বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্মীদের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন পাওয়া ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মতো নতুন পদ্ধতি চালু করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে। আর সংস্থাটির পক্ষে নগদে প্রদানের ক্ষেত্রে ফান্ড সংকটে পেনশন বিলম্বিত হচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে ইএফটির মাধ্যমে রেলকর্মীদের শতভাগ বেতন-ভাতা ও পেনশন প্রদানের নির্দেশনা এলেও দ্রুত ওই নির্দেশনা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অনেক রেলকর্মীই বেতন, বৈশাখী ভাতা ও পেনশন যথাসময়ে পাচ্ছে না। মূলত স্টেশনের আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রেলের অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনে দীর্ঘসূত্রতার কারণে প্রতিদিনই পেনশন তুলতে এসে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন রেলের পেনশনধারী সাবেক কর্মীরা। রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ২৫ মার্চ সন্ধ্যা থেকে সারা দেশে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় পরিচালন ব্যয় নির্বাহে স্টেশনের মাসিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল রেলওয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে বেতন-ভাতা ও পেনশন প্রদানে উদ্যোগী হয়। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সেকশনভিত্তিক আয় কমে যাওয়ায় মার্চ ও এপ্রিলে বিশেষ ট্রেনে করে বেতন-ভাতা ও পেনশন রেল কর্তৃপক্ষ পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করে। কিন্তু গণপরিবহন বন্ধের মধ্যে বিশেষ ট্রেনে বেতন পৌঁছানোর খবরে রেলের মান্ধাতা আমলের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। ওই প্রেক্ষিতেই রেলকর্মীদের ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য পাওনা পরিশোধের উদ্যোগ নেয়া হয়।
সূত্র জানায়, রেলের মাঠপর্যানের অনেক কর্মীই এখনো এপ্রিলের বৈশাখী ভাতা পায়নি। প্রতি মাসের শুরুতে বিগত মাসের বেতন-ভাতা হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এখনো সবাই এপ্রিলের বেতন পায়নি। তবে কেউ কেউ এপ্রিলের বেতন পেলেও ঈদের বোনাস পায়নি। তাছাড়া আসন্ন ঈদের আগে মে মাসের বেতন-ভাতা প্রদানের কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার পরও বেতন-ভাতা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা রেল কর্মীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। কারণ করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়েই মাঠপর্যায়ে রেলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মী কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। গুডস ট্রেন, কনটেইনার ট্রেন, জ্বালানিবাহী ট্রেন ও ১ মে থেকে বিভিন্ন রুটে চালু হওয়া পার্সেল ট্রেন পরিচালনার জন্য রেলের পরিবহন, বাণিজ্যিক বিভাগের সিংহভাগ কর্মী কাজ করছে। বিরূপ পরিস্থিতিতে কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের পক্ষ থেকে ঝুঁকি ভাতা প্রদানের দাবি উঠলে রেলপথ মন্ত্রণালয় ওসব কর্মীর তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেয়। কিন্তু তালিকা তৈরি হলেও এখন পর্যন্ত রেলকর্মীদের বিশেষ প্রণোদনার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। তার ওপর বেতন-ভাতা, বোনাসসহ বিভিন্ন ন্যায্য পাওনা দিতেও বিলম্ব হচ্ছে। যা রেল কর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে শুধুমাত্র পূর্বাঞ্চল রেলের চট্টগ্রাম ডিভিশনে রেলের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন নগদের পরিবর্তে ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হচ্ছে। তাছাড়া পূর্বাঞ্চল রেলের ২৭ হাজার পেনশন গ্রহীতার মধ্যে এ মাসে ইএফটির মাধ্যমে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ জনের পেনশন দেয়া হয়েছে। তবে ইতিমধ্যে প্রায় ৫ হাজার ৫০০ জনের ডাটা এন্ট্রি হয়ে আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে তারাও ইএফটির মাধ্যমে পেনশন পাবেন। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই পূর্বাঞ্চলের অবশিষ্ট ১৭ হাজার ৭০০ পেনশন গ্রহীতার পেনশন ইএফটির মাধ্যমে প্রদানের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে ঢাকা বিভাগ ও পশ্চিমাঞ্চল রেলের কর্মকর্তা, রেলকর্মী ও পেনশনারদের ইএফটিতে বেতন-ভাতা ও পেনশন প্রদানের কার্যক্রম শুরুই করতে পারেনি রেলওয়ে। ফলে পেনশনারসহ সারা দেশের লক্ষাধিক রেলকর্মী ও সাবেক রেলকর্মীর বেতন-ভাতা ও পেনশন প্রদানে মান্ধাতা আমলের পদ্ধতিতেই আটকে আছে।
এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পে অ্যান্ড ক্যাশ বিভাগের ম্যানেজার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, স্টেশন বন্ধ থাকলে রেলের নিজস্ব তহবিল থেকে বেতন-ভাতা ও পেনশন প্রদান করতে হয়। কিন্তু একবার অনুমোদন নিয়ে অর্থ ছাড় করার পর শেষ হয়ে গেলে আবার ব্যাংক থেকে টাকা তুলে কর্মীদের প্রদান করতে কয়েক দিন সময় লাগে। ঈদের আগে পেনশনারদের পাওনা পরিশোধ করতে চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এবং কর্মী সংকটে কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে। আগামীতে এ ধরনের সমস্যা আর হবে না।