দিব্যা ভারতী ক্ষণিকের তারা হয়ে এসেছিলেন বলিউডের আকাশে। নব্বই দশকে মাত্র তিন বছরের ক্যারিয়ারে কোটি কোটি ভক্তের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। ‘দিওয়ানা’ সিনেমায় অভিনয় করে সেরা নবাগতা হিসেবে জিতেছিলেন ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড। এত অল্প সময়ে এত খ্যাতি অনেকের কাছেই ছিলো স্বপ্নের মতো! কিন্তু মাত্র ১৯ বছর বয়সেই এই অভিনেত্রীর জীবন প্রদীপ নিভে যায়। ১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল দিব্যা মারা যান। তার মৃত্যু বলিউডে আজও এক রহস্য! এটি কি নিছক দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত হত্যা? জানা যায়, দিব্যার মৃত্যুর প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন ডিজাইনার নীতা লুলা ও তার স্বামী ডা. শ্যাম লুলা। ওই দিন দিব্যার বাড়িতে এসেছিলেন তারা। সে সময় দিব্যার স্বামী প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা বাড়িতে ছিলেন না। বিষণœ দিব্যা সেদিন মদ পান করেছিলেন। লুলা দম্পতির সঙ্গে কথা বলতে বলতে তিনি রান্না ঘরে যান, এরপর হল রুমে ফিরে আসেন। এরপর টিভি চালু করে ব্যালকনির উপরের অংশে বসেন। তিনি প্রায়ই সেখানে বসতেন। কিন্তু সেদিন দুর্ভাগ্যক্রমে পিছলে নিচে পড়ে যান। তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু দিব্যা ভক্তরা একে দুর্ঘটনা মানতে নারাজ। তাদের মতে এটি পরিকল্পিত হত্যা। এর কিছু কারণও আছে। ২০১১ সালে ‘হিন্দুস্তান টাইমস’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেই দিব্যা ভারতীর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। ‘দিব্যাকে গুলি করে মারা হয়েছে’Ñ হঠাৎ এই খবরে অনেকেই হতবাক হয়ে পড়েন! বলা হয়েছিল, আন্ডারওয়ার্ল্ডের যোগসূত্র রয়েছে এই ঘটনায়। কিন্তু খবরটি গুজব জানার কয়েক ঘণ্টা পরেই নতুন করে জানা যায় সত্যি সত্যি দিব্যা ভারতী আর এই পৃথিবীতে নেই! সেই সময় দিব্যার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু ‘স্টারডাস্ট’কে বলেন, ‘মৃত্যুর আগে দিব্যা অনেক বিষণ্ণ ছিল। মৃত্যুর আগের রাতে পার্টি থেকে কিছুটা মদ্যপ অবস্থায় ফেরেন এবং এরপর সাজিদের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। কারণ বাড়িতে তখন সাজিদ ছিলেন না। দিব্যা ফোনে তাকে বলেছিলেন, ‘যদি দশ মিনিটের মধ্যে না ফেরো তাহলে আমাকে আর দেখতে পাবে না।’ কিন্তু সাজিদ স্ত্রীর কথার গুরুত্ব দেননি।’ ‘স্টারডাস্ট’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিয়ে নিয়ে দিব্যা ও সাজিদের মধ্যে সমস্যা চলছিল। আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সাজিদের মেলামেশা দিব্যা পছন্দ করেননি। আবার অনেকে বলেন, বিয়ের বিষয়টি আর গোপন করতে চাইছিলেন না এই অভিনেত্রী। অথচ শাকিব খানের মতো সাজিদ চাইছিলেন না বিয়ের খবর এখনই সবাই জানুক। আবার এ-ও শোনা যায়, প্রযোজক ভিকি ও নায়ক কমল সাদানার সঙ্গে দিব্যার ঘনিষ্ঠতা মেনে নিতে পারছিলেন না সাজিদ। যদিও এক সাক্ষাৎকারে দিব্যার বাবা ওম প্রকাশ ভারতী জানিয়েছিলেন, ‘আমি জানি না আধ ঘণ্টায় মানুষ কতটা মদ খেতে পারে? তবে বিষণœ হওয়ার মতো মেয়ে দিব্যা ছিলো না। সে ব্যালকনির রেলিংয়ে বসেছিল, ভারসাম্য হারিয়ে নিচে পড়ে যায়। অন্যদিন নিচে গাড়ি থাকত কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেদিন ছিলো না। সে সরাসরি মাটিতে গিয়ে পড়ে এবং মারা যায়। এই সত্য আমাদের মেনে নিতে হবে।’ কিন্তু এর জল গড়ায় বহুদূর। বিশেষ করে সাজিদের কিছু মন্তব্য, দিব্যাকে বিয়ের কথা অস্বীকার ভক্তদের মনে সন্দেহ বাড়িয়ে দেয়। এমনকি দিব্যার শেষকৃত্য মুসলিম নাকি হিন্দু রীতিতে হবে এ নিয়েও অনেক জল ঘোলা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত হিন্দু রীতিতেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এরপর অনেকদিন দিব্যার মৃত্যুর তদন্ত হয়। ১৯৯৮ সালে মুম্বাই পুলিশ হঠাৎ করেই দিব্যার মৃত্যু ‘দুর্ঘটনাজনিত’ বলে ফাইলটি বন্ধ করে দেয়।