আর্থিক সঙ্কটে এলএনজি কেনা এবং বিদেশ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির বিল পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে তিতাস গ্যাস কোম্পানি। করোনার কারণে দেশের সব গ্যাস বিতরণ কোম্পানিই বিপাকে পড়েছে। ফলে ওসব কোম্পানির কর্মীদের বেতন দেয়া নিয়েই জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আর্থিক সঙ্কট সামাল দিতে বিদ্যুৎ জ¦ালানি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় দেশের সব থেকে বড় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাসের কাছে প্রস্তাব চেয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে ক্ষতির পরিমাণ তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বর্তমানে আবাসিক গ্রাহকদের বিল আদায় আগামী জুন পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। তার সঙ্গে শিল্প গ্রাহকরাও বিল না দিতে চাওয়াতে এলএনজি ক্রয় এবং বিদেশী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির বিল পরিশোধ করতে বিপাকে পড়েছে তিতাস। তিতাস সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতি মাসে ১২শ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে। কিন্তু করোনার মধ্যে গত এপ্রিল মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৪৫ কোটি টাকা। কিন্তু তার বিপরীতে তিতাসকে গ্যাস ক্রয়ের জন্য ঠিকই অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় কিভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা যায় সে বিষয়ে তিতাসকে পেট্রোবাংলার মাধ্যমে প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে তিতাসের কাছে যে এফডিআর ছিল তা ভাঙ্গিয়ে এলএনজি আর বিদেশী গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এখন গ্রাহকের নিরাপত্তা জামানতের অর্থ এফডিআর করা রয়েছে। তা চাইলেও এখন ভাঙ্গানো যাবে না। তাছাড়া এর আগে বাপেক্স এবং বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানিকে তিতাসের এফডিআর ভাঙ্গিয়ে টাকা দেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী তিন মাস পরে আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ করতে পারবে না তিতাস।
সূত্র আরো জানায়, তিতাসকে প্রতি মাসে ব্যবহারের ওপর ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা এলএনজির বিল পরিশোধ করতে হয়। তাছাড়া বড় অঙ্কের টাকা তিতাসকে বিদেশী কোম্পানির গ্যাস বিল হিসেবে দিতে হচ্ছে। কিন্তু বিক্রিত গ্যাসের বিল আদায় হচ্ছে না। সরকার আবাসিক গ্রাহকদের বিল আদায়ে জুন পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে। কিন্তু এই সুযোগে শিল্প গ্রাহকরা এখন ছাড় চাইছে। দেশের বড় বড় শিল্প গ্রুপ আর্থিক সঙ্কটের কথা বলে আপাতত বিল দিতে চাইছে না। একইসঙ্গে তারা বিলের সারচার্জে ছাড় চাইছে। তাতে করে আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে তিতাস।
এ প্রসঙ্গে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মো. আল মামুন জানান, করোনার কারণে তিতাসের কি ক্ষতি হয়েছে তা তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিতে বলা হয়েছে। তবে শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিল না দেয়া বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তিতাসের পক্ষ থেকে বিল আদায় করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী তিতাসের সঙ্গে বৈঠকে বলেন, ছুটি পেয়ে সবাই ঘরে বসে থাকবেন কেউ কোন কাজ করবেন না তা হবে না। এখানে সকলকে কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে ঘরে বসেই অনলাইনে অফিস করার ব্যবস্থা করতে হবে। তাৎক্ষণিকভাবে যাতে সব সমস্যার সামাধান করা যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বৈঠকে বলেন, তিতাসের অনেক প্রকল্পের কাজই করোনার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে এগুলো আবার চালু করতে হবে।