দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পান উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে বর্তমানে পশ্চিম মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ বিকাল ০৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৯৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে মঙ্গলবার শেষরাত হতে বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিμম করতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের এক বিশেষ বুলেটিনে বলেছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ২১০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ০৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ০৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ০৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ০৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নি¤œাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় অতিμমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ১৪০-১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে এরইমধ্যে উত্তাল হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগর। গত কয়েকদিনে মাছ ধরতে যাওয়া বরগুনা জেলার পাঁচ শতাধিক ট্রলার পাঁচ হাজারের অধিক জেলেসহ বর্তমানে গভীর সমুদ্রে রয়েছে। জেলা ট্রলার মালিক সমিতির পক্ষ থেকে এসব জেলেদের উপকূলে ফিরিয়ে আনার জন্য যোগাযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু সাগর প্রচন্ড উত্তাল থাকায় তারা চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। এমনকি তাদের প্রাণহানির সম্ভাবনাও রয়েছে। তাদের স্বজনরা এখন চরম উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছে।
বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেছেন, আগামী ২০ মে থেকে মা ইলিশ রক্ষা করার জন্য সাগরে সকল প্রকার মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকবে। তাই বেশিরভাগ মাছ ধরার ট্রলার শেষ মুহূর্তে মাছ ধরার জন্য সাগরে রয়েছে। সাগর উত্তাল থাকার কারণে ইতোমধ্যে কিছু মাছ ধরার ট্রলার ঘাটে এলেও এখনো পাঁচ শতাধিক ট্রলার গভীর সমুদ্রে রয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে।
ইলিশ আহরণের জন্য গভীর সমুদ্রে যাওযা রফিক মাঝির স্ত্রী পারুল বেগম জানান, তার স্বামী গত তিনদিন আগে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গেছেন। আরো দুই তিন দিন পরে তাদের পাথরঘাটায় ফেরার কথা রয়েছে। সমুদ্রের মধ্যে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় বরগুনায় রোববার বেলা ১১টায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৫০৯টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে শেল্টারগুলোকে বসবাসের উপযুক্ত করা হয়েছে। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে জনসাধারণ যাতে আশ্রয়কেন্দ্রে আসে সে বিষয়টি লক্ষ্য রেখেই আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যাতে সামাজিক দুরত্ব বজায় থাকে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। তিনি বলেন, জেলার প্রতিটি উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে জরুরী সভা করে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। সিপিপি, রেড ক্রিসেন্টসহ সকল সেচ্ছাসেবী সংগঠনকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। তিনি সকলকে নিজ অবস্থানে সতর্ক থাকার জন্য আহবান জানিয়েছেন।