বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম কমলেও দেশে কমেনি। বরং মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা মুনাফা লুটে নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় প্রতিবেশী ভারতেও এলপিজিরি দাম কমেছে। কিন্তু এদেশে গ্রাহক পর্যায়ে এলপিজির দাম আগের মতো রয়েছে। এলপিজির দর কমার কোন সুফলই পাচ্ছে না সাধারণ ভোক্তারা। বরং এলপিজির বিপণনকারীরা বলছে, বিশ্ববাজারে দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে দেশে এলপিজির দাম কমানো হলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা মুনাফা লুটে নিচ্ছে। ফলে কোন সুফল সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে না। বিপিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের বাজারে শিল্প উৎপাদন, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় জ্বালানি তেলের চাহিদা ৭৫ ভাগের মতো কমেছে। কিন্তু মানুষের রান্নাঘরে দেশের এলপিজির প্রায় সবটুকুই ব্যবহার করা হয়। করোনার কারণে এলপিজির বিপণন কমেনি। বরং এলপিজির বিপণন বাড়ারই কথা। কারণ সব মানুষ এখন তিন বেলায় ঘরে রান্না করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গত এপ্রিলে এলপিজির কাঁচামাল প্রোপেন এর দাম ছিল প্রতি মেট্রিক টন ২৩০ ডলার আর বিউটেনের দাম ছিল ২৪০ ডলার। দুটি মিলিয়ে গড় দাম ছিল ২৩৭ ডলার। চলতি মে মাসে এসে দাম টন প্রতি ১০৩ ডলার বেড়েছে। এখন প্রোপেন এবং বিউটেনের দাম টন প্রতি ৩৪০ ডলার। কিন্তু গত মার্চেও ওই দাম ছিল ৪৭০ ডলার। সারা বিশে^ জ্বালানি তেলের নিম্নগামী মূল্যের মধ্যে এলপিজির দাম সহসা বাড়ার কোন আশঙ্কা নেই। কিন্তু দেশের বাজারে একেবারে ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজির এক বোতল এলপিজির দাম এক হাজার টাকাই রয়ে গেছে। কোথাও কোথাও কিছুটা কমে বিক্রি হলেও বেশিরভাগ ভোক্তাকে এক হাজার টাকাতেই কিনতে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিশ্ববাজারের দর অনুযায়ী বর্তমানে কোন ক্রমেই প্ল্যান্টগুলোর এলপিজির ১২ কেজি বোতলের দাম ৭০০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। পাশাপাশি দেখতে হবে কে কখন কোন দামে এলপিজি আমদানি করে রেখেছিল। তবে সরকার যেহেতু খুব কম পরিমাণ এলপিজি বিপণন করে, যা মোট এলপিজি চাহিদার ৫ ভাগও নয়। তাই তা দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তাছাড়া ভোক্তা যাতে এলপিজি সঠিক দামে পায় এখনো তেমন কোন উদ্যোগও নেয়া হয়নি। সরকার এলপিজির ভোক্তা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দেয়ার কথা বললেও বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো তাতে সম্মত হয়নি। দেশে সাধারণ যে কোন পণ্যের মোড়কে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা থাকে। কিন্তু এলপিজির গায়েই এই দাম লেখা থাকে না। ফলে গ্রাহক বুঝতেও পারে না তার কাছ থেকে মধ্যস্বত্বভোগীরা কি পরিমাণ ব্যবসা করছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে এলপিজি অপারেটরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (লোয়াব) এর প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরী জানান, প্রতিযোগিতার বাজারে অনেককেই লোয়াবের নির্দেশনা অনুসরণ না করেই এলপিজির দাম কমাচ্ছে। এখন বিপণনকারীরা ৭৩০ থেকে ৮৪০ টাকার মধ্যে এলপিজি বিক্রি করছে। কিন্তু গ্রাহক পর্যায়ে দাম না কমাটা দুঃখজনক। এর মধ্যে আবার বলা হচ্ছে করোনার কারণে পরিবহন বন্ধ রয়েছে সেজন্য বাড়তি দাম দিতে হবে। কিন্তু কোথাও এলপিজি পরিবহনে কোন সমস্যা হচ্ছে না। মূলত ডিস্ট্রিবিউটরদের মধ্যে যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে তা ভাঙ্গতে হবে। নাহলে গ্রাহককে সুবিধা দেয়া সম্ভব নয়।
অন্যদিকে সরকারি এলপিজি বিপণন কোম্পানি এলপিজি গ্যাস লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ফজলুর রহমান খান জানান, এখন যে দাম তাতে ১২ কেজির এক বোতল এলপিজি আমদানি করে বোটলিং প্ল্যান্টে পৌঁছাতে ৫০০ টাকা খরচ হয়। এরসঙ্গে বোটলিং খরচ এবং মুনাফা যোগ করে বিপণন করা হবে। এখন কে কতটা খরচ সমন্বয় করবে তা বলা কঠিন। এটা ব্যবসায়িক কৌশল এবং নীতির বিষয়। সরকারি এলপিজির সাড়ে ১২ কেজির বোতলের দাম গ্রাহক পর্যায়ে ৭৫০ টাকাই এখনো নির্ধারিত রয়েছে। তবে সরকারি দাম বেশি থাকলেও এলই এলপিজিতে ভর্তুকি দেয়।