কাঁচা পাটের সঙ্কটে ভুগছে সরকারি পাটকলগুলো। ইতিমধ্যে খুলনা অঞ্চলের সরকারি ৯টি পাটকলে কাঁচা পাটের সঙ্কটে উৎপাদন এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। মূলত মৌসুমে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় খুলনা অঞ্চলের ৯টি সরকারি পাটকল পর্যাপ্ত কাঁচা পাট ক্রয় ও মজুদ করতে পারেনি। ওই কারণে ওসব পাটকল ধুঁকে ধুঁকে চলছে। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এক মাস পাটকল বন্ধ থাকার পর চালু করা হলে মিলগুলোতে মজুদ পাট সঙ্কটের চিত্র ফুটে ওঠে। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে খুলনা অঞ্চলের স্টার ও প্লাটিনাম জুটি মিলে পাটের সঙ্কট খুবই প্রকট আকার ধারণ করেছে। ওই দুটি পাটকলে পাট সংগ্রহ করেই প্রতিদিনের উৎপাদন চালু রাখা হচ্ছে। আর অন্যান্য পাটকলে এক মাস উৎপাদন চালিয়ে রাখার মতো পাট মজুদ রয়েছে। মূলত প্রয়োজনীয় বরাদ্দের অভাবে সময় মতো প্রয়োজনীয় কাঁচা পাট কিনতে না পারার কারণেই মিলগুলোর উৎপাদনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এমনকি পাটকলগুলোতে পাট খাতে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে আন্দোলন হলেও সুফল মিলছে না। অথচ পাটকলগুলোর উৎপাদন অব্যাহত রাখতে কাঁচা পাটের জোগান ঠিক রাখা খুবই জরুরি।
সূত্র জানায়, দেশের খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলে প্রতিদিন পাটজাত পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৭২ দশমিক ১৭ টন। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৮০ টন। তার মধ্যে দৈনিক কার্পেটিং জুট মিলের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৬৮ টন, ক্রিসেন্ট জুট মিলের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭০ দশমিক ৫০ টন, দৌলতপুর জুট মিলের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১০ দশমিক ১১ টন, ইস্টার্ন জুট মিলের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ দশমিক ৩৪ টন, যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজে (জেজেআই) উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২২ দশমিক ২০ টন, খালিশপুর জুট মিলের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৭ দশমিক ৫০ টন, প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ দশমিক ৫৪ টন, স্টার জুট মিলের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩৬ দশমিক ৮০ টন এবং আলীম জুট মিলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১০ দশমিক ৫০ টন। পাট মৌসুমে মিলগুলো ভালো মানের যে পাট ২ হাজার ১০০ টাকা দরে ক্রয় করতো, তা এখন পাওয়া যাচ্ছে না। এখন পাওয়া যাচ্ছে ক্রস পাট। যেটি মৌসুমে ১ হাজার ৯৫০ টাকা দরে বিক্রি হতো। কিন্তু এখন করোনা পরিস্থিতির কারণে পাট রফতানি বন্ধ। তাই এ ধরনের পাটের দর ১ হাজার ৮০০ টাকায় নেমে এসেছে। মিলগুলো এখন ওই পাট ক্রয় করেই উৎপাদন চালিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।
সূত্র আরো জানায়, করোনা মহামারীতে বন্ধ থাকার পর সরকারি পাটকলগুলোতে শ্রমিকরা কাজে যোগদানের সঙ্গে সঙ্গেই কাঁচা পাট ক্রয়ের বিষয়ে ভাবতে হচ্ছে। কারণ কাঁচা পাট না থাকলে শ্রমিকরা কাজ করতে পারবে না। মিলগুলোতে সামান্য পরিমাণ পাট মজুদ রয়েছে। সেজন্যই কাঁচা পাট কেনার ওপর জোর দিতে হচ্ছে।
এদিকে সরকারি পাটকলে কাঁচা পাটের সঙ্কট প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) খুলনা অঞ্চলের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা বনিজ উদ্দিন মিঞা জানান, করোনায় বন্ধ থাকার কারণে মিলগুলো যথাযথভাবে পাট কিনতে পারেনি। ওই কারণে এখন মিলগুলো চালু হলেও প্রয়োজনীয় উৎপাদন করতে পারছে না। কাঁচা পাট সংকটের কারণে বর্তমানে মিলগুলোতে উৎপাদন এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে।