মরণব্যাধি অদৃশ্য নোভেল করোনা নামক কোভিড-১৯ ভাইরাস পুরো বিশ্ব কাঁপাচ্ছে। চীনের উহান শহরে থেকে পলিপিল করে তামাম দুনিয়ায় মহামারিতে রূপ নিয়েছে করোনা। এ অবস্থায় বেশ কিছু শব্দ সংযোজন হয়েছে করোনা রোধে। সম্প্রতি ‘করোনারোধে লকোআইশা দাওয়ার বিকল্প নেই’ শিরোনামে গণমাধ্যমে একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম। এতে বলেছিলাম, করোনা রোধে বিকল্প দাওয়া হিসেবে বেঁচে নেয়া হয়েছে ‘লকোআইশা’। ‘লকোআইশা’ শব্দটি ভাঙ্গালে পাওয়া যায়- লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেন এবং শারীরিক দূরত্ব। যদিও প্রথমে ‘শারীরিক দূরত্ব’ না বলে ‘সামাজিক দূরত্ব’ শব্দটি চাউর করা হয়েছিল। তবে এখন অনেক মহল থেকেই ‘সামাজিক দূরত্বের পরিবর্তে ‘শারীরিক দূরত্ব’ শব্দটি ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে। ‘করোনা বধে সামাজিক নয়, ‘শারীরিক দূরত্ব’ শিরোনামে নিবন্ধ লিখে অনেক সহকর্মীদের ঝাকুনি-বকুনিও কম খাইনি। কেউ কেউ তিরস্কারে বলতে চেয়েছেন আমি নাকি বিজ্ঞানীদের দেয়া ‘সামাজিক দূরত্ব’ থিওরির বিরোধীতা করছি! তবে সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত শুভাকাঙ্খি শ্রেদ্বেয় নিয়ামূল মুলক, ইত্তেফাকের সাবেক সাংবাদিক ব্যাংকার ফারুক আহম্মেদ, বয়জেষ্ঠ্য সহকর্মী ডেইলি বাংলাদেশের সাংবাদিক আব্দুস সামাদ, আমাদের নতুন সময়ের খাদেমুল বাবুল, আলোকিত বাংলাদেশের শফিকুর রহমান শিবলী সাহেবসহ অনেকেই নিবন্ধটি পড়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছিলেন। আব্দুস সামাদ ভাই টেলিভিশন টক-শোতে সামাজিক দূরত্বের পরিবর্তে ‘শারীরিক দূরত্ব’ শব্দটি সংযোজনের আলোকপাত করায় বিষয়টি স্বাচ্ছন্দে গভীর রাতে অবহিত করে তাঁর নিকট আমাকে ঋণী বানিয়েছেন। আশার কথা হচ্ছে, নিবন্ধটি প্রায় ডজনখানেক গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় মনে হয় কোনো মহলে নজর কাড়ছে। পত্র-পত্রিকাসহ টেলিভিশন টক-শোতে এখন ‘শারীরিক দূরত্ব’ শব্দটির পক্ষে তুমুল সায় পাওয়া যাচ্ছে। মূলত বিষয়টি ‘সামাজিক’ নয়, বরং শারীরিক দূরত্বই বটে।
এবার আসা যাক আজকের নিবন্ধের মূল কথায়। দেশব্যাপি এখন অঘোষিত সীমিত আকারে চলছে লকডাউন। কয়েক দিন আগে নারায়ন মোদক নামে আমার পরিচিত এক ব্যক্তি তার ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘অনেক দিন পরে বাজারে এসে কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরছি। বাজারে ‘পকডাউন’ চলছে। তাই সকলের সাথে দেখা করতে পারলাম না। দোয়া করবেন সবাই।’ সাথে একটি ছবিও দিয়েছেন তিনি। ছবিতে দেখা যায়, বাজার থেকে করোনা নামক ভাইরাস মাথায় ঢালাতে করে নিয়ে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি। অপর ব্যক্তি দুই হাতে ব্যাগে করে করোনা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। ফেইসবুকের এ পোস্ট নিয়ে ঘটে তুমুল বিতর্ক। এক ফেইসবুকার ‘লকডাউন’ কে ‘পকডাউন’ লেখায় আইন বিকৃতির অভিযোগে নারায়ন মোদককে গ্রেফতার চেয়ে তার ফেইসবুকে পোস্ট দেন। পোস্টে নারায়ন মোদকের ছবিও সংযোজন করেন তিনি। ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েই তিনি কান্ত হননি। বরং নারায়ন মোদকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র বিরোধী কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করার হুমকিও দেন। তবে তিনি যে প্রাতিষ্ঠানিক না পড়েও আইনে পারদর্শি, একথা এলাকায় কম বেশি অনেকেরই জানা। এছাড়াও আইনের পুড় খাওয়াও রয়েছে তার অভিজ্ঞতা। হক কথাও বলেন। যেকারণে অনেকেই কম বেশী নানা কারণে তাকে সমীহ করে থাকেন। আমাকেও তিনি কম ¯েœহ করেন না।
উল্লেখ্য যে, সঠিকভাবে না মানার কারণে ‘লকডাউন’ নিয়ে বিভিন্ন জনে বিভিন্ন মন্তব্য করছেন সোসাল মিডিয়াতে। লকডাউন যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ার ক্ষোভ থেকে হয়তো নারায়ন মোদক লকডাউনের ব্যাঙ্গার্থকভাবে ‘পকডাউন’ লিখেছেন। তা না হয় মনের অজান্তেই ভুলবসত ‘ল’ না লিখে ‘প’ লিখে ‘পক’ শব্দটি ফেইসবুকে আমদানি করে থাকতে পারেন। কিন্তু এসবের কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে ফেইসবুক লাইভে এসে নারায়ন মোদকের গ্রেফতার দাবি চালিয়েই যাচ্ছেন ওই ফেইসবুকার।
পরবর্তীতে দেখা যায়, নারায়ন মোদক ফেইসবুকে শব্দটি ঠিক করে দেন। অর্থাৎ তিনি ‘পকডাউন’ শব্দের পরিবর্তে ‘লকডাউন’ শব্দটি লিখেন। এরপরও থেমে নেই তার বিরুদ্ধাচরণ। বরং পকডাউন লেখার দায়ে রাষ্ট্র বিরোধী কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগ তোলে নারায়ন মোদকের সাথে অনেকেইর চৌদ্ধ গোষ্ঠীর উদ্ধারেও তৎপর হতে দেখা যায় ওই ফেইসবুকারকে।
আমরা মনে করতে পারি, নারায়ন মোদক লিখতে গিয়ে ভুল করেছেন বলেই পরে শব্দটি শুদ্ধ করে ‘লকডাউন’ লিখেছেন। কিন্ত ফেইসবুকার বারবার বিচারের দাবিতে বলছেন, নারায়ন মোদক নাকি আইন ‘বিকৃতি’ এবং রাষ্ট্র বিরোধী কাজে লিপ্ত রয়েছেন। এখন কথা হলো, ‘বিকৃতি’ বলতে যা বোঝায় তা হলো, নষ্ট করে ফেলা অথবা রূপ পরিবর্তন করা। আর রাষ্ট্র বিরোধী বলতে, রাষ্ট্রে বিরুদ্ধাচারণ করা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নারায়ন মোদক কি তেমনটি করেছেন? আইন কি ‘বিকৃতি’ করা যায়? যদিও আইন অমান্যের নজির অহরহ। কিন্তু আইন বিকৃতির নজির পৃথিবীতে বেনজিরই বটে। কারণ, আইন অমান্য করা যেমন সহজ, ঠিক তেমনই সহজ নয় আইন বিকৃতি করার। বরং আইন পরিবর্তন করা হয়ে থাকে। সুতরাং এ কথা দোষের নয় যে, ‘আইন না মানা আর আইন বিকৃতি করা যেমন এক নয়, তেমনই ভুলবসত অথবা নেতিবাচক কোনো শব্দের ব্যবহার করলেই রাষ্ট্র বিরোধীর অপরাধ হবে, এমনটি নয়’।
করোনা সংকটে ‘লকডাউন’ বনাম ‘পকডাউন’ বির্তক যখন ফেইসবুকে তুমুল টক-ঝাল-মিষ্টির আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছিল, ঠিক তখন ওই ফেইসবুকারের উদ্দেশে কমেন্ট করেছিলাম, ‘পক’ লেখায় কি রাষ্ট্র বিরোধী হওয়ার ঘটনা ঘটেছে? প্রশ্নই আসে না। কত যদু, কত বুদু কত বেফাঁস কথাই না কয়! তার কোনো ইয়াত্তা নেই। ‘ইংরেজি শব্দ ‘পক’ লেখায় রাষ্ট্র বিরোধী? যতসব...’
এরপর আর যাস কোথাও? ওই ফেইসবুকারের রাগের মাত্রা থ্রি-সিক্সটি ডিগ্রিতে উঠলো। ফেইসবুক লাইভে এসে বললেন, গত রাতে তিনি ঘুমাতে পারেননি। কারণ, সারা রাত ইংরেজি ডিকশনারিতে ‘পক’ শব্দটি খোঁজতেই অনেকটাই কাহিল হয়েছেন। কিন্তু ‘পক’ শব্দটি ইংরেজি ভাষার না হওয়ায় তিন তিনটি ডিকশনারিতেও শব্দটি খোঁজে পাননি। সেকারণেই বারবার আমার কাছে ‘পক’ শব্দের অর্থ জানতে চেয়েছেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, বরং ‘পক’ শব্দটি ইংরেজিতে নেই, এমন চ্যালেঞ্জ ছোঁড়ে দিয়ে আমার চৌদ্দ গোষ্ঠীকে উদ্ধারের চেষ্টা করতেও কম করা হয়নি। বরং ফেইসবুকে লাইভে এসে তিনি আমার উদ্দেশে বলেন, ‘তোমার বাবা পেশায় শিক্ষক ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি ইংরেজি বিষয়ে পাঠদান করেছেন। কাজেই তোমার বাবার নিকট ‘পক’ শব্দের অর্থ জেনে নিও’।
ওই ফেইসবুকারের সাফ কথা হলো, ‘পক’ শব্দ বলতে ইংরেজিতে কিছু নেই। অপরদিকে আমার কতিপয় সহকর্মীও তার মন্তব্যে সায় দেন। তারা আমাকে শাসিয়ে বলেন, ইংরেজিতে ‘পক’ শব্দের ব্যবহার নেই। তবে আমি কীরূপে পক’কে ইংরেজি শব্দ হিসেবে উল্লেখ করেছি? এটা অপরাধই বটে।
লকডাউন বনাম পকডাউন বিতর্কে ইংরেজি ‘পক’ শব্দে সৃষ্ট সংকট নিরসনে পাঠকদের উদ্দেশে দুই দশকের সাংবাদিকতায় অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু তথ্যধারা তোলে ধরা হলো-
লকডাউন : লকডাউন শব্দটি ইংরেজি। যার ইংরেজিরূপ খড়পশফড়হি. লকডাউন শব্দটির বাংলা অর্থ তালাবদ্ধ। অর্থাৎ নিজেকে সাময়িকভাবে গ-িবদ্ধতায় রাখা। মূলত লকডাউন বলতে বোঝায় ‘বদ্ধাবস্থা’। এটি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নয়। এটা প্রশাসনিক বা সরকারি ব্যবস্থা। এতে বিমান বন্ধ, সীমানা বন্ধ, চলাচল বন্ধ। রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। এটা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত, নাগরিকের স্বতঃপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত নয়। কর্তৃপক্ষ যা বলবে, তা শুনতে হবে। এখন দরকার সবারই শারীরিক দূরত্ব বা বডি ডিসট্যান্সিং বজায় রাখা।
‘লকডাউন’ শব্দটি বিশেষ করে আমাদের দেশে তেমন আলোচনায় না থাকলেও ‘লকডাউন’ শিরোনামে বই লিখে গালি খেয়েছিলেন প্রখ্যাত লেখক পিটার মে। লকডাউনের পা-ুলিপি নিয়ে ‘আজগুবি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রকাশক। বলেছিলেন, কল্পনা নিয়ে বই হয়? কিন্তু লকডাউন এতোটাই অবাস্তব যে, মানুষ বইটি পড়ে প্রকাশকের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করবে মর্মে প্রকাশনা সম্পাদক বইটি বাতিল করে দেন। লেখক পিটার মেকে বলেন, ‘অবাস্তব চিন্তা নিয়ে বিভোর থাকার সময় নেই আমাদের’। ২০০৫ সালে বইটি লিখেছিলেন বিলাতি লেখক পিটার মে। বিশ্বে কী ঘটতে যাচ্ছে বা ঘটবে তার একটি ছবিও এঁকেছিলেন বইটিতে।
মহামারী হবে বিশ্বময়, এটাই ছিল বইটির সারকথা। এই মহামারীর নাম অবশ্য তিনি দেননি। করোনা ভাইরাসে যখন বিশ্ব কাঁপছে, ঠিক তখনই খোঁজ পড়লো ৬৮ বছর বয়সী লেখক পিটার মে’র। বলা হলো, বইটি কোথায়? আমরা এখন ছাপার কথা চিন্তা করতে পারি। একজন সম্পাদক সারা রাত ধরে বইটি পড়লেন। মতামত দিলেন, আর দেরি না করে এখনই প্রেসে দেয়া যেতে পারে। তাই হলো। গত ৩০ শে এপ্রিল বইটি বাজারে আসে। মিলিয়ন কপি বইটি ছাপার আগেই বিক্রি হয় বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়।
পকডাউন : ইংরেজিতে ‘পক’ শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে। যার ইংরেজিরূপেও রয়েছে ভিন্নতা। প্রথমত; পক শব্দের ইংরেজিরূপ হচ্ছে ঢ়ড়শব. শব্দটি ক্রিয়া পদে ব্যবহৃত হলে যার অর্থ হয় ১. (লাঠি, আঙ্গুল ইত্যাদি দিয়ে) খোঁচা দেওয়া বা মারা, খোঁচানো, উসকানো, বন্ধুভাবে কনুইয়ের গুঁতা দেওয়া। ২. ঢোকানো, ঢুকিয়ে দেওয়া, গুঁজে দেওয়া, (কাউকে নিয়ে) কৌতুক করা। ৩. হাতড়ানো, খুঁচে দেখা, হাতড়ে বেড়ানো, ঘাঁটাঘাঁটি করা। ৪. খুঁচিয়ে (গর্ত বা ছিদ্র) করা, খোঁচা ও গুঁতা। অন্যদিকে, ঢ়ড়শব. শব্দটি নামবাচক বা বিশেষ্য পদে ব্যবহৃত হলে, যার অর্থ- থলে। উপ-ভাষায় যা আমরা ‘থলি’ বলে থাকি।
দ্বিতীয়ত; পক শব্দের ইংরেজিরূপ ঢ়ড়পশ. যার বাংলা উচ্চারণ পক্। শব্দটি নামবাচক বা বিশেষ্য পদে ব্যবহৃত হলে, যার অর্থ-বসন্তের দাগ। আবার শব্দটি বিশেষণ পদে ব্যবহৃত হলে, অর্থ দাঁড়ায়- গর্তময়।
মোদ্দা কথা হল, ইংরেজি (উরপঃরড়হধৎু)-তে চড়শব (পক) মানে খুঁচানো। উল্লেখ্য, ইংরেজিতে ‘পক’ মানে খুঁচানো ঠিক আছে, কিন্তু ফেইসবুকে পক শুধু কাউকে খুঁচানোর জন্য ব্যবহার হয় না। অনেকেই মনে করেন, পক করা মানে কাউকে বিরক্ত করা। আসলে তা নয়। আমরা কাউকে সামনে পেলে ঐবু! কী খবর? এ রকম বলি। পক করলেও ঠিক এ কাজটিই করা হয়। ফেইসবুকে পক মানে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করা। আরেকটা সুবিধা আছে, কোনো অপরিচিত লোক আপনার ফ্রেন্ড লিস্টে নেই, সে যদি আপনাকে পক করে আর তার জবাবে আপনিও যদি তাকে পক ব্যাক করেন, তালে ওই ব্যক্তি ৩ দিন পর্যন্ত আপনার প্রোফাইলের সব ছবি এবং স্ট্যাটাস দেখতে পারবে।
এখানে কাহিনিটা হল, আপনার ছবি বা স্ট্যাটাসের প্রাইভেসি যদি ‘চঁনষরপ’ দেওয়া থাকে, তালে আর পক লাগবে না। এমনিতেই সবাই সবকিছু দেখতে পারবে। কিন্তু আপনার যে ছবি বা স্ট্যাটাসের প্রাইভেসি ‘ঋৎরবহফং ড়ভ ঋৎরবহফ’/ঋৎরবহফং দেওয়া থাকে ‘পক ব্যাক’ করার পর ওই ব্যক্তি সেগুলোও দেখতে পারবে।
এখন পকের কাজগুলো এক নজরে জেনে নিই। ১. কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করা। ২. ফ্রেন্ড না হওয়া সত্তেও কাউকে আপানার প্রোফাইল রিভিউ করার অনুমতি দেওয়া।
