চলতি অর্থবছরে শত শত উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ ব্যয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে যাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন। এতো বিপুলসংখ্যক প্রকল্পের বিষয়ে এবারই প্রথম এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। আগামী জুন মাসেই ওসব প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওসব প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি বা সংশোধনের উদ্যোগ না নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন প্রাথমিকভাবে অর্থ ব্যয়ে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। সাধারণ প্রকল্পের মেয়াদোর্ত্তীণের ৩ মাস আগে এ উদ্যোগ নেয়া হয়। পরিকল্পনা কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পরিকল্পনা কমিশন চলতি অর্থবছরের ৪৪৩টি উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ ব্যয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে যাচ্ছে। মূলত প্রকল্প কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের কার্যকলাপ পরিকল্পনা ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা শৃঙ্খলার পরিপন্থী। এখন ওসব প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্তরা করোনাভাইরাসের অৎুহাত দেখিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে জানা সত্ত্বেও আগে থেকেই প্রকল্প সংশোধনের উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি। যদিও প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লে ব্যয় বৃদ্ধিরও আশঙ্কা থেকে যায়। তাছাড়া প্রকল্প থেকে যে সুফল পাওয়ার কথা, তা নির্দিষ্ট সময়ে পাওয়া থেকে দেশ বঞ্চিত হয়। যা কোনোক্রমেই কাম্য হতে পারে না।
সূত্র জানায়, অর্থ ব্যয়ের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা প্রকল্পগুলোর কাজ যেহেতু এখনো বাকি আছে, তাই গুরুত্ব বিবেচনা করে ২০২০-২১ অর্থবছরের নতুন এডিপি থেকে সেগুলো বাদ দেয়া হচ্ছে না। তবে নামমাত্র ১ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দিয়ে কোনোরকমে জিইয়ে রাখা হচ্ছে। আগামী ১৯ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে ওসব প্রকল্পের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে প্রধানমন্ত্রীর সামনে প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে।
সূত্র আরো জানায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে ৩১ প্রকল্পে ১ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল। আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতেও (এডিপি) একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মেয়াদ না বাড়ানোয় ৪৪৩টি প্রকল্পকে তারকা চিহ্ন দিয়ে নতুন এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হবে। সেক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশন থেকে বলা হচ্ছে, বাস্তবায়ন মেয়াদকাল বৃদ্ধি বা সংশোধন না করা পর্যন্ত ওসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় ও ব্যয় করা যাবে না। এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে অনুমোদন দিতে এনইসিকে সুপারিশ করা হবে।
এদিকে বিপুলসংখ্যক উন্নয়ন প্রকল্পের এমন দশা প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদদের অভিমত, কেন এতোগুলো প্রকল্পের এমন দশা হলো তার ব্যাখ্যা থাকা দরকার। করোনার দোহাই দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। কারণ করোনা পরিস্থিতি শুরুর আগেই উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন ছিল। করোনার কারণে যেখানে অর্থ সাশ্রয় করা প্রয়োজন, সেখানে এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দিলেও তো অহেতুক অনেক টাকাই যাচ্ছে। তাছাড়া যদি কম প্রয়োজনীয় হয় তাহলে ওসব প্রকল্প রাখার দরকার কি ছিল। বরং এডিপিতে অপচয়ের জায়গা বন্ধ করা জরুরি।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজ উল্লাহ জানান, একবারেই এতো প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা নয়। কোথাও নিশ্চয়ই কোনো গ্যাপ আছে। আর যদি সত্যিই প্রকল্পগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে অবহেলা আছে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা সচিব মো. নূরুল আমিন শুক্রবার জানান, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিন মাস আগে থেকেই মেয়াদ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হয়। তাতে প্রকল্পটির চলমান গতি বাধাপ্রাপ্ত হয় না। কিন্তু এতো প্রকল্পের একসঙ্গে মেয়াদ শেষ হওয়াটা অস্বাভাবিক। তবে সময়টাও বিবেচনা করতে হবে। করোনার কারণে লকডাউনে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ঠিকমতো মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করতে পারেননি। এ ব্যাপারে আইএমইডিসহ বিভিন্ন দফতরে যোগাযোগ করতে হয়। অফিস বন্ধ থাকায় সেসব কাজ করা যায়নি। ফলে এতোগুলো প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী জুন মাসে। যেহেতু প্রকল্পগুলোর কাজ চলমান সেহেতু হঠাৎ করেই বন্ধ করে দেয়া যায় না। তাই সামান্য ‘টোকেন মানি’ বরাদ্দ দিয়ে নিয়ম রক্ষা করা হচ্ছে। তবে পরে যখন মেয়াদ বাড়ানো হবে তখন আবার চাহিদা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ ও ছাড় করা যাবে। কিন্তু যতোদিন না সংশোধন করা