করোনার আক্রমণে গোটা পৃথিবী যেখানে স্তব্ধ!, মরণাতঙ্ক যেখানে তাড়া করে ফিরছে মানুষকে নিত্য। অথচ এক শ্রেণির মানুষের কাছে করোনায় সংক্রমণের মানে-ই মগজের বাইরের চিন্তা। সারা বিশে^র মতো আমাদের সরকারও যেখানে ঘর থেকে বাইর না হতে উৎসাহিত করছে। সেখানে জীবীকার খোঁজে নিত্য বাইরে গিয়ে হাত পাততে হচ্ছে খুধার্ত কিছু মানুষকে। জীবনের যথার্থ অর্থও যাদের জানা নেই, করোনার ভয় তাদের তাড়িত করে না। পেটের খিধে-ই এদের টেনে বের করছে বাইরে। এরা ভিক্ষুক! অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানও তাদের মৌলিক অধিকার। কিন্তু এসবের দায়িত্ব আমরা কতটুকু পালন করতে পারছি!
মসজিদের বাইরে ও এর আশপাশে প্রতিদিনই ভিক্ষুক শ্রেণির মানুষের আনাগোনা থাকে। শুক্রবার পবিত্র জুমা ও জুমা’তুল বিদা’। অন্যান্য দিনের তুলনায় এ দিনটির বিশেষ মর্যাদা থাকায় এসব নিরন্ন মানুষের ভীড় একটু বেশীই জমেছিল মসজিদ প্রাঙ্গণে। জীর্ণ পোশাকে থালা হাতে মলিন চেহারর এই মানুষগুলোকে দৃষ্টি এড়াতে পারেননি কুমিল্লার হোমনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপ্তি চাকমা। ইউএনওদের কাজের ছকবাঁধা পরিধি নেই। শুক্র কিংবা শনি, সব দিবসই কর্মঘণ্টা হিসেবে বিবেচ্য। তার ওপর করোনাকালের মহাব্যস্ততা। শুক্রবারও অফিস থেকে বের হতেই চোখে পড়ল ছেড়া কাপড় আর ভাঙা থালা হাতে; আবার কারোও থালাও নেই মলিন চেহার কিছু নারী ভিক্ষুক বসে আছে অফিসের নিচে ফ্লোরে। অপেক্ষা, নামাজ শেষে মুসল্লীরা বের হলে তাদের কাছ থেকে দু’এক টাকা চেয়ে-চিন্তে ঘরের চাল-ডাল কিনে নেবে। রুগ্ন শরীরের এসব মানুষগুলো আবার এক-আধ বেলা খেয়ে না খেয়ে রোজাও রেখেছেন।
ঈদের বাড়তি আনন্দ এদের জীবনে আসেনা। প্রতিটি মানুষই চায়, ঈদের বিশেষ দিনে একটি সুন্দর পোশাক, সঙ্গে ভালো কিছু খাবার। এইসব ভিক্ষুকদের ঘরে ঈদের আনন্দ পৌঁছে দিতে ইউএনও তাপ্তি চাকমা কনফারেন্স রুমে ডেকে নিয়ে চেয়ারে বসালেন। তারপর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পঁচিশ জন ভিক্ষুকের প্রত্যেককে নতুন শাড়ি, দুধ, সেমাই, চিনি, খেজুর, পোলাও চাল, তেল ইত্যাদি ঈদ উপহার তুলে দিলেন।
ভিক্ষকরা চেয়ারে বসে ইউএনও’র হাত থেকে ঈদের বিশেষ উপহার পেয়ে সজল চোখে দু’হাত তুলে দোয়া করলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নাহিদ আহমেদ জাকির।