এপ্রিলে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮৩ শতাংশ। গত বছরের (২০১৮-১৯ অর্থবছর) এপ্রিলে বাংলাদেশের রপ্তানি হয়েছিল ৩০৩ কোটি মার্কিন ডলার। আর গত এপ্রিলে তা এসে ঠেকেছে মাত্র ৫২ কোটি ডলারে। রপ্তানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশে এক মাসে রপ্তানি এভাবে কমে যাওয়ার নজির নেই। অন্যতম রপ্তানিকারক ও নারায়ণগঞ্জের এমবি নিট ফ্যাশনের মালিক মোহাম্মদ হাতেম তিন দশক ধরে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির সঙ্গে জড়িত। পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র এই সিনিয়র সহসভাপতি রোববার বলেন, ৩২ বছরে রপ্তানিতে এত বড়ো ধস দেখিনি। তবে ইউরোপ ও আমেরিকা লকডাউন পরিস্থিতি থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসার চেষ্টায় রয়েছে। বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে কারখানা খুলছে। ফলে রপ্তানি কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু আগামী এক বছরেও রপ্তানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। সূত্র জানায়, সার্বিকভাবে চলতি অর্থবছরের জুন থেকে এপ্রিল পর্যন্ত গত ১০ মাসে রপ্তানি কম হয়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কম হয়েছে ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ। এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৭৪৫ কোটি ডলার, আর রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৯৪৯ কোটি ডলারের। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৩৯৪ কোটি ডলার। বাংলাদেশের রপ্তানির প্রধান পণ্য তৈরি পোশাক। রপ্তানির ৮৪ শতাংশই এ খাত থেকে আসে। তবে করোনার প্রভাবে অন্যান্য খাতের মতো এই খাতে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, এরইমধ্যে প্রায় ৪০০ কোটি ডলারের রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়েছে। এর বাইরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যসহ অন্যান্য রপ্তানি পণ্যের ক্রয়াদেশও বাতিলের খবর পাওয়া গেছে। এ পরিস্থিতিতে রপ্তানিকারকরা আর্থিক সংকটে পড়েছেন। পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারে সরকার উদ্যোক্তাদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা (নামমাত্র চার্জে ঋণ) ঘোষণা দিয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কেবল বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশের রপ্তানিও কমেছে। তবে এই সময়ে খাদ্যপণ্য কিংবা ওষুধের মতো পণ্যের রপ্তানি কমেনি বরং কিছু ক্ষেত্রে বেড়েছে। শুধু তাই নয়, করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে ভয়াবহ মন্দা তৈরি হতে পারে। সেক্ষেত্রে রপ্তানিতে স্বাভাবিক গতি আসতে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে। অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ইত্তেফাককে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণের কথা বলা হলেও কার্যত তা হয়নি। এক পণ্য ও হাতে গোনা কিছু বাজারনির্ভর না থাকলে রপ্তানি পরিস্থিতি হয়তো এতটা খারাপ হতো না। পরিস্থিতি উত্তরণে ভবিষ্যতে এ ইস্যুতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। ইপিবি সূত্র জানিয়েছে, এপ্রিল পর্যন্ত গেল ১০ মাসে প্রধান পণ্য তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমেছে ১৪ শতাংশের বেশি। লক্ষ্যমাত্রা থেকে আয় কম হয়েছে ২২ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ২ হাজার ৪৪৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ১৪৪ কোটি ডলার। অন্যান্য বড়ো পণ্যের মধ্যে চামড়া ও চামড়া পণ্যের রপ্তানি কমেছে ১৬ শতাংশের বেশি। প্রায় সব ধরনের পণ্য রপ্তানি কমলেও ওষুধ এবং পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে।