করোনায় খাদ্য সঙ্কটে আশঙ্কা বিবেচনায় রেখে সরকার ধানের উৎপাদন বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। আমনেও সরকার লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে যাওয়ার আশাবাদী ছিল। কিন্তু দেশে বন্যার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ওই আশা এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বন্যার কারণে এবার আমন চাষ নিয়ে কৃষকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। আর বন্যা দীর্ঘতর হলে অনেক অঞ্চলে আমনের আবাদ ব্যাহত হবে। ইতিমধ্যে সিলেট অঞ্চলে উজানের ঢলে বিপুল পরিমাণ আমন বীজতলা তলিয়ে গেছে। পানি সরে যাওয়ার কৃষকরা নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে চাচ্ছে। কিন্তু আবার উজানের ঢল আসে কিনা তাও নিশ্চিত নয়। এমন পরিস্থিতিতে ওই অঞ্চলের কৃষকদের পক্ষে বার বার আমন বীজতলা করার সামর্থ্য থাকবে না। উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের এমন ভাগ্য এখনো হয়নি। সেখানে এখনো পানির নিচে মাইলের পর মাইল জমি। অনেক কৃষকই মৌসুমের শুরু দিকেই বীজতলা করে ফেলেছিলেন। কিন্তু অতিবৃষ্টি ও উজানের ঢলে প্রায় পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। ভুক্তভোগী কৃষক এবং কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এবার দেশে ৫৯ লাখ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে এক কোটি ৫৬ লাখ টন। লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) থেকে ইতিমধ্যে সাড়ে ১৯ হাজার টন ধানের বীজ চাষিপর্যায়ে বিক্রির জন্য ২০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উৎপাদনের আশার মধ্যেই বন্যার প্রকোপ বেড়ে চলেছে। আর বন্যা দীর্ঘতর হলে অনেক অঞ্চলে আমনের আবাদ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী উজানের ঢলে বড় নদীগুলোর পানি আরো বাড়বে। প্লাবিত হতে পারে নতুন নতুন এলাকা। প্রায় এক মাস এ বন্যার স্থায়ী হতে পারে। আর দেশের অন্তত অর্ধেক জেলায় বন্যার প্রভাব পড়তে পারে।
সূত্র জানায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মতে, মধ্য আগস্ট পর্যন্ত আমনের আবাদ করা যাবে। সেক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২০ দিন বয়সী চারা রোপণ করতে হলে জুলাইয়ের মধ্যেই বীজতলা প্রস্তুত করতে হবে। ফলে চলতি মাসজুড়ে বন্যার এমন অবস্থা বিরাজ করলে বীজ লাগানোই হবে বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। আর বন্যার স্থায়িত্ব দীর্ঘ হলে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে আমনের অনেক বীজতলা তলিয়ে গেছে। তবে কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতি তাতে ভয়ের কিছু নেই। কারণ বিভিন্ন এলাকায় উঁচু জমি লিজ নিয়ে বীজতলা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। আর আগাম বন্যায় আমনের বীজতলায় তেমন প্রভাব পড়েনি। তবে বন্যা দীর্ঘতর হলে বিপদ বাড়বে। তখন বীজতলা করার সময় পাওয়া যাবে না।
এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল মুঈদ জানান, বন্যা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে নতুন একটি পরিকল্পনা নিয়ে রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে মেশিনের মাধ্যমে চারা রোপণের অংশ হিসেবে বীজতলার ট্রে পদ্ধতির দিকে নজর দেয়া হবে। অবশ্য এ উদ্যোগ পরীক্ষামূলক হওয়ায় খুব বেশি সম্প্রসারিত হচ্ছে না। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনীয় উপজেলাগুলোর ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে। প্রতি বিঘা বীজতলার জন্য ২৫টি ট্রে দরকার হয়। প্রতি উপজেলার জন্য ১৫ থেকে ২০ বিঘা বীজতলা নির্মাণের মতো ট্রে সরবরাহ করার প্রস্তুতি রয়েছে। বন্যার পানি সরতে দেরি হলে জমিতে বাঁশের মাচা বানিয়ে ট্রেতে বীজতলা নির্মাণ করার নির্দেশনা দেয়া হবে। আশা করি সে রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না।
অন্যদিকে বন্যার জন্য আমন চাষ ব্যাহত হলে খাদ্য নিরাপত্তায় সরকারের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে বলে মনে করছেন খাদ্য সচিব ড. নাজমানারা খানুম। চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে আমনের জন্য বিপদ উল্লেখ করে তিনি জানান, চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে আউশের খুব একটা ক্ষতি হচ্ছে না। তবে আমনের বীজতলার জন্য বড় ধরনের সংকট তৈরি হচ্ছে। আমন মার খেলে সরকারের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। এজন্য কৃষকদের বেশি বেশি সচেতন করা উচিত। তারা যেন উঁচু জমিতে বীজতলা তৈরি করেন। আর পরিস্থিতি খুব বেশি প্রতিকূলে থাকলে এ মুহূর্তে বীজতলা না করাই ভালো।