রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভায় মেয়র আর কাউন্সিলরদের মধ্যে চলছে ‘উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ খেলা। বাগধারা বা প্রবাদ বচন ভঙ্গিতে এই শব্দটি একজনের কৃতকার্যের দায়িত্ব অন্যায় ভাবে অপরের উপরে আরোপ করাকে বোঝানো হয়েছে। মূলত ‘ওএমএস’ (খাদ্য বান্ধব কর্মসূচী) কার্ড নিয়ে দু’সপ্তা ধরে মেয়র ও কাউন্সিলরদের মধ্যে এমন খেলা শুরু হয়েছে। তবে, এহেন পরিস্থিতিতে বেশ কয়েক কয়েক দিন ধরে পৌর পরিষদে নিয়মিত অফিস করছেন না মেয়র ও সচিব। এতে করে সুবিধা বঞ্চিত নাগরিকরা চরম হয়রানি ও বিড়ম্বনায় পড়েছেন।
এনিয়ে পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী গত (১০ মে) রোববার সকালে কাউন্সিলর মোস্তাফিজুর ও আমির হোসেন আমিনকে শোকজ নোটিশ করেছেন। নোটিশে ২৪ ঘন্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। ফলে কাউন্সিলর মোস্তাফিজুর নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে গত (১১ মে) সোমবার দুপুরে লিখিত জবাব জমা দেন। তবে, কাউন্সিলর আমির হোসেন আমিন আজ (১২ মে) সকালে পৌর সচিব আবুল হোসেনের কাছে জবাবের কপি জমা দিয়ে রিসিভ কপিতে স্বাক্ষর নেন।
পৃৃথক জবাবে কাউন্সিলররা দাবি করেন, তালিকায় একই ব্যক্তির নামে একাধিকবার লিপিবদ্ধ করা হয়নি। যদি একই ব্যক্তির নামে একাধিকবার তালিকা প্রস্তুত ও গ্রহন করা হয়ে থাকে তবে, সেটা আপনি মেয়র নিজে সৃজন করেছেন। আপনার বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আমরা অভিযোগ করি। এহেন পরিস্থিতিতে তদন্ত কার্য শুরু হয়। এ অবস্থায় আপনি ক্ষুব্ধ হয়ে তদন্ত কার্য বাধাগ্রস্থ করতে ও তাদের দমিয়ে দেবার জন্য অপকৌশল হিসেবে অভিযোগগুলো উত্থাপন করা হয় বলে জবাবপত্রে দাবি করেন কাউন্সিলর মোস্তাফিজুর ও আমির হোসেন আমিন।।
সম্প্রতি ওএমএস কার্ড ও বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ বিতরণ নিয়ে মহাসংকটে মেয়র গোলাম রাব্বানী এমন অভিযোগের খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত হয়। ফলে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। এতে টনক নড়ে মেয়র রাব্বানীর। ফলে দূর্নীতি ও জনরোষ থেকে রক্ষা পেতে মেয়র লোক দেখানোর জন্য কৌশলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলরকে শোকজ নোটিশ দেন। এনিয়ে গত দু’সপ্তা ধরে পৌর পরিষদে শুরু হয়েছে মেয়র ও কাউন্সিলরদের মধ্যে ‘উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ খেলা।
কাউন্সিলর মোস্তাফিজুর জানান, সম্প্রতি পৌর পরিষদের ৬ জন কাউন্সিলর মেয়রকে অবাঞ্ছিত ঘোষনা করে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এসব কাউন্সিলরদের মধ্যে অন্যতম হলেন আমির হোসেন আমিন, ইসমতারা, মোস্তাফিজুর, নাহিদ হাসান, ফিরোজ কবির ও মোহাম্মাদ হোসেন মুন্টু। সম্প্রতি মেয়র তার অপকর্ম থেকে রক্ষা পেতে ‘উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ খেলা শুরু করেছেন। এ খেলা আমরা খেলতে প্রস্তুত। কারণ আমাদের মধ্যে কোন অন্যায় ও ভুল নেই। তবে, প্রশাসনকে সঠিকভাবে তদন্ত করে মেয়রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
এবিষয়ে মুন্ডুমালা পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী বলেছেন, কাউন্সিলরদের শোকজ জবাব পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে পৌর পরিষদে মিটিং করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে নিয়মিত অফিস করার ব্যাপারে জানতে চাইলে এড়িয়ে গিয়ে মোবাইল সংযোগ বিছিন্ন করেন মেয়র গোলাম রাব্বানী।