লকডাউন জরুরি অবস্থায় নেওয়া একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা। যখন কোনো স্থান বা ভবনে প্রবেশ করতে বা ছেড়ে যেতে বাঁধা দেওয়া; কাউকে কোনো নির্দিষ্ট স্থানে আটকিয়ে রাখা বা ঢুকতে না দেওয়া। সুতরাং, লকডাউন যেখানে বাস্তবায়ন নেই, সেটা একটু খুঁচা দিয়ে অন্যদের জানান দিতে ‘পক ডাউন’ শব্দের ব্যবহার দোষের কিছু আছে বলে অন্তত আমরা মনে করি না। হয়তো সেটাই এখানে ঘটতে পারে। তাছাড়া পকডাউনের অর্থ লকডাউন অপেক্ষায় কঠিন থেকে কঠিনতর। অর্থাৎ লকডাউন দ্বারা যেখানে সাধারণভাবে নিজেকে গুঁটিয়ে রাখা অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, সেখানে পকডাউন দ্বারা থলেবদ্ধবস্থা বোঝায়। যা নিজেকে একেবারে গুঁটিয়ে নেয়ার সামিল।
মনে রাখা দরকার যে, লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে আঞ্চলিকভাবে। সরকারের পক্ষ থেকে লকডাউন নয়, মূলত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ছুটি বাড়ানোর জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে। লকডাউন ঘোষণা করছে মূলত জেলা প্রশাসকগণ। যখন যে জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে- তখন ওই জেলাকে জেলা প্রশাসক লকডাউন ঘোষণা করেছেন। সরকার থেকে গণপরিবহণগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে পণ্য সাপ্লাইলের চ্যানেলগুলোকে সচল রাখা হয়েছে। কোথায়ও কোথায়ও লকডাউন করা হচ্ছে একটি বাড়ি অথবা একটি গ্রাম বা একাধিক গ্রামকে। লকডাউন পালনের জন্য সরকারের সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা না থাকায় লকডাউন উপেক্ষা করার প্রবণতা দেখা যায় সাধারণ মানুষের মধ্যে। কোথায়ও কোথায়ও লকডাউন একেবারেই মানা হচ্ছে না। যারা চাকরিজীবী তারাই সাধারণ ছুটির আওতায় পড়েন। কিন্তু যারা শ্রমজীবী তারা মূলত লকডাউনে হাফায়ে উঠছেন। চাকরিজীবীদের কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে না, কিন্তু মাসের বেতন পাচ্ছেন। তবে যারা শ্রমজীবী অর্থাৎ এক দিন কাজ না করলে সংসার চালানো দায়- তাদের জীবন কাটছে অনিশ্চয়তায়। তারাই এখন করোনার ঝুঁকির মধ্যে কাজের সন্ধানে ঘর থেকে বের হচ্ছেন। করোনাকালীন স্বাস্থ্য সেবা প্রায় ভেঙ্গে পড়ার মতো হয়েছে। অন্যদিকে, পুলিশ বাহিনীর বিরাট সংখ্যক সদস্যও করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে লকডাউন কিংবা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে কঠোর ভূমিকা পালন করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক যে ক্ষতি হয়েছে- তা পূষিয়ে নেওয়া দূরূহ কষ্টসাধ্য হতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে পকডাউন শব্দটির ব্যবহার আইন অমান্যের যেমন কিছু নেই, তেমনই রাষ্ট্র বিরোধী কাজে লিপ্ত থাকারও প্রশ্নাতিতই বটে। সুতরাং বলা যেতে পারে যে, লকডাউন যেখানে অকার্যকর, সেখানে পকডাউনই কার্যকর করা অতিব জরুরি।
(লেখক : এম. কে. দোলন বিশ্বাস, দৈনিক সংবাদের সাবেক সহ-সম্পাদক)