ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে লালমনিরহাটের পশুর হাট গুলো এখনও জমে উঠেনি। অথচ দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা বা মুসলমানদের শ্রেষ্ঠ ধর্ম কোরবানির ঈদ। হাট গুলোতে কুরবানীর পর্যাপ্ত পশু থাকলেও বেচাকেনা নেই বলে দাবি করছে খামারি ও হাট কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে জেলার বাইরের ব্যবসায়ীরা পশু কিনতে আসছেন না। শেষ পর্যন্ত হাট জমবে কি-না এমন আশঙ্কায় হাটের ভরসা করতে পারছেন না লালমনিরহাট জেলার গরু খামারিরা। এমন পরিস্থিতিতে প্রত্যাশিত লাভ করতে পারবে কি-না সে চিন্তায় মাথা ঘুরপাক খাচ্ছে তাদের। সব মিলিয়ে দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না এখানকার খামারি ও পশু ব্যবসায়ীদের। তাই হাটের অপেক্ষায় না থেকে অনেক খামারিরা মুঠোফোনের মাধ্যমে পরিচিতদের কাছে বার্তা প্রেরণ করেও পশু বিক্রির চেষ্টা করছেন।
বর্তমান পরিস্থিতি বুঝে হাটে পশু তোলার সিদ্ধান্ত নিবেন উল্লেখ করে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের খামারি রফিকুল আলম বলেন, ‘বর্তমানে পশুর খাদ্যের অতিরিক্ত মূল্য। এ ছাড়া অন্যান্য খরচ মিলে গরু লালন-পালনে ব্যয় বেড়েছে। ফলে দাম পেলেই কেবল পশু হাটে তুলব। অন্যথায় হাটে নিয়ে অবিক্রিত হয়ে ফেরৎ আসলে পরিবহনের অতিরিক্ত খরচ বেড়ে পশুর উৎপাদন মূল্য বৃদ্ধি হবে। ফলে লোকসানের পরিমানও বাড়বে। যে কারণে প্রতিনিয়তই হাটের খবর রাখছি।
আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের অপর খামারি ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘তবে মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) দুরাকুটি হাটে দুটি গরু নিয়ে এসেছিলেন। প্রায় ভোর বেলা থেকে গরু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, গরুর পিছে আমার যা খরচ হয়েছে তার অর্ধেক দামও বলেননি ক্রেতারা। তাই দেড় লাখ টাকার গরু ৭০ হাজারে বিক্রি করতে বাধ্য হলাম।
তিনি আরও বলেন, আমার কোরবানিযোগ্য ১৭টি গরু আছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার গরু ব্যবসায়ীদের হদিস মেলানো দায় হয়ে পড়েছে। ফলে উৎপাদিত পশুর অধিক লাভ পাওয়ার প্রত্যাশা ছেড়ে এবার নায্যমূল্য পেলেই খুশি হব।
লালমনিরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান জানান, লালমনিরহাট জেলায় কোরবানির ঈদে প্রায় ৫০ হাজার গবাদিপশুর প্রয়োