বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বার বার অনুরোধেও করোনায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী বিমানবন্দর পরিচালনা করার ন্যূনতম সুবিধাদি নিশ্চিত করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। অভিযোগ উঠেছে, বিমানবন্দরগুলো চালুর ব্যাপারে বেবিচক অনুরোধ আমলেই নেয়া হচ্ছে না। ফলে দুই শিফটে ৬ জন ডাক্তার, ১২ জন স্বাস্থ্যকর্মী আর স্ক্রিনিং সুবিধার অভাবে চালু করা যাচ্ছে না কক্সবাজার, বরিশাল ও রাজশাহী বিমানবন্দর। এ অবস্থায় কবেনাগাদ ওই তিন বিমানবন্দর চালু করা সম্ভব সে বিষয়ে বেবিচক নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। মূলত গুটিকয়েক ডাক্তার, স্বাস্থ্যকমী ও স্ক্রিনিং সুবিধা দেয়া হলেই বিমানবন্দরগুলো চালু করা সম্ভব হতো। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, সৈয়দপুর এবং যশোর রুটের ফ্লাইট চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু দেশের ভেতরে সবচেয়ে জনপ্রিয় রুট কক্সবাজার চালু করা যাচ্ছে না। তাছাড়া বিপুল চাহিদা ও প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও দেশের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিমানবন্দর এখনো সচল করা সম্ভব হয়নি। বেবিচক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আইকাওয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ফ্লাইট চলাচল শুরু করতে হলে বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা ও চিকিৎসক থাকতে হবে। যাতে কোনো রোগী বিমানে অসুস্থ বোধ করলে বিমানবন্দরে নেমে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে পারে। যেসব বিমানবন্দর চিকিৎসক ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে সেখানেই ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কক্সবাজার থেকে চিকিৎসকের বিষয়ে কোন আপডেট জানানো হয়নি। এমনকি স্বাস্থ্যবিভাগ থেকেও কোনো নির্দেশনা কক্সবাজারে পৌঁছেনি। রাজশাহী ও বরিশাল বিমানবন্দরের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। মূলত ফ্লাইট চলাচলে আইকাও যেসব পূর্বশর্ত দিয়েছে- সেগুলো পূরণ করতে না পারায় এখনো কক্সবাজার বিমানবন্দরকে অনুমতি দেয়া হয়নি। কারণ তা একটা ভাইটাল ইস্যু। উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। ইচ্ছে করলে স্বল্পসময়ের মধ্যেই স্বাস্থ্য বিভাগ এ সমস্যার সমাধান দিতে পারে। বিমানবন্দরগুলোতে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দুই শিফটে মাত্র ৬ জন ডাক্তার ও ১২ জন স্বাস্থ্যকর্মী দরকার। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলেই তিনটি বিমানবন্দরের এমন বেহাল অবস্থা।
সূত্র জানায়, করোনা তান্ডবে দেশ-বিদেশে যখন বিমানবন্দরে যাত্রীবাহী কমার্শিয়াল ফ্লাইট বন্ধ ছিল তখনও কক্সবাজারে দুটি বিশেষ ফ্লাইট অবতরণ করেছে। ওই সঙ্গে নিয়মিত চলছে কার্গো ফ্লাইট। সেজন্য বিভিন্ন সময়ে ওই বিমানবন্দরে বিচ্ছিন্নভাবে চিকিৎসক রাখা হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থাকার কারণে দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকদের কক্সবাজারে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে। আর তারা আকাশপথেই চলাচল করেন। তবে বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরে কোনো চিকিৎসক নেই। জেলার সিভিল সার্জন ৫ জন চিকিৎসককে বিমানবন্দরে রোস্টারের মাধ্যমে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এমনকি তাদের বিমানবন্দরের আইডি কার্ডও হয়। কাগজ-কলমে ওই বিমানবন্দরে এখনো পাঁচজন চিকিৎসক রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কক্সবাজার বিমানবন্দরে চিকিৎসকের সংখ্যা শূন্য। আর সঙ্কটের কারণে বিমানবন্দরে চিকিৎসক না দিতে পারার কথা স্বীকার করে কক্সবাজার জেলার সিভিল সার্জন জানান, বর্তমানে বিভিন্ন কোভিড হাসপাতালে প্রচুর ডাক্তার জোগান দিতে হচ্ছে। সেজন্য বিমানবন্দরের জন্য ডাক্তার ম্যানেজ করা কঠিন। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, দেশে করোনা তান্ডবের পিক আওয়ারেও দেশের অপর ৩টি অভ্যন্তরীণ বিমানববন্দর গত ১ জুন থেকে খুলে দেয়া হয়েছে। ওসব রুটে প্রতিদিনই যাত্রী বাড়ছে। ফলে বিমানবন্দরগুলো আগের চেনা রূপ ফিরে পাচ্ছে। কিন্তু অভীন্তরীণ রুটে সবচেয়ে আকর্ষণীয় রুট কক্সবাজার বিমানবন্দরই চালু করা যাচ্ছে না।
এদিকে কক্সবাজার বিমানবন্দর চালু না হওয়ায় এর ধাক্কায় দেউলিয়াত্বের শঙ্কায় রয়েছে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন ব্যবসা। সেখানে প্রতিবছর দেশী-বিদেশী মিলিয়ে অর্ধকোটি পর্যটক আসে। তাদের যাতায়াতে প্রতিদিন দূরপাল্লার অনেক বাস ও ১০-১২টি ফ্লাইট যাতায়াত করে। পর্যটক সেবায় রয়েছে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ও কটেজ এবং কয়েক শ’ রেস্টুরেন্ট। ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকার কারণে পর্যটশরা কক্সবাজারে আসছে না। সেজন্য কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ও ধস নেমেছে। একই অবস্থা রাজশাহী ও বরিশাল বিমানবন্দরের। শুধু ক’জন ডাক্তার ও নার্স পোস্টিং দেয়া হলেই সেগুলো চালু করা সম্ভব।
অন্যদিকে বেবিচক সংশ্লিষ্টদের মতে, তিনটি বিমানবন্দর চালুর সবই স্বাস্থ্য বিভাগের ওপর নির্ভর করছে। স্বাস্থ্য সুবিধা ছিল বলে করোনার মাঝে চট্টগ্রাম, সিলেট ও সৈয়দপুর বিমানবন্দর চালু করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু আইকাও এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী ন্যূনতম স্বাস্থ্য সুবিধা না থাকায় তিন বিমানবন্দর চালু করা যাচ্ছে না। বেবিচক থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া সত্ত্বেও শুধু স্বাস্থ্য বিভাগের সাড়া না পাওয়ায় সব থমকে আছে। তাতে শত শত কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও দেশের এয়ারলাইন্সগুলো।
এ প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান জানাস, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও আইকাও-এর নির্দেশনা অনুযায়ী বর্তমানে বিমানবন্দর অপারেট করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্ব বিমানবন্দরগুলোতে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সেজন্য প্রতি শিফটে একজন করে দুই শিফটে ৩ বিমানবন্দরে ৬ জন ডাক্তার, ১২ জন নার্স হলেই চলে। আর স্ক্রিনিং সিস্টেম থাকতে হয় যেটা হ্যান্ড থার্মোমিটার দিয়েই যাত্রীর তাপমাত্রা মাপা যায়। থার্মাল স্ক্যানার হলে ভাল হয়। না থাকলে হ্যান্ড ইকুইপমেন্ট দিয়েও চলে। বেবিচক থেকে থার্মাল স্ক্যানারসহ সব ধরনের সুিবধাদি অন্যত্র দেয়া হয়েছে। ওই তিনটি বিমানবন্দরেও দিতে প্রস্তুত। কিন্তুস্বাস্থ্য বিভাগকেই কাজটা করতে হবে। স্থানীয় জেলা সিভিল সার্জনও করতে পারেন। বেবিচক এ বিষয়ে চিঠি পাঠালেও এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।