করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে গুজবের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। সেজন্য গুজব ঠেকাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের তীব্রতা আরো বাড়ানো হচ্ছে। আর ওসব অভিযানের আওতায় থাকছে প্রায় সকল শ্রেণী-পেশার মানুষই। বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাসসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে এমনিতেই মানুষের মধ্যে বড় ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে। তার মধ্যেই কেউ কেউ বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে ওই আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। ওসব গুজব রটনাকারীদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। সেজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সকল মাধ্যমের ওপর মনিটরিং আরো জোরদার করা হয়েছে। দেশ ছাড়াও বিদেশ থেকেও গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে তথ্য মিলেছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের তরফ থেকে ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে না জেনেশুনে প্রচারিত কোন বিষয় শেয়ার, লাইক বা কমেন্ট করার ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। সরকারের ওই নির্দেশনার পরেও যারা গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত থাকবে, তাদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব রটনাকারী বেশ কয়েকজনকে র্যাব ও পুলিশ বাহিনী আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আরো যেসব গুজব রটনাকারী সক্রিয় রয়েছে তাদের ধরতে র্যাব ও পুলিশ বাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। প্রথম দিকে করোনা ভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে ১২ জনকে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি বিভাগের হেফাজতে নেয়া হয়েছিল। গুজবের বিষয়ে সচেতন করে এবং আর কোন দিন কোন বিষয় নিয়ে গুজব ছড়াবে না এমন মুচলেকা নিয়ে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মূলত তা ছিল গুজব রটনাকারীদের বিষয়ে একটি আগাম সতর্ক বার্তা। তেমন বার্তায় মাস খানেক করোনা ভাইরাস বা অন্য কোন বিষয় নিয়ে গুজব ছড়ানোর ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু দেশে করোনা ভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা যত বাড়ছে, গুজব ছড়ানোর মাত্রাও ততো ডালপালা মেলছে। তবে সব গুজবই দেশ থেকে ছড়ানো হচ্ছে না। অনেক সময় অনেক বিষয় নিয়ে বিদেশে বসেও গুজব ছড়ানোর তথ্য মিলছে। এমন অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করেছে। ওই নির্দেশনা মোতাবেক সমাজের প্রায় সকল শ্রেণী পেশার মানুষের ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর মনিটরিংয়ের মাত্রা আগের যে কোন সময়ে চেয়ে বাড়ানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে পুরো বিশ্বই করোনা ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। এমন অবস্থায় করোনা ভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে আরো আতঙ্ক ছড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের কোনভাবেই ছাড় যায় না। তাদের আইনের আওতায় আনতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও গুজব ছড়ানোর তথ্য পাওয়া গেছে। বিদেশে বসে গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত ৬০ জনকে ইতিমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে এবং তাদের দেশে পাঠাতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগও অব্যাহত আছে।
এদিকে গুজব রটনা প্রসঙ্গে এলিট ফোর্স র্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের উপ-পরিচালক মেজর হুসাইন মোহাম্মদ রইসুল আজম মনি জানান, এমনিতেই মানুষের মধ্যে বর্তমানে করোনা ভাইরাস নিয়ে রীতিমতো আতঙ্ক কাজ করছে। তার মধ্যে কিছু অসাধু ব্যক্তি গুজব ছড়িয়ে ওই আতঙ্কের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে করে মানুষের মধ্যে চরম ভীতি ছড়িয়ে পড়ছে। এমন অবস্থায় সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক গুজব ছড়ানো বা তাতে সহযোগিতা করার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে অভিযানের তীব্রতা আরো বাড়বে। সমাজের প্রায় সকল শ্রেণী পেশার মানুষের ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর মনিটরিং করা হচ্ছে।
অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া বিভাগের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক সোহেল রানা জানান, পদ্মা সেতু নিয়ে গুজব থেমে নেই। এবার পদ্ম সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের বেতন ভাতা দেয়া হচ্ছে না বলে গুজব ছড়ানো হয়েছে। আর তা নিয়ে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শ্রমিকদের সঙ্গে হাঙ্গামার ঘটনায় গোলাগুলি হয়েছে বলেও গুজব ছড়ানো হয়। অথচ এমন কোন তথ্যের সত্যতা মেলেনি। বিষয়টি নিছক গুজব। সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। সেজন্য কোন গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে দেশ ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে এমন গুজব ছড়াতে পারে। এর আগে পদ্মা সেতুর বড় বড় পিলার পানির নিচ থেকে ওঠে গিলে খাচ্ছে দানবরা। এরপর পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে বলে গুজব ছড়ানো হয়েছিল। যার সত্যিকারের কোন ভিত্তি মেলেনি।