প্রায় ১১ বছর আগের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলার ক্ষত সারতে না সারতেই সুপার সাইক্লোন আম্ফানের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকা কয়রা। বুধবার সারা রাতব্যাপী প্রচন্ড ঝড়ে খুলনার সর্ব দক্ষিনে অবস্থিত কয়রা জেলার উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার ঘরবাড়ি,গাছপালার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভারী বর্ষণ ও তীব্র জোয়ারের পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমি ও মাছের ঘের। ৩ টি ইউনিয়নে পুরো এবং ২ টি ইউনয়নের আংশিক এলাকা বাধ ভাঙ্গার কারনে লবন পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়কে বড় বড় ভাঙ্গা গাছ পড়ে থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। আম্ফানের তান্ডবে বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত হয়েছে গোটা সুন্দরবন উপকূলীয় কয়রার উপজেলার অধিকাংশ জনপদ।
বুধবার সন্ধ্যায় প্রবল গতিতে সুন্দরবন উপকূলে আঘাত হানে সুপার সাইক্লোন আম্ফান। সারা রাত ধরে চলে এর তান্ডব। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার ক্ষত সারতে না সারতেই আবারো লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সুন্দরবন উপকূলের খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জনপদ। এসব এলাকার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তীব্র ঝড়ের মধ্যে হাজর হাজার মানুষের সারা রাত কাটে কাটে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিমুল কুমার সাহা বলেন, কয়রায় বেড়িবাধ ভাঙ্গার পাশাপাশি,ঘরবাড়ি,মৎস্য ঘের ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে তাৎক্ষনিক শুকনো খাবার বিতরন করা হয়েছে।
কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ও স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাত ও জোয়ারের পানির তোড়ে সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ছোটো আংটিহারা বাকেরগাজীর বাড়ির পাশে শাকবাড়িয়া নদীর প্রায় ১২০ গজ বেড়িবাঁধ, আংটিহারা মজিদ গাজীর পাশে ৩০০ গজ বেড়িবাঁধ, জোড়শিং বাজারের পাশে ৫০০ গজ বেড়িবাঁধ, কপোতাক্ষ নদের চোরামোখা খেয়াঘাটের কাছে ৫০০ গজ বেড়িবাঁধ ও গোলখালী তসলিম মোল্লার বাড়ির পাশে ৫০০ গজ বেড়িবাঁধ, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাজীপাড়া গ্রামের মাথায় কপোতাক্ষ নদের ৬০০ গজ বেড়িবাঁধ, কাটকাটা বাজারের শাকবাড়ীয়া নদীর ৩০০ গজ বেড়িবাঁধ, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া গ্রামে কপোতাক্ষ নদের ৭০০ গজ বেড়িবাঁধ এবং কয়রা সদর ইউনিয়নের হরিণখোলা ও গোবরা ঘাটাখালি গ্রামে কপোতাক্ষ নদের আধা কিলোমিটার এলাকাসহ ১০টি জায়গার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এবং মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কয়রা নদীর পানি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধ উপচে লবণ পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। সেখানে স্থানীয় অধিবাসিরা মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিনতাপাত করছে।
ঝড়ে কয়রা উপজেলার প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল লবণ পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের ছোটবড়ো ৫ হাজার মাছের ঘের ভেসে গেছে। প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তা বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ে কয়রা সদর ইউনিয়ন অফিসের টিন উড়ে গেছে। ডুবে গেছে উপজেলা পরিষদ। কয়রা-পাইকগাছার সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু, সার্বক্ষনিক কয়রা অবস্থান করে মানুষের জানমাল রক্ষায় দিন রাত কাজ করছে। তিনি বৃহস্পতিবার সকালে বিভিন্ন ভেঙ্গে যাওয়া বেঁড়িবাধ পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন জন্য পাউবোর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছেন।