সারা দেশে নদীভাঙন একটি বড় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বর্ষা ঋতুর শুরুতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যে এর ভয়াবহতা বাড়বে তা আন্দাজ করাই যায়। নদীভাঙনের কারণে দেশে প্রতি বছর অগণিত মানুষ গৃহহীন হয়। সরকারের ট্রাস্টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী বছরের মধ্যে দেশের কয়েকটি জেলার প্রায় ২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এতে হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারাতে পারে। কাজেই তাৎক্ষণিকভাবে এ সমস্যার সমাধানে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন করা না হলে অনেক মানুষকে দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হবে। দেশে সবচেয়ে বেশি ভাঙনের মুখে পড়তে পারে পদ্মা ও যমুনা পারের কয়েকটি জেলার মানুষ। বস্তুত সড়ক, দোকানপাট, বসতবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এসবের আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি বিভিন্ন গবেষণায় উল্লেখ করা হয়। কিন্তু কোনো জনপদ নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার ফলে সেই স্থানের ইতিহাস-ঐতিহ্যের যে ক্ষতি হয়, তা কি পূরণ করা সম্ভব? সিইজিআইএস’র পূর্বাভাসে যেসব তথ্য উঠে এসেছে, তার আলোকে ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হলে আশা করা যায়, এতে ক্ষতির পরিমাণ নূন্যতম পর্যায়ে রাখা সম্ভব হবে।
দেশে নদীভাঙনের তীব্রতা ও সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি ঝুঁকির ওপর ভিত্তি করে মানুষকে সতর্ক করার কাজ অব্যাহত রয়েছে। এসব কাজের পরিধি আরও বাড়তে হবে। বিগত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পূর্বাভাস আমলে নিয়ে ভাঙনকবলিত বিভিন্ন স্থান রক্ষায় সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে, মানুষ এটাই প্রত্যাশা করে। দেশের কোন কোন এলাকায় নদীভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে এ বিষয়ে নানারকম গবেষণা অব্যাহত থাকলেও গবেষণার পরিধি আরও বাড়াতে হবে। যখনই এ বিষয়ে কোনো পূর্বাভাস প্রদান করা হবে, সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষা থেকে অতীতে দেশের যে বিস্তীর্ণ এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে, সেসব তথ্য জানা যায়। কাজেই অতীতের ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে আগামীতে যাতে এমন ক্ষতি আর না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার। বড় বড় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পূর্বাভাস অনুযায়ী ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে যদি দেরি করা হয়, তাহলে নদীভাঙনের ছোট ছোট ঘটনা একসময় অনেক বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে। কাজেই নদীভাঙনবিষয়ক ছোট-বড় সব সমস্যার তথ্য যাতে যথাসময় কর্তৃপক্ষের নজরে আসে, এ বিষয়েও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার।