দেশের প্রধান নদ-নদীর পানি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীসমূহের পানি সমতলেই স্থিতিশীল রয়েছে। কিন্তু গঙ্গা পদ্মা এবং দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদী আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি বাড়ছে। উজানের বৃষ্টির কারণে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, উত্তরের ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার এবং মেঘনার অবাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি দ্রুত বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া পদ্মা নদীর পানিও এই সময়ে দ্রুত বেড়ে যাওয়া পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টির পরিমাণ আবার বাড়বে। তার সঙ্গে উজানের পানি যোগ হয়ে দ্রুত বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং আবহাওয়া অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত কয়েদিন ধরে দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। তবে উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে দেশের প্রধান নদীগুলোর পানি দ্রুতই বাড়ছে। উজান থেকে নেমে আসার পানির কারণে কয়েকদিনের মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া এই সময়ের মধ্যে পদ্মা নদীর পানিও বাড়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এবার বর্ষা শুরুর আগেই বৃষ্টিপাত বেশি ছিল। প্রাক বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। যে কারণে সময়ের আগেই নদীগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি বেড়ে গেছে। তারপর গত কিছুদিন দেশের সীমান্তবর্তী ভারতীয় রাজ্যগুলোতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে উজানের পানি দ্রুত নেমে আসার কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ইতিমধ্যে ওসব জেলার নি¤œাঞ্চল ও চর এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
সূত্র জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষণাধীন ১০১টি পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে ৫২টি স্টেশনে পানি বাড়ছে, কমছে ৪৩টিতে এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬টি স্টেশনের পানি। দেশের ভেতরে বর্ষণ কমে এলেও উজানের পানির চাপে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যদিও গত কয়েকদিনে দেশের ভেতরে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অনেক কমে এসেছে। আর বৃষ্টি কমে যাওয়ায় তাপমাত্রা বেশি না হলেও মেঘ আর জলীয় বাষ্পের কারণে দেশজুড়ে ভ্যাপ্সা গরম অনুভূত বাড়ছে। তবে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে বৃষ্টিপাত কমলেও আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বর্ষণ আবারো বাড়বে। সেই সঙ্গে যোগ হবে উজানের নেমে আসা পানি। ফলে নদীর পানি দ্রুত বেড়ে যাবে। ওই কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যায় নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হতে পারে।
সূত্র আরো জানায়, ইতিমধ্যে ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার চর অঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা দোয়ানী তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারেজ দোয়ানি পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। এমন অবস্থায় ব্যারাজ রক্ষার্থে ৪৪টি জলকপাট খুলে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। মূলত গত কয়েক দিন ধরে ভারি বর্ষণ আর উজানের ঢলের কারণেই তিস্তা নদীর চর এলাকাগুলোতে লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এবং নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন করে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন।
এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ু ভারতের উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে অসম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। ফলে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। আর দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর সমূহের জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, পাবনা, বগুড়া টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়খালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্বদিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিমি বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। ওসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে বন্যা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া জানান, নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে এই মাসেই উত্তরাঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টির পরিমাণ আবার বাড়বে। তার সঙ্গে উজানের পানি যোগ হয়ে দ্রুত বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।