গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় করোনা মহামারীর কারণে বাধাগ্রস্ত হওয়া চলমান ক্ষুদ্র ও বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। ওই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সারাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থার তথ্য সংগ্রহ করে বাস্তবায়নের হার দেখে মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। খুব শিগগিরই বাধাগ্রস্ত হওয়া উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে পরিকল্পনা কমিশনে চিঠি দেয়া হবে। মূলত প্রকল্প বাস্তবায়নের শতকরা হারের ওপর নির্ভর করেই ওসব প্রকল্পের মেয়াদ ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ১ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হবে। প্রাথমিকভাবে চলতি জুন মাসেই শেষ হয়ে যেসব প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ওসব প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে সরকার গুরুত্ব বুঝে প্রকল্পের সময় কম বেশি নির্ধারণ করবে। পাশাপাশি পূর্ত মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে বন্ধ থাকা সকল প্রকল্পের কাজ নতুন করে শুরুর নির্দেশ দিয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা প্রাদুর্ভাবে ঠিকাদাররা সরকারের নেয়া অর্ধশতাধিক প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য শ্রমিক না থাকা, একটানা দীর্ঘদিন সরকারি ছুটি থাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তদারকি না থাকায় ওসব প্রকল্পের কাজ ঠিকাদাররা বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দেয়। ফলে সরকারের নেয়া প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় অর্থের ছাড় না থাকার কারণেও অনেক প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে যেসব প্রকল্পের মেয়াদ একদম শেষ পর্যায়ে রয়েছে অর্থাৎ চলতি বছর জুনে শেষ হবে ওসব প্রকল্পে দ্বিগুণ শ্রমিক ও সময় ব্যয় করে ঠিকাদারদেরকে প্রকল্পের কাজ দ্রুত করতে বলা হয়েছে। তবে দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করতে গিয়ে যাতে কাজের মান সমুন্নত রাখা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, করেনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে শ্রমিক ও ঠিকাদারদের লোকজনের করোনায় মৃত্যু হওয়া, কাজের জন্য শ্রমিক না পাওয়া, মন্ত্রণালয় ও সরকারি অফিস বন্ধ থাকায় সময়মতো অর্থ ছাড় না হওয়া, নির্মাণ উপকরণের জোগান না থাকাসহ নানা কারণে সৃষ্ট সমস্যায় মাঠপর্যায়ে কর্মরত নির্বাহী প্রকৌশলীদের প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে দেয়া চিঠির প্রেক্ষিতে সরকার চলমান প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুধু করোনার কারণে যেসব প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল, এমন সব বৃহৎ প্রকল্পের কাজ চলতি অর্থবছরে সময়মতো শেষ করতে না পারার কারণে ও নির্ধারিত সময়ে মানসম্পন্ন কাজ করা সম্ভব না বিধায় ওসব প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। একই সাথে সরকারের দেয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলমান ক্ষুদ্র ও বৃহৎ সকল উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চালু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, সরকারের বৃহৎ স্বার্থে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে পিসিআর ল্যাবরেটরির অবকাঠামো নির্মাণ, আইসোলেশন ইউনিট, কোয়ারেন্টাইন সেন্টার ও করোনা ইউনিট স্থাপন এবং স্থাপনাগুলোতে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতের কাজ এর মধ্যেও চালু রাখা হয়েছে। মূলত করোনা মহামারীর বর্তমান সময়ে আরো কতোদিন অব্যাহত থাকবে তার কোন নিশ্চয়তা না থাকায় সরকারের পক্ষ থেকে বাধ্য হয়ে সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শ্রমিকদের কাজ করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে আগের দেয়া প্রকল্প এলাকায় প্রকল্প পরিচালক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ থাকা বাধ্যতামূলক করা নিয়ম প্রতিপালনে কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। বর্তমানে সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নেয়া মেগা প্রকল্পসহ বৃহৎ অনেক প্রকল্পই গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু করোনাকালে শুধুমাত্র শ্রমিক সঙ্কট থাকায় কোন প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু সরকার কোনো প্রকল্পের কাজই বন্ধ রাখতে চাচ্ছে না। বরং করোনার মধ্যেই সরকারের টার্গেট পূরণে ও প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রকল্পের কাজ চালু রাখার ওপর জোর দেয়া হবে। তবে শর্ত রয়েছে কাজ করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যেন কোন শ্রমিক, ঠিকাদার কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী যেন মৃত্যুবরণ না করে সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।
এদিকে করোনা প্রাদুর্ভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে ৪৩৭ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে র্যাব সদর দফতর নির্মাণ প্রকল্প, ১৬৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামে মুসলিম ইনস্টিটিউট নির্মাণ প্রকল্প, মিরপুরে ২৮৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পসহ বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় নির্মাণ প্রকল্প, গণপূর্ত নগর বিভাগের (সিটি ডিভিশন) অধীনে চেয়ারম্যানের বাড়ি নির্মাণ প্রকল্প, গণপূর্ত নগর বিভাগের অধীনে স্যুট ও ডরমিটরি নির্মাণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম হিলট্র্যাক কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প, র্যাব কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প, নগর বিভাগের অধীনে প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প, সচিবালয়ে ২০তলা ভবন নির্মাণ প্রকল্প, সিলেট গণপূর্ত বিভাগে জেলা হাসপাতাল প্রকল্প, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প, আজিমপুরে সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য ২০ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প, সচিবালয়ে নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগে ২০ তলা ভবন নির্মাণ প্রকল্প, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভবন নির্মাণ প্রকল্প কাজ বন্ধ রয়েছে।