চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রকল্প বাস্তবায়নে তিন ধরনের অগ্রাধিকার ঠিক করেছে সরকার। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোকে উচ্চ, তার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পকে মধ্যম এবং কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পকে নিম্ন অগ্রাধিকারের প্রকল্প হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। মূলত সরকার করোনার কারণে উন্নয়ন ব্যয়ে সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে। সেজন্য এডিপির নিম্ন অগ্রাধিকারের প্রকল্পে আপাতত অর্থ ছাড় স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার এডিপি নিয়েছে। তার মধ্যে সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে দেবে এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। আর বৈদেশিক সহায়তা ও অন্যান্য উৎস থেকে বাকি ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ লাখ টাকা আসবে। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে এক হাজার ৬০৬টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে এবার বাজেটের আগে থেকেই এডিপির প্রকল্পের অগ্রাধিকার নির্ধারণের কাজ শুরু করা হয়। প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের কাছে তাদের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের মধ্যে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী মন্ত্রণালয়গুলো প্রকল্প বাছাই করেছে। যেসব প্রকল্প শেষ হতে সামান্য বাকি রয়েছে এবং যেসব প্রকল্পের সঙ্গে কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়নের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে, সেগুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, সরকারের সীমিত সম্পদের ব্যয় সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে চলতি অর্থবছরের এডিপিভুক্ত প্রকল্পগুলোর উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর উচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে। মধ্যম অগ্রাধিকার চিহ্নিত প্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রকল্পের যেসব খাতে অর্থ ব্যবহার অবশ্যম্ভাবী বলে বিবেচিত হবে মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা নিজস্ব বিবেচনায় সেসব ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় করবে। যতটুকু ব্যয় পরিহার করা সম্ভব অবশ্যই তা করতে হবে। আর নিম্ন অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত প্রকল্পগুলোর অর্থ ছাড় আপাতত স্থগিত থাকবে। তবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলো এ সিদ্ধান্তের বাইরে থাকবে।
সূত্র আরো জানায়, সাধারণত অর্থবছরের শেষ তিন মাসে এডিপি বাস্তবায়ন ও অর্থ ছাড়ের গতি বাড়ে। কিন্তু গত ২০২৯-২০ অর্থবছরের শেষ ত্রৈমাসিকেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ওই কারণে অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ রেখে করোনা মোকাবিলায় সব মনোযোগ ছিল। ফলে গত অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নও অন্যান্য সময়ের তুলনায় কম হয়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, মন্ত্রণালয়গুলোর মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে অগ্রাধিকার নির্ধারণ হয়েছে। মন্ত্রণালয় যে প্রকল্পকে যতো গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছে, ততটা অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। বাধ্য হয়েই এমন বাছাই করতে হচ্ছে। কারণ করোনা ভাইরাসের কারণে নতুন ধরনের বাস্তবতা অস্বীকার করার উপায় নেই। অনেক প্রকল্পের সঙ্গে বিদেশি কর্মী ও বিশেষজ্ঞরা সম্পৃক্ত। তাদের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। তবে এই অগ্রাধিকার চিরদিনের জন্য নয়। কারণ প্রত্যেকটি প্রকল্পই সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।