সর্বগ্রাসী মহামারী করোনার আঘাতে বিশ^ব্যাপী অর্থনৈতিক দুরাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। তার জের ধরে বিদেশে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাপক হারে কর্মহীন, চাকরিচ্যুত এবং ছাঁটাইয়ের শিকার হচ্ছে। ফলে দেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথ প্রবাসী আয়েও বড় ধরনের ধাক্কা লাগার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের প্রবাসী আয় কমবে ২২ শতাংশ। আর নীতিনির্ধারণ পর্যায় থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে করোনার কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি কর্মী কাজ হারিয়ে ফেরত আসতে পারে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী লকডাউনের কারণে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রায় ১৫ হাজার কর্মী বিদেশ যাওয়ার কথা থাকলেও তারা যেতে পারেনি। ফলে ওসব কর্মী দারুণ শঙ্কা ও অনিশ্চয়তা দিন কাটাচ্ছেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত মার্চে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল, যা গত বছরের মার্চের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। এপ্রিলে রেমিটেন্স আরো কমে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলারে আসে, তাও গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ কম। বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১০ জুন পর্যন্ত এক হাজার ৭০৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছে প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পুরো সময়ের (জুলাই-জুন) চেয়েও ৪ শতাংশ বেশি। আর গত অর্থবছরে ১৬ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল।
সূত্র জানায়, প্রবাসী আয়ের অংক এবং প্রবাসীর সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য সৌদি আরব অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ওই সৌদি আরবই এখন ব্যাপক হারে বিদেশি কর্মী ছাঁটাই করছে। শুধু সৌদি নয়, মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশের চিত্র একই। তাছাড়া ইউরোপ-আমেরিকায় চিত্রও অভিন্ন। তাছাড়া করোনার এ সময় কোনো শ্রমিক বিদেশে যেতে পারছে না। বরং দেশে ফেরত আসসে। তেলের মূল্যপতন ও করোনার কারণে বিদেশে যেসব প্রবাসী আছে, তাদেরও মাথাপিছু আয় কমে যাচ্ছে। তাছাড়া কেউ সঞ্চয় করতে পারছে না। ফলে নতুন অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে বড় ধাক্কা লাগার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। করোনা আর তেলের মূল্যপতন মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতিকে তছনছ করে দিয়েছে। তার একটা নেতিবাচক প্রভাব অভিবাসীদের ওপর পড়ছে। তাছাড়া ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোও করোনায় বিধ্বস্ত। ফলে নতুন অর্থবছরে রেমিটেন্সে বড় ধরনের আঘাত আসতে পারে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে বিশ্বের ১৭৪টি দেশে এক কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ কর্মরত। তার বড় একটি অংশ মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছে। ওই অঞ্চল থেকে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ রেমিটেন্স আসে। তার মধ্যে আবার বেশির ভাগই সৌদি আরব থেকে আসে। গত মে মাসেও প্রবাসী আয় আহরণের শীর্ষ পাঁচটি উৎস দেশ হল- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত ও যুক্তরাজ্য।
এদিকে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়া এবং চলমান অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণে আগামী তিন-পাঁচ বছরের মধ্যে সৌদি আরব থেকে ১০ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসীকে দেশে ফিরে আসতে হতে পারে। দূতাবাসের আশঙ্কা, ২০৩০ সালের মধ্যে নিজ দেশের নাগরিকদের মাধ্যমে ৭০ শতাংশ বিদেশি কর্মী প্রতিস্থাপনের নীতিও এর আরেকটি কারণ হতে পারে। শ্রমিক ফেরত আসার আশঙ্কার বিষয়টি উল্লেখ করে গত মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠিও পাঠিয়েছে দূতাবাস। সম্প্রতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দেশে ফিরতে আগ্রহী প্রবাসী শ্রমিকদের ফেরত আনার ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব। উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ফোনালাপে বাংলাদেশ সৌদি আরব থেকে শ্রমিক ফিরিয়ে আনতে সম্মতি দিয়েছে। আর বাংলাদেশের অনুরোধে পর্যায়ক্রমে এ শ্রমিকদের ফেরত পাঠাতে সম্মত হয়েছে সৌদি আরব।