ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি অফিসারের ব্যপক অনিয়মের কারণে ভূট্রার কাক্সিক্ষত ফলন হয়নি বলে চাষীদের অভিযোগ
কৃষি অফিসারের ব্যপক অনিয়মের কারণে সরকারের বরাদ্দ মোতাবেক সার ও কৃষি সামগ্রী প্রদান না করায় কাক্সিক্ষত ফলন হয়নি বলে ভুট্রা চাষীদের এমন অভিযোগ উঠেছে।
ন্যাশনাল এগ্রিক্যালচার ট্যাকনোলোজি প্রজেক্ট (ঘঅঞচ) ও রাজস্ব প্রকল্পের আওতায় ভূট্রা প্রদর্শনীর মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সংগে কথা বলে সার বিভাজনের তথ্য জানাগেছে। এতে সরকারী বরাদ্দ ও সার বিতরনে ব্যপক গড়মিল পাওয়া গেছে। মাঠ থেকে ভুট্রা উঠার উপযোগী হলেও কোন কৃষকই এখনো পাননি সাইনবোর্ড।
জানাগেছে, মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত খরিপ ঋতু। এই খরিপ ঋতুতে বালিয়াডাঙ্গী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ৬টি এনএটিপি'র ভুট্রা প্রদর্শনী বরাদ্দ পায়। ৬টি প্রদর্শনী ৬ জন কৃষককে বরাদ্দ দেওয়া হয়। তারা হলেন মাছখুরিয়া ব্লকের জাউনিয়া গ্রামের ফরিদ হোসেনের ছেলে বাবুল হক একই গ্রামের তসির উদ্দীনের ছেলে আবদুস সালাম ও কবির হোসেনের ছেলে ফরিদ হোসেন, বেলসারা গ্রামের আমিনুল ইসলামের মেয়ে মনোয়ারা বেগম, ঝুলিবস্তী গ্রামের ফরমতদ্দীনের ছেলে আনিসুর রহমান ও একই গ্রামের নাসিরউদ্দীনের ছেলে আবদুর রশিদ।
কৃষি অধিদপ্তর সুত্রে জানাগেছে, এনএটিপি'র প্রতিটি ভুট্রা প্রদর্শনীর জন্য বরাদ্দ ছিল ভুট্রাবীজ ৩ কেজি, ইউরিয়া সার ৫০ কেজি, টিএসপি ২৭ কেজি, এমওপি ২০ কেজি, জীপসাম ১৫ কেজি, জিং সালফেট দেড় কেজি ও বোরন আধা কেজি।
কিন্তু মাঠ পর্যায়ের এনএটিপি'র ভুট্রা প্রদর্শনী প্রাপ্ত কৃষকদের সংগে কথা বলে জানাগেছে, তাঁরা খরিপ ভুট্রা প্রদর্শনীর জন্য ভুট্রা পেয়েছেন ২ কেজি করে। সার পেয়েছেন-ইউরিয়া ২৫, টিএসপি-২০,এমওপি-১৫, জীপসাম ১০ কেজি ও বোরন-এক কেজি মোট ৭১ কেজি।
যেখানে পাওয়ার কথা ১১৪ কেজি। বাকী সারের টাকা আত্মসাৎ করেছেন কৃষি কর্মকর্তা শাফীয়ার রহমান বলে জানাগেছে।
এনএটিপি'র প্রদর্শনী প্রাপ্ত কৃষক আবদুর রশিদ জানান, আমাকে যে সার ও বীজ দেওয়া হয়েছে তাতে আশানুরূপ ফলন হয়নি। অফিস হতে ভুট্রাবীজ দেওয়া হয়েছে ২ কেজি, ইউরিয়া ২৫, টিএসপি ২০, এমওপি ১৫, জীপসাম ১০কেজি ও বোরন এক কেজি।
কৃষক মনোয়ারা বেগমের স্বামী সুলতান আলী জানান, খাতায় স্বাক্ষর নেওয়ার সময় সারের পরিমান লেখা থাকেনা। ফাঁকা খাতায় স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছিল। এখন বুঝলাম কৃষি কর্মকর্তা সার কম দেওয়ার কারণে আমার ভুট্রার ফলন ভাল হয়নি।
কৃষক ফরিদ হোসেন জানান, ভুট্রা প্রদর্শনীর জন্য একটি সাইনবোর্ড বরাদ্দ থাকলেও আমি পাইনি। মাঠ পর্যায়ে দেখা গেছে এনএটিপি'র খরিপ মৌসুমের ৬টি ভুট্রা প্রদর্শনীর কাউকেই সাইনবোর্ড দেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে রবি মৌসুমের এনএটিপি'র মরিচের চারটি প্রদর্শনী বরাদ্দ পায় বালিয়াডাঙ্গী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ চারটি প্রদর্শনীর মধ্যে তিনটি প্রদর্শনী তিনজনকে দেওয়া হয়। এদের মধ্যে চাড়োল ব্লকের জতিন্দ্রনাথের ছেলে রতিন্দ্র নাথ, ধনতলা ইউনিয়নের ঠুমনিয়া ব্লকের হরেন্দ্র নাথের ছেলে কুলেশ্বর চন্দ্র সিংহ ও একই ইউনিয়নের ধনতলা ব্লকের গোলাম হোসেনের ছেলে আবদুল হাকিম।
এনএটিপি'র মরিচ প্রদর্শনীর জন্য সরকারী বরাদ্দ ছিল পোকামাড়া হলুদ ফাঁদ ৯টি, চারা-১৫০০টি, ইউরিয়া ৭ কেজি, টিএসপি ১০ কেজি, এমওপি ১০কেজি, জীবসাম ৫ কেজি, বোরন আধা কেজি ও সাইনবোর্ড। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে প্রদর্শনী প্রাপ্ত তিনজন চাষিই জানান তারা অন্যকিছু পাইলেও মরিচের চারা ও সাইনবোর্ড পাননি।
কৃষি অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে,প্রতিটি প্রদর্শনীর বিপরীতে ৪৫০০ টাকা বরাদ্দ ছিল। অন্যদিকে একটি মরিচ প্রদর্শনীও কাউকেই দেওয়া হয়নি।
একই ভাবে রাজস্ব প্রকল্পের আওতায় ৯০ টি ভুট্রা প্রদর্শনীর সারে ব্যপক অনিয়ম পাওয়া গেছে। প্রতিটি ভুট্রা প্রদর্শনীর বিপরীতে কৃষক সার পেয়েছেন ইউরিয়া ৫০ কেজি, টিএসপি ২৫ কেজি, এমওপি ১৫ কেজি, জীপসাম ২০ কেজি, জিং সালফেট ১কেজি ও বোরিক অ্যাসিড ১ কেজি। যেখানে সরকারী বরাদ্দ ছিল ইউরিয়া ৬৫ কেজি, টিএসপি ৩৫ কেজি, এমওপি ২৫ কেজি, জীপসাম ৩৫ কেজি, জিং দেড় কেজি, বোরন দেড় কেজি ও ম্যাগনেসিয়াম ৬ কেজি।
রাজস্ব প্রকল্পের আওতায় ভুট্রা প্রদর্শনীর চাষীরা জানান, তাদের ভুট্রার ফলন ভাল হয়নি। ৯০টি রাজস্ব ভুট্রা প্রদর্শনীতে সার কম দিয়ে বালিয়াডাঙ্গী কৃষি কর্মকর্তা শাফীয়ার রহমান লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ব্যপারে এনএটিপি'র ভুট্রা প্রদর্শনীর দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (এসএএও) শামীম হোসেন ও শহিদুজ্জামান শান্ত কৃষকদের সাইনবোর্ড ও সার কম দেওয়ার ব্যপারে জানান, কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সাইনবোর্ড না সরবরাহ করায় চাষী পর্যায়ে দিতে পারিনি। আমাদের নিজস্ব কোন কর্তৃত্ব এখানে নেই। এ ব্যপারে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সুমন আহম্মেদের সংগে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.আফতাব হোসেনের কাছে সাইনবোর্ড না দেওয়া ও সার কম দেওয়ার ব্যপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি এ রকম একটি অভিযোগ পেয়েছি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বালিয়াডাঙ্গী কৃষি কর্মকর্তা শাফীয়ার রহমানের অনিয়মের তদন্ত করা হবে। সাইনবোর্ড না দেওয়া কিংবা সার কম দেওয়ার মতো কোন অনিয়ম খুঁজে পেলে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উল্লেখ্য যে, গত ৫ জুলাই স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাগণ কৃষি অফিসারের দূর্নীতির প্রতিবাদে পথসভা করে ইউএনওকে স্মারকলীপি প্রদান করেন। সেই স্মারকলিপির কপি সংবাদকর্মীদেরও সরবরাহ করা হয়।