করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে আগামী দেশের জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার খোলাবাজারে চাল বিক্রির (ওএমএস) আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। সেজন্য আসন্ন বাজেটে এ খাতে বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা থাকছে। দেশে যাতে কোনো ধরনের খাদ্য সংকট দেখা না দেয় সেজন্যই পর্যাপ্ত মজুদের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আসন্ন ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে মোট ৩২ লাখ ১১ হাজার টন খাদ্যশস্য (চাল-গম) সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। তাতে সরকারের ব্যয় হবে ১৮ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৫ লাখ ৬১ হাজার টন চাল। বাকি সাড়ে ৬ লাখ টন গম। তাছাড়া গরিব মানুষের জন্য ৫ লাখ টনেরও বেশি চাল-আটা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। এখন তা আছে ৩ লাখ ৮০ হাজার টন। খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, খাদ্য মজুদ বাড়াতে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে মোট সংগ্রহ করা চালের মধ্যে ২৪ হাজার ৫৬ হাজার মেট্রিক টন কেনা হবে। বাকি বাকি এক লাখ টন চাল আমদানি করা হবে। তাছাড়া আমদানি করা হবে এক লাখ টন গম অ। অবশিষ্ট বেশিরভাগ খাদ্যশস্য অভ্যন্তরীণভাবে ক্রয় করা হবে। মূলত আগামী অর্থবছরে মোট খাদ্যপণ্যের ৯৮ শতাংশই অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে। আগামী বাজেটে বর্তমানের চেয়ে অতিরিক্ত ৩ লাখ টন খাদ্যশস্য ক্রয় করা হবে। ফলে দেশে কোনো ধরনের খাদ্য সংকট হবে না বলে আশা করছে সরকার।
সূত্র জানায়, করোনাকালে কর্মহীন গরিব মানুষকে বিশেষ কর্মসূচির আওতায় সরকার ১০ টাকা কেজি দামে চাল বিতরণ করছে। একই সঙ্গে গ্রামের পাশাপাশি শহরের ৫০ লাখ গরিব জনগোষ্ঠীকেও বিনামূল্যে চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। আবার ভিজিএফ ও ভিজিডির আওতায় সারাদেশে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। এসব কারণে খাদ্য ভর্তুকি বাড়বে। আসন্ন বাজেটে খাদ্য ভর্তুকিতে ৬ হাজার ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব থাকছে। চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে তা আছে ৪ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ সংশোধিত বাজেট অপেক্ষা নতুন বাজেটে এক হাজার ১৬৬ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে, যা শতাংশে প্রায় ২০ ভাগ বেশি। ওএমএসের আওতায় খাদ্য সরবরাহের লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরের জন্য চাল-আটা মিলে মোট ৫ লাখ ১০ হাজার টন বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। তার মধ্যে আটা দেয়া হবে ৩ লাখ ৬০ হাজার টন। বাকি দেড় লাখ টন চাল। আটা-গম মিলে চলতি অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ লাখ ৮০ হাজার টন। অর্থাৎ আগামী বাজেটে ওএমএসের জন্য বাড়তি ১ লাখ ৩০ টন বরাদ্দ থাকছে।
সূত্র আরো জানায়, চলতি অর্থবছরে খাদ্য সংগ্রহের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা মোট ২৮ লাখ টনের সামান্য বেশি। এর পেছনে সরকারি ব্যয় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। পরবর্তী সময়ে খাদ্য সংকট এড়াতে আগামী বাজেটে অতিরিক্ত ৩ লাখ টনের বেশি খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করা হবে। সেজন্য বাড়তি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব থাকছে। দেশে বর্তমানে চাল ও গম মিলে মোট ১১ লাখ টনের ওপর খাদ্য মজুদ আছে। এ পরিমাণ মজুদ দিয়ে ৩ মাসের বেশি খাদ্য চাহিদা পূরণ করা যাবে। ইতিমধ্যে অভ্যন্তরীণ খাদ্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। ফলে মজুদ আরো বাড়বে।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের প্রধান কাজ হবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। করোনার কারণে যাদের আয়-রোজগার বন্ধ, তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দিতে হবে। সামনে আরো ভয়াবহ সময় আসতে পারে। ফলে সরকারকে এখন থেকেই প্রস্তুি নিতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে।কারণ করোনা পরিস্থিতি কতটা গভীর হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে খাদ্য সচিব ড. নাজমানারা খানুম জানান, আগামীতে খাদ্য নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। অর্থনীতিবিদরা বলছেন অভ্যন্তরীণ ধাক্কা সামলানো আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তাতে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।