ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ নিয়ে আতঙ্ক ক্রমশ বাড়ছে কয়রা উপজেলার উপকূলজুড়ে। বিশেষ করে বেড়িবাঁধ ভাঙা জনপদ কয়রার ৭টি ইউনিয়নের মানুষ জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্কে আছেন।
নদীর তীরবর্তী বেড়িবাঁধের বাইরে ও বাঁধের কাছাকাছি মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। গতকাল ১৯ সকাল থেকে কয়রার আকাশ কিছুটা রোদ আবার কিছুটা মেঘলা ভাবছিলো। কিছু সময় থমথমে গুমোট ভাব বিরাজ করছিলো। অসহনীয় ভ্যাপসা গরমে রোজাদার মানুষের ত্রাহি অবস্থা। রাতে ছিলো থমথমে, নিস্তব্ধ ছিলোনা কোন বাতাস। একদিকে চলছে করোনার আতঙ্ক তার ওপর নতুন করে ঘুর্ণিঝড়ের আশঙ্কাÑঝুঁকিপূর্ণ বেঁড়িবাধের শঙ্কা তো সব সময় কয়রা উপকূলের লেগেই আছে এ নিয়ে উপজেলার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক-শঙ্কা চরমে। করোনা আতঙ্কের চেয়েও সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে বেড়িবাঁধ ভাঙনের আতঙ্কে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খুলনার কয়রায় ১৪টি গ্রামের মানুষ। কপোতাক্ষের জোয়ারের লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়লে ঘর-বাড়ি, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নষ্ট হয়ে যাবে এমন আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উপকুলের মানুষ। এতে শঙ্কা নিয়ে দিন কাটছে তীরবর্তী মানুষগুলোর।
স্থানীয় এমপির হস্তক্ষেপে স্থানীয়রা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন সময় বাঁশ ও বালুর বস্তা দিয়ে কোনোমতে রক্ষা করে আসছে এ বাঁধটি। কিন্তু বর্তমানে এ বাঁধের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। ভাঙনের ফলে বাঁধের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার মতো কোনো সড়ক নেই। যেকোন সময় কয়রা উপজেলার বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে আশপাশের গ্রাম ও শত শত বিঘা জমির ফসল। তবুও কোনো দপ্তরের নজর নেই বাঁধের দিকে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।বিশেষ করে ঝুঁকির মুখে রয়েছে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা, খাসিটানা, জোড়শিং, মাটিয়াভাঙ্গা। উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতিরঘেরি, গাববুনিয়া, গাজিপাড়া, কাটকাটা। কয়রা সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর কয়রা, ৪ নম্বর কয়রার পুরাতন লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকা, মদিনাবাদ লঞ্চ ঘাট, ঘাটাখালি, হরিণখোলা। মহারাজপুর ইউনিয়নের উত্তর মঠবাড়ি, দশালিয়া, লোকা। মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালিবাড়ি, নয়ানি, শেখেরটেক এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, করোনা ভাইরাসের (কভিড-১৯) চেয়ে নদী ভাঙনে ঘর-বাড়ি হারানোর আতঙ্কে বেশি রয়েছে তারা। গত কয়েকবারের ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে কয়েক হাজার পরিবার। তাদের অভিযোগ, বারবার বলার পরও ভাঙন ঠেকাতে কার্যকর (টেকসই)কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
তাঁরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কয়রা সদর ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের কপোতাক্ষ নদ এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এক ভাঙন আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে কয়রা। নদী ভাঙনে সর্বহারা গোলখালী গ্রামের বাসিন্দা বাশার আলী মোল্লা বলেন, কপোতাক্ষের ভাঙনে আমার পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। আমার মতো আর কেউ যেন নিঃস্ব না হয় সেই দাবি করছি সরকারের কাছে। বাঁধ ভাঙতে ভাঙতে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানি বাড়লে ঘুম নষ্ট হয় হাজারও পরিবারের। দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের আংটিহারা বেড়িবাঁধ ভাঙনকূলের বাসিন্দা ও স্বাধীন সমাজকল্যাণ যুব সংস্থার সভাপতি মোঃ আবু সাঈদ খান বলেন, বর্ষা মৌসুমের আগে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো সংস্কার করা না হলে বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হতে পারে ও কয়রাবাসীকে আইলার মত লোনা পানিতে ভাসতে হতে পারে। এমনকি উপজেলার সর্বদক্ষিণে অবস্থিত দক্ষিন বেদকাশী ইউনিয়নটি বাংলাদেশের মানচিত্র হতে হারিয়ে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আমাদী সেকশন কর্মকর্তা মশিউল আবেদিন বলেন, কপোতাক্ষ নদের ত্রিমহোনায় গোলখালী বেড়িবাঁধের ভাঙন নতুন কিছু না। এটা পুরানো। তবে বর্তমানে খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে গেছে। আমি বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করতে এসেছি। ভাঙন কবলিত এলাকাটি বাংলাদেশের শেষ সীমানায়। এরপর আর বাংলাদেশ নেই। ভাঙনের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি অচিরেই সমাধান হবে। স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীসহ পানি সম্পদ মন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি এবং কী করে এ বাঁধগুলো স্থায়ী করা যায় এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথেও আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে।তিনি আরও বলেন, কয়রায় ঠেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানে সরকার মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। অতি তাড়াতাড়ি বাঁধ রক্ষায় কাজ করা হবে।