বেড়েই চলেছে বৈদেশিক মুদ্রা মার্কিন ডলারের দাম। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ডলারের কেনা-বেচার মূল্য ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করলেও খোলাবাজারে এখন প্রতি ডলার ৮৮ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবুও মিলছে না ডলার। বেপরোয়া চোরাচালান, কালোবাজারি, রপ্তানি ও রেমিটেন্স বিপর্যয়ের কারণে ডলারের দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে আন্তঃব্যাংক দরে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সা। কিন্তু বেশকিছু ব্যাংক ডলার সংকটের কারণে পণ্য আমদানি দায় পরিশোধে ডলারের মূল্য নিচ্ছে ৮৭ টাকা পর্যন্ত। খুচরা পর্যায় দাম আরো বেশি। কোনো কোনো ব্যাংক খুচরা ডলার বিক্রি করছে ৮৮ থেকে ৮৮ দশমিক ৫০ পয়সা পর্যন্ত। যা এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ। ডলারের এ সঙ্কটকালে আমদানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখা ও ডলারের সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিদিন ডলার বিক্রি করছে। চলমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন জায়গায় লকডাউন ও সাধারণ ছুটির সময় বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে প্রায় ৪০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে রপ্তানি কমার সঙ্গে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক ধারা চলছে। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে ডলারের দাম। বিভিন্ন ব্যাংকের ডলার বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৮৮ টাকা পর্যন্ত, যা গত এক মাস আগেও ছিল ৮৬ টাকা। আমদানি দায় পরিশোধে বাড়তি মূল্যে কিনতে হচ্ছে ডলার। সংকটের কারণে কিছু কিছু ব্যাংককে খুচরা বাজার থেকে ডলার কিনছে। যদিও বাজারের চাহিদা মেটাতে ব্যাংকগুলোতে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতেও সংকট কমছে না। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে এখন রপ্তানি নেই বললেই চলে। পাশাপাশি রেমিট্যান্স প্রবাহও কমে গেছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোকে আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে হচ্ছে। কারণ যেসব আমদানি এলসি আগে করা হয়েছিল সেগুলো এখন নিষ্পত্তি করতে হচ্ছে। ফলে বাজারে ডলারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এমন অবস্থায় অনেক ব্যাংক আমদানি ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।
সূত্র জানায়, দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান মুদ্রা মার্কিন ডলারের দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা চরম অসহায় হয়ে পড়েছেন। ডলারের দাম বাড়ায় প্রবাসী ও কিছু রপ্তানিকারক খুশি হলেও বেশিরভাগ ব্যবসায়ীই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বাড়ছে পণ্যের দাম। জীবনযাত্রার খরচও বাড়ছে। গত কয়েক মাস ধরে চলা ডলার সংকট আরো বেড়েছে। ফলে প্রতিদিনই ডলারের দাম বাড়ছে। বিভিন্ন ব্যাংকের ডলার বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৮৮ টাকা পর্যন্ত। আমদানি দায় পরিশোধে ব্যাংকগুলোকে বাড়তি মূল্যে কিনতে হচ্ছে ডলার। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েই চলেছে। এক বছরের ব্যবধানে প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে ১ টাকা। ৩ জুন প্রতি ডলারের দাম নির্ধারিত ছিল ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সা। এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারিও প্রতি ডলারের দাম নির্ধারিত ছিল ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সা, যা এক বছর আগে ২০১৯ সালের একই দিনে ছিল ৮৪ টাকা ১৫ পয়সা, ২০১৮ সালে ৮২ টাকা ৯৬ পয়সা, ২০১৭ সালে ৭৯ টাকা ৩৭ পয়সা, ২০১৬ সালে ৭৮ টাকা ৪৫ পয়সা এবং ২০১৫ সালে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৭৭ টাকা ৮০ পয়সা। বর্তমানে খোলাবাজারে কেউ ডলার কিনতে গেলে তাকে প্রতি ডলারের বিনিময়ে গুনতে হচ্ছে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত। যদিও চলতি বছরের শুরুতে খোলাবাজারে ডলারের দাম ছিল ৮৫ থেকে ৮৬ টাকা।
সূত্র আরো জানায়, মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ডলারের দাম সামনে আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদ্যমান অবস্থায় কীভাবে ডলারের মূল্য ব্যবস্থাপনা করা যায় সে বিষয়ে সরকারি উদ্যোগ জরুরি। কারণ ডলারের তীব্র সংকটে ঘরে ঘরে এখন ডলার কালোবাজারি ও চোরাকারবারি তৈরি হয়েছে। ফলে অঘোষিতভাবেই ৮৮ থেকে ৯০ টাকায় ডলার বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া সোনা চোরচালানও ডলারের দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে সামনে ডলারের দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা বলা যাচ্ছে না।
এদিকে অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ডলারের দাম বাড়লে রপ্তানিকারক ও রেমিট্যান্স প্রেরণকারীরা লাভবান হলেও আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়। ফলে স্থানীয় বাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়। এ কারণে মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়। তাতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়। আর ডলারের দাম বাড়লে রপ্তানিকারকরা যদি তা কাজে লাগাতে না পারে, তাহলে তাতে ভালো না হয়ে ক্ষতি হয় বেশি।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ জানান, করোনায় সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। বর্তমান বাস্তবতায় ডলারের দাম ধরে রাখা কষ্টকর। আগামীতে ডলারের দাম আরো বাড়বে। আমদানিতে খরচ বাড়বে। ফলে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ারও আশঙ্কা রয়েছে। তবে সংকট কাটিয়ে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালে ডলারের দাম কমতে পারে।