লিবিবায় গুলি করে গোপালগঞ্জের সুজন নামে এক যুবককে হত্যা ও অপর এক যুবককে আহত করার ঘটনায় মুকসুদপুর থানায় তিন মানব পাচারকারী বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
সোমবার (১ জুন) নিহত সুজন মৃধার পিতা কাবুল মৃধা বাদী হয়ে মুকসুদপুর থানায় এ মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-১, তারিখ: ০১.০৬.২০২০)।
মামলার বিষয়টি মুকসুদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মৃধা আবুল কালাম আজাদ নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আসামীরা হলেন, মানব পাচারকারী গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার সুন্দরদী গ্রামের ওসমান শেখের ছেলে লিয়াকত শেখ ওরফে লেকু শেখ (৪৫), একই উপজেলার যাত্রাবাড়ী গ্রামের মৃত রজব আলী মোড়লের ছেলে রব মোড়ল (৪৫) ও মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানার সত্যবর্তী গ্রামের আ: মজিদ সরদারের ছেলে জুলহাস সরদার।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ১ জানুয়ারী বাদীর ছেলে সুজন মৃধা ও ভাগিনা ফরিদপুর জেলার সালথা থানার আলমপুর গ্রামের কবির শেখের ছেলে কামরুল শেখকে ৮ লক্ষ টাকা ও কালাম শেখের ছেলে ওমর শেখকে চার লক্ষ টাকার বিনিময়ে লিবিয়া পাঠানোর পর ভাল বেতনে চাকুরী দেবার জন্য মৌখিক চুক্তি হয়। এরপর ১৫ জানুয়ারী তিনি ২ লক্ষ ৫০ হাজার ও কালাম শেখ ৫০ হাজার টাকা দালাল রব মোড়কে দেন। পরে রব মোড়ল অন্য দুই আসামীর কাছে টাকা পৌঁছে দেন।
গত ৫ ফেব্রুয়ারী আসামীরা বাড়ীতে এসে লিবিয়া পাঠানোরে উদ্দেশ্যে সুজন মৃধা, কামরুল শেখ ও ওমর শেখকে বাড়ী থেকে ঢাকায় নিয়ে যান। এরপর ভারত থেকে দুবাই, কুয়েত ও মিশর হয়ে লিবিয়া পাঠায়।
পরবর্তীতে ১১ ফেব্রুয়ারী আসামীদেরকে ৫ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা দেয়া হয়। লিবিয়া যাওয়ার এক মাস পর চুক্তি ভেঙ্গে লিবিয়ার বেনগাজীর মিজদাহ শহরে নিয়ে আটক করে অন্যান্য আসামীদের সহায়তায় মুক্তিপনের দাবীতে শারীরিক ও মানসিক নিয্যাতন শুরু করে। পরে দালাল চক্রটি সুজন মৃধা, কামরুল শেখ ও ওমর শেখের কাছে ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবী করে নিয্যাতন করার ভয়েস ম্যাসেজ নিজ নিজ পরিবারের সদস্যদের কাছে প্রেরণ করে।
পরে ম্যাসেজ পেয়ে শারীরিক ও মানসিক নিয্যাতনের বিষয়টি আসামী তিন দালালকে জানালে তারা দাবীকৃত টাকা না দিলে কিছুই করতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়। এরপর ২৮ মে সুজন মৃধা ও কামরুল শেখকে গুলি করে হত্যা করে ও ওমর শেখ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন।
আহত ওমর শেখের পিতা মো: কালাম শেখ ও মা শাহিদা বেগম তার আহত ছেলেকে ফেরত চেয়েছেন। একই সাথে তারা মানব পাচারকারী দালাল চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করে ফাঁসির দাবী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মুকসুদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মৃধা আবুল কালাম আজাদ জানান, দুই যুবককে গুলি করে হত্যা ও অপর এক যুবককে গুলি করে আহত করার ঘটনায় তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলা দায়েরের পরপরই পুলিশ আসামীদের বাড়ীতে অভিযান চালায়। কিন্তু আসামীরা পলাতক রয়েছে। আসামীদের ধরতে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। দ্রুত আসামীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি লিবিয়ায় গুলি করে ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়। নিহতদের মধ্যে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার সুজন মৃধা রয়েছেন। অপর যুবক ওমর শেখ গুলিবিদ্ধ হয়ে লিবিয়ার ত্রিপলির একটি হাসপাতালে জীবন-মরনের সন্ধিক্ষনে রয়েছেন।