ঈদউল আযহায় কুরবানির পশুর মাংস ভাগাভাগি করে নেওয়ার ফলে এই সময় কমবেশি সবারই ঘরে মাংস থাকে। টাটকা মাংসের স্বাদ পেতে বেশ ক'দিন মেন্যুতে মাংসের তৈরি খাবার প্রাধান্য পায় বেশি। আর তা খেতে গিয়ে মুখ বা দাঁতের দুর্ঘটনা ঘটানো রোগীর সংখ্যাও বেড়ে যায় অন্য সময়ের চেয়ে বেশি। এরকম কমন কয়েকটি দুর্ঘটনার পূর্বসতর্কতা নিয়েই পবিত্র ঈদ উল আযহা'র প্রাক্কালে আজকের আয়োজন। আয়েশ করে মাংস খেতে খেতে হঠাৎ হাড়ে কামড় লেগে দাঁতে চিড়/ফাটল ধরা, ভেঙে যাওয়ার ঘটনা কুরবানির মৌসুমে অহরহই ঘটতে দেখা যায়। যাঁদের দাঁত আগে থেকেই গর্ত হয়ে বা আংশিক ভেঙে আছে, অবহেলা করে চিকিৎসা নেওয়া হয়নি, এমন দাঁত ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। ভেঙে যাওয়া পরবর্তী যন্ত্রণা কেমন তীব্র হবে, তা নির্ভর করে কতখানি ভেঙেছে, তার ওপর।
খাওয়ার সময় মনোযোগ থাকতে হবে খাবারের দিকে। এ সময় গল্পগুজব বা টিভি দেখায় মশগুল থাকলে হঠাৎ অসতর্কভাবে কামড় লেগেই এ ধরণের দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। দাঁতে কোনও সমস্যা থাকলে যত দ্রুত সম্ভব রেজিস্টার্ড (বিডিএস) ডেন্টাল সার্জনের কাছে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে নেওয়া উচিত।
অবহেলার ফল কখনওই ভাল হয় না। যাঁরা বছরের পর বছর ডেন্টাল চেকআপ করাচ্ছেন না, দাঁত ও মাড়ির মধ্যস্থলে প্রচুর পধষপঁষঁং (পাথর) জমে ঢ়বৎরড়ফড়হঃরঃরং হয়ে গেছে, তাঁদের জেনে রাখা ভাল- এই দীর্ঘদিনের অযতেœ দাঁত কিন্তু অনেকটা সাপোর্ট হারিয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে! ইদ উল আজহার সময়টায় দাঁতের ওপর বাড়তি চাপ পড়ায় এই দাঁতগুলো নড়বড়ে হয়ে এমনকি পড়ে যাওয়ারও ঝুঁকি থাকে!
এভাবে দাঁত হারানো মোটেও সুখকর নয়। দন্তহীন থাকারও আলাদা জটিলতা রয়েছে। ৬ মাস বা অন্তত ১২ মাস পর পর রেজিস্টার্ড (বিডিএস) ডেন্টাল সার্জনের কাছে চেকআপ করানো উচিত। এতে যে কোনও সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করে চিকিৎসা নিয়ে সময় ও খরচ- উভয়েরই সাশ্রয় করা যায়। দীর্ঘ রোগযন্ত্রণায় ভুগে কষ্ট পেয়ে শেষ পর্যন্ত অকালে দাঁত হারানোর মত করুণ পরিণতি বরণ করতে হয় না।
মাংস খেতে গিয়ে দাঁতে মাংস আটকে যাওয়ার সমস্যায় কমবেশি আমরা পড়েছি। আকাবাঁকা দাঁত, ক্ষয় হওয়া বা ভাঙা দাঁতের ক্ষেত্রে এটি বেশি ঘটতে দেখা যায়। এটি অস্বস্তিকর তো বটেই, কোনওক্রমে যদি মাংসের আঁশ মুখের ভেতর অলক্ষ্যে থেকে যায়, তাতে জীবাণুর আক্রমণে দাঁত ও মাড়ির বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি হতে পারে! আবার টুথপিক, পিন বা কাঠিজাতীয় কিছু দিয়ে খুঁচিয়ে তা বের করতে গেলেও মাড়ির বারোটা বাজতে পারে! দুই দাঁতের মধ্যবর্তী অংশ পরিষ্কার করতে ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করুন।
দাঁতে ত্রুটির কারণে বারবার খাবার আটকালে চিকিৎসার মাধ্যমে ত্রুটি সারানোর ব্যবস্থা নিন। অধিক পরিমাণে শক্ত হাড়, মাংস চিবানোর ফলে ঃবসঢ়ড়ৎড়সধহফরনঁষধৎ লড়রহঃ (নিচের চোয়ালের সাথে কানের সংযোগস্থল) এ ফরংঢ়ষধপবসবহঃ ঘটতে পারে, ব্যথা অনুভূত হতে পারে। ধীরস্থিরভাবে পরিমিত পরিমাণ খাবার খাওয়া, খাবারের একটি বড় টুকরোর বদলে ছোট কয়েকটি টুকরো বেছে নেওয়া ঞগঔ এর ওপর চাপ কিছুটা কমাতে পারে। এ সময়টায় অনেকে শখ করে চর্বিজাতীয় খাবার একটু বেশিই খেয়ে ফেলেন, যা খাওয়ার পর মুখের ভেতর চর্বি লেগে থেকে একটা চিটচিটে অস্বস্তি ভাব অনুভূত হয়। লেবু, আদা, আপেল, লেটুস, সেলেরি এগুলো এই অস্বস্তি কাটিয়ে মুখগহ্বর ফ্রেশ রাখতে সাহায্য করবে। সাথে পর্যাপ্ত পানি তো পান করতেই হবে।
তেল-চর্বি, মশলাসমৃদ্ধ গুরুপাক খাবার খাওয়ার পর কেউ কেউ কার্বোনেটেড কোমল পানীয়ের গ্লাস হাতে তুলে নেন। এতে থাকা অ্যাসিড এবং মাত্রাতিরিক্ত চিনি দাঁত সহ সারা শরীরের কী পরিমাণ ক্ষতি করে, তা আমরা সবাই জানি। উৎসব উদযাপনের আনন্দে সেটা কোনওভাবেই যেন ভুলে না যাই। কোমল পানীয়ের বদলে বরং হার্বাল চা, ফলের রস, জিরা পানি, গ্রিন টি বেছে নেওয়া যেতে পারে। যদি কোমল পানীয় পান করতেই হয়, সেটা পরিমাণে খুবই সামান্য হওয়া উচিত। খাবার খাওয়ার কিছু সময় পর মুখ ভালমত কুলকুচি করে ফেলা ভাল।
বিপদ সম্পর্কে পূর্বাভাস পেলে বিপদ এড়ানো সহজ হয়। লাল মাংস, কলিজা, মগজ, হাড় সবই নানাবিধ পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ খাবার। ডাক্তার/পুষ্টিবিদের নিষেধ না থাকলে বয়সের সীমা মেনে পরিমিত পরিমাণে এগুলো গ্রহণ করা খুবই উপকারী। তবে এগুলো খেতে গিয়ে মুখে কী কী সমস্যা বা দুর্ঘটনা হতে পারে, তা আমরা জেনে গেলাম। আশা করা যায়, বিষয়গুলো মাথায় রেখে সচেতন হলে এসব দুর্ঘটনা ঘটে আমাদের ইদের আনন্দে কোনও বিঘœ ঘটাবে না।