রাজশাহীর মোহনপুরের বিশালপুর গ্রামের কৃষক এনামুল হক আড়াই লক্ষ টাকা খরচ করে পান বরজ করেছিল। আশা ছিল, এই পান বরজ থেকেই কেটে যাবে তার সারা বছর। কিন্তু ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে তার সেই বরজের পান ঝলছে গেছে। সেই সঙ্গে শেষ হতে বসেছে তার স্বপ্নও। শুধু এনামুল হক নয়, মোহনপুর উপজেলার বিশালপুর, গোছা, ঘাসিগ্রামসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের তার মতো অনেক কৃষকের স্বপ্নই পুড়েছে ইটের ভাঁটা থেকে নির্গত ওই বিষাক্ত গ্যাসে। প্রায় দুইশত বিঘা জমির বোরো ধান, কচু, পান বরজ, বিভিন্ন প্রকার সবজি ওই গ্যাসের প্রভাবে ঝলছে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব ওই এলাকার সব ধরনের গাছের ওপরও পড়েছে। ঝরে পড়ছে গাছের কাঁচা পাতা।
বৃহস্পতিবার (২৮ মে) ক্ষতিপূরণ চেয়ে নিবাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) এবং কৃষি অফিসারের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বুধবার রাতে ইট পোড়ানোর কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ওই ভাটার কিলিনে জমে থাকা বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে দেন। এরপর পরই এলাকার বাতাস উত্তপ্ত হয়ে যায়। ওই বাতাস যে দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সেই অংশেরই ধান, পান বরজ, কচু, বিভিন্ন সবজিসহ গাছের পাতা ঝলছে গেছে।
কৃষকরা জানান, তাদের প্রায় দুইশত বিঘা জমির ফসল বিষাক্ত গ্যাসে ঝলছে গেছে। বিষয়টি ভাটার মালিকদের জানালে তারা ক্ষতিপূরণ দেবেন বলে তাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন।
গোছা গ্রামের কৃষক আবদুস সাত্তার বলেন, তার লাউ খেতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভাটার ইট পোড়ানো মিস্ত্রি বলেন, কয়লা দিয়ে ইট পোড়ালে কিলিনে গ্যাসের সৃষ্টি হয়। সব ইট পোড়ানো যখন শেষ হয় তখন ওই গ্যাস তিন থেকে চার দিন ধরে ধীরে ধীরে ছেড়ে দিতে হয়। কিন্তু এক সাথে বেশি করে ছেড়ে দেয়ায় কারণে ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলার বিদ্রিকা গ্রামে অবস্থিত এ,এম এম ইটভাটার মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা কৃষকের ক্ষতিপূরণ দিতে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে ইটভাটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস ছাড়ার কথা অস্বীকার করেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রহিমা খাতুন বলেন, ইটের ভাটার গ্যাসে ফসল ঝলছে যাওয়ার বিষয়টি কৃষকেরা জানানোর পর শুক্রবার (২৯ মে) উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এলাকায় গিয়ে কৃষকদের সাথে নিয়ে ঝলসে যাওয়া ফসল পরিদর্শন করেছেন।
মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানওয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি শুনেছি। যদি ভাটার বিষাক্ত গ্যাসে কৃষকের ক্ষতি হয়ে থাকে তবে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।