সাতক্ষীরার দেবহাটায় নারায়নগঞ্জ ফেরত প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার পর তার সাথে থাকা সখিপুর সরকারী খান বাহাদুর আহছান উল্লাহ কলেজে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকা ২৩ জনেরই করোনা ভাইরাস পজেটিভ হয়েছে। প্রত্যেকের বাড়ি লক ডাউন করেছে প্রশাসন। এতে শিশু ও গ্রাম পুলিশসহ সবাই করোনা পজিটিভ বলে রোববার রিপোর্ট আসে। করোনা সনাক্ত উপজেলা সদর ইউনিয়নের দেবহাটা গ্রামের মান্দার গাজীর পুত্র রেজাউল ইসলাম (৪৫) ঢাকার নারায়নগঞ্জে কাজ করতো। সে সহ ২৪ জন গত ১লা মে বাড়িতে আসে। ৩ মে প্রাথমিক ভাবে ১০ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য খুলনা পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ৫ মে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সদর ইউনিয়নের দেবহাটা গ্রামের মান্দার গাজীর পুত্র রেজাউল ইসলাম (৪৫) রিপোর্টে পজিটিভ হয়। বাকী ৯ জনের নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। তখন প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সখিপুর খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ কলেজে আলাদাভাবে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। বাকী ২৩ জনকে খান বাহাদুর আহছান উল্লাহ কলেজেই প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। পরবর্তীতে টেষ্টের জন্য দায়িত্বে থাকা স্থানীয় গ্রাম পুলিশ দেবহাটা সদর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ দুলাল হোসেনসহ তাদের নমুনা পাঠায় কতৃপক্ষ। সেই রিপোর্ট আসার আগেই ১৪ দিন পূর্ন হলে তাদের গত ১৪ মে ছেড়ে দেওয়া হয়। রোববার তাদের রিপোর্ট আসলে চার শিশু এবং তাদের দায়িত্বে থাকা গ্রাম পুলিশসহ ২৩ জনের রিপোর্ট পজেটিভ আসে বলে জানা যায়। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রো বায়োলজী ল্যাব (পিসিআর ল্যাব) থেকে তাদের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে করোনা ভাইরাস শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবদুল লতিফ। করোনা ভাইরাসে পজিটিভ ব্যক্তিরা হলেন, উপজেলার বসস্তপুর গ্রামের মোহাম্মাদ গাজীর পুত্র নুর ইসলাম গাজী (৭০), একই গ্রামের হাকিম গাজীর পুত্র হাসান গাজী (৫০), সুশীলগাতী গ্রামের মৃত আবদুল হামিদের পুত্র শেখ আবুল কালাম (৪০), কোড়া গ্রামের ছাত্তার গাজীর পুত্র আবু সাঈদ (১৮), প্রথম করোনা আক্রান্ত দেবহাটার মান্দার গাজীর পুত্র রেজাউল ইসলাম (৪৫), দেবহাটার মোকছেদ আলী গাজীর পুত্র মুসা গাজী (৩২), একই গ্রামের জামাত আলী গাজীর তিন পুত্র শরিফুল ইসলাম (৩২), আকবর আলী গাজী (৪০), হাফিজুল ইসলাম গাজী (৩৮), বসন্তপুরের আকবর আলী গাজীর স্ত্রী বানুরা (৩০), দেবহাটার মুসা গাজীর স্ত্রী হালিমা বেগম (২৩), সাতক্ষীরা সদরের ধুলিহর গ্রামের সাইফুল্লাহর স্ত্রী হালিমা খাতুন (২৫), বসন্তপুরের হাসান আলী গাজীর স্ত্রী জবেদা খাতুন (৪৮), সাতক্ষীরা সদরের ধুলিহর গ্রামের নজরুল গাজীর পুত্র সাইফুল্লাহ (২৮), সখিপুরের জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী হালিমা খাতুন (৩০), দেবহাটার বসন্তপুর গ্রামের রেজাউল ইসলাম গাজীর শিশুপুত্র মামুন (১৪), দেবহাটা সদর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রামপুলিশ মৃত হাসান গাজীর পুত্র আবদুর রহমান (৬০), দেবহাটার আকবর আলী গাজীর শিশুকন্যা খাদিজা খাতুন (৬), দেবহাটা সদরের মুসা গাজীর শিশুপুত্র মুজাহিদ (৪), বসন্তপুরের হাসান আলী গাজীর দুই পুত্র আল আমিন (১৯), আবদুল মান্নান (১৮), সাতক্ষীরা সদরের ধুলিহর গ্রারে সাইফুল্লাহর শিশুকন্যা সাদিয়া সুলতানা (৭) ও দুই বছর বয়সী শিশুপুত্র হাসিব বাবু। তবে এদের মধ্যে সখিপুরের রবিউল গাজীর পুত্র জয়নাল আবেদিন (৫০) এর রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দেবহাটাতে তেমন প্রভাব বিস্তার করতে না পারলেও ২৩ জনকে খান বাহাদুর আহছান উল্লাহ কলেজের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন থেকে ছেড়ে দেওয়ার ফলে সমগ্র উপজেলার মানুষ আজ করোনা ঝুকিতে পড়েছে বলে মনে করছে এলাকার সচেতন মহল। রিপোর্ট আসার আগে তাদেরকে কেন ছেড়ে দেওয়া হলো এ বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া আফরীনের সরকারী মোবাইল ফোনে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আক্রান্ত প্রত্যেকের বাড়িতে রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া আফরীন ও ওসি বিপ্লব কুমার সাহা লকডাউন ঘোঘনা করেন। এ সময় তাদের সাথে ওসি (তদন্ত) উজ্জ্বল কুমার মৈত্র, থানার সেকেন্ড কর্মকর্তা এসআই নয়ন চৌধুরী, সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর গাজী, দেবহাটা প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক আর.কে.বাপ্পা, দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক আরিফ, এসআই হেকমত আলী, ইউপি সদস্য আরমান হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।