২৫ শে মে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী। নজরুল বাঙালীর মননশীলতার অনেকখানি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত আছে। আজীবন সংগ্রামী এই কবির জীবনী যেন এক জিয়নকাঠি। মুহূর্তেই জেগে উঠে মন প্রাণ। মৃত্যুর প্রায় অর্ধ শতাব্দী হতে চললেও নজরুল প্রাসঙ্গিক। নজরুলকে অনেক পরিচয়ে পরিচায়িত করা যায়। তিনি একাধারে কবি, সাংবাদিক, সৈনিক, সুরকার, সাহিত্যিক রাজনীতিবিদ তো বটেই। অসংখ্য ধর্মীয় গীত রচনা করে নজরুল হিন্দু- মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের প্রিয় পাত্রে পরিনত হয়েছিলেন জীবদ্দশায়। নজরুল কেমন ছিলেন সত্যিকার অর্থে, তেমনি কিছু বিষয় নিয়ে নিম্নে আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি।
বিদ্রোহের জয়ডঙ্কা বাজিয়ে ধুমকেতুর মত যার আগমন তিনি হচ্ছেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সুরস্রষ্টা, সাংবাদিক, রাজনীতি সচেতন ব্যক্তি, শিল্পী, সুরকার, প্রাবন্ধিক। নজরুলের কবিতায়, সাংবাদিকতায়, সঙ্গীতের প্রতিটি পরতে পরতে ফুটে উঠেছে নিপীড়িত, বঞ্চিত, খেটে খাওয়া মানুষের কথা। তিনিই প্রথম ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন।
১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণকরেন কাজী নজরুলইসলাম। চুরুলিয়া গ্রামটি আসানসোল মহকুমার জামুরিয়াথানায় অবস্থিত।পিতামহ কাজী আমিনউল্লাহর পুত্র কাজী ফকির আহমদেরদ্বিতীয়া পত্নী জাহেদাখাতুনের ষষ্ঠ সন্তান তিনি। তার বাবা ছিলেন স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম। তারা ছিলেন তিন ভাই এবং বোন। তার সহোদর তিন ভাইও দুই বোনের নাম হল: সবার বড় কাজী সাহেবজান, কনিষ্ঠ কাজী আলী হোসেন, বোনউম্মে কুলসুম। কাজী নজরুল ইসলামের ডাক নাম ছিল “দুখু মিয়া”। ব্রিটিশশাসিত ভারতের অখন্ড বঙ্গভূমির বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম নিলেও নন্দিত কবিপুরুষ কাজী নজরুল ইসলাম আজ আমাদের জাতীয় কবি। রাজনৈতিক উত্থান-পতনে নানা ভৌগোলিক বিভাজনের সূত্রে এক অর্থে ভিনদেশি হয়েও যে-কারণে তিনি আজ আমাদের জাতীয় কবির মর্যাদায় অভিষিক্ত, এর পেছনে রয়েছে তাঁর প্রতি ও তাঁর সৃষ্টিকর্মের প্রতি আমাদের অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা এবং একই সঙ্গে এদেশের মানুষের সঙ্গে তাঁর নিজের সম্পৃক্ততা, সম্প্রীতি ও আক্ষরিক অর্থেই প্রেমের বন্ধন।
তিনিস্থানীয় মক্তবে (মসজিদ পরিচালিতমুসলিমদের ধর্মীয় স্কুল) কুরআন, ইসলামধর্ম, দর্শন এবং ইসলামি ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন শুরু করেন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে যখন তার পিতার মৃত্যু হয়, তখন তারবয়স মাত্র নয় বছর।পারিবারিক অভাব অনটনের কারণে তাঁর শিক্ষা বাধাগ্রস্থহয় এবং মাত্র দশ বছরবয়সে তাকে নেমে যেতে হয় জীবিকা অর্জ্জনে। এসময়নজরুল মক্তব থেকে নিম্নমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ওই মক্তবেই শিক্ষকতা শুরু করেন। একই সাথে হাজী পালোয়ানের কবরের সেবক এবং মসজিদের মুয়াজ্জিন (আযানদাতা)হিসেবে কাজ শুরু করেন। এইসব কাজের মাধ্যমে তিনি অল্প বয়সেই ইসলাম ধর্মের মৌলিক আচার অনুষ্ঠানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হবার সুযোগ পান যা তারপরবর্তী সাহিত্যকর্মকে বিপুলভাবে প্রভাবিত করেছে।তিনিই বাংলা সাহিত্যে ইসলামি চেতনার চর্চা শুরু করেছেন বলা যায়।
কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে গিয়ে তিনি কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতেকিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এ সময় তিনি কলকাতাতেই থাকতেন। এ সময় তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেনবিদ্রোহী এবং ভাঙার গানের মত কবিতা; ধূমকেতুর মত সাময়িকী। জেলে বন্দী হলে পর লিখেন রাজবন্দীর জবানবন্দী। এই সবসাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। ধার্মিক মুসলিম সমাজ এবং অবহেলিত ভারতীয় জনগণেরসাথে তার বিশেষ সম্পর্ক ছিল। পরবর্তীতে তিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, সংগীতস্রষ্টা, দার্শনিক পরিচিতি লাভ করেন। বাংলাভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, দেশপ্রেমী এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি।পশ্চিমবঙ্গও বাংলাদেশ - দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত।তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি বলা হয়।তার কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের প্রতি মানুষের অত্যাচার এবংদাসত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামেরমর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদএবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণাহাতেতাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে - কাজেই “বিদ্রোহী কবি”।
মক্তব, মসজিদ ও মাজারের কাজে নজরুল বেশি দিন ছিলেননা। বাল্য বয়সেই লোকশিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে একটি লেটো (বাংলার রাঢ় অঞ্চলের কবিতা, গান ওনৃত্যেরমিশ্র আঙ্গিক চর্চার ভ্রাম্যমান নাট্যদল)