মালদ্বীপের রাজধানী মালে’র আইজিএইচ হাসপাতালের আইসিও-তে কাতরাচ্ছেন সরাইলের শাহাদ আলী (৩৫)। এর আগে তার আকুতি ছিল, ‘আমি বাঁচতে চাই। আমাকে বাঁচান। আমি স্ত্রী ও সন্তানকে দেখতে চাই।’ সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের আইরল গ্রামের ছায়েব আলীর ছেলে শাহাদ অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। নিজ দেশে শ্রমবিক্রি ও রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। সুখের আশায় বিদেশ (মালদ্বীপ) পাড়ি দিয়েছিলেন। সেখানে মালিকের নারিকেল গাছ থেকে পড়ে শরীরের হাড় ভেঙ্গে এখন গুরূতর আহত শাহাদ আলী। শাহাদের স্ত্রী নূরূন্নাহার (৩০) ও একমাত্র সন্তান বুশরার (১৪) খাওয়া দাওয়া বন্ধ। তাদের বুকফাটা আর্তনাদে ভারী হচ্ছে আইরল গ্রামের আকাশ বাতাস। তাদের শান্তনা দেওয়ার সাধ্য কারো নেই।
শাহাদের পারিবারিক সূত্র জানায়, খুবই দরিদ্র ঘরের সন্তান শাহাদ। বাংলাদেশে থাকতে শ্রমবিক্রি করেই সংসার চালাত। মাঝে মধ্যে রিকশাও চালাতেন। স্ত্রী সন্তান নিয়ে কোন রকমে কষ্টেশিষ্টে চলছিলেন শাহাদ। একমাত্র কন্যা শিশু বুশরা স্থানীয় একটি মাদরাসায় পড়ছে। স্ত্রী সন্তান ও সংসারের সুখের কথা চিন্তা করে বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শাহাদ। বিশাল অর্থের যোগান খুবই কঠিন। নিজের এক শতক ভিটেবাড়ি বিক্রি করে দেন। বাকি টাকা চড়া সুদে নেন। মোট ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ করে ৩ বছর আগে বৈধভাবেই পাড়ি দেন মালদ্বীপে। দালালদের কথার সাথে কাজের মিল নেই। চরম কষ্টে পড়ে যান শাহাদ। সুখের স্বপ্ন খোঁচট খায়। খুবই কষ্টের কাজ। তারপরও সময়মত টাকা পান না। নিজের চলা ও দেশে রেখে যাওয়া স্ত্রী সন্তানের মুখে আহার দিতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে চার মাস পর অবৈধ হয়ে যান তিনি। সেই দেশের এক মালিকের কাছে আশ্রয় নেন। মালিকের তত্বাবধানে থেকে নদীতে মাছ ধরার কাজ শুরূ করেন। কোন রকমে চলতে থাকে শাহাদের দিনকাল। কে জানত? দরিদ্র শাহাদের ভাগ্যে এতবড় দূর্যোগ লিখা আছে। গত ২৭ মে মালিকের নারিকেল পাড়তে গাছে ওঠেন শাহাদ। গাছটি ছিল মোটামুটি উঁচু। এক সময় শাহাদ গাছের আগা থেকে নীচে পড়ে যান। হাত পা ভেঙ্গে যায়। সেই সাথে শরীরের বিভিন্ন জায়গার হাড় ভাঙ্গে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় শাহাদকে মালে’র একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই হাসপাতালের আইসিও-তে যাওয়ার আগে শাহাদ বাঁচার আকুতি জানিয়েছে। বর্তমানে আইসিও-তে মৃত্যুর সাথে লড়ছে শাহাদ। শাহাদ এখন একেবারেই অসহায়। সেখানে তার মালিক বা সরকার চিকিৎসা না করলে মৃত্যুও হতে পারে। সরজমিনে শাহাদের গ্রামের বাড়ি আইরলে গিয়ে দেখা ছোট একটি দু’চালা টিনের ঘরে কোন রকমে কন্যা শিশুকে নিয়ে বসবাস করছেন নূরূন্নাহার। অর্থাভাবে কষ্টে দিন পার করছে তার পরিবার। সেখানে আহার যোগার করাই তাদের সাধ্যের বাহিরে। সেখানে শাহাদের চিকিৎসা বা সেই দেশ থেকে দেশে আনা পরিবারের পক্ষে দুটোই অসম্ভব। আল্লাহ ছাড়া তাদের আর কোন ভরসা নেই। নূরূন্নাহার বেগম হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, জায়গা বিক্রি, সুদ ও ঋণের টাকায় একটু সুখের জন্য বিদেশ গিয়েছিলেন স্বামী। সুখ তো পেলামই না। এখন চিরদিনের জন্য স্বামীকে হারাতে বসেছি। গত ৫-৬ মাস ধরে টাকা দিতে পারছেন না। মেয়েটাকে নিয়ে অর্ধাহার অনাহারে আছি। এখন আর কিছু চাই না। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ দয়া করে আমার স্বামীকে দেশে এনে দিন। আমি আপনাদের কাছে স্বামী ভিক্ষা চাই। আমাদেরকে এক সাথে মরতে দিন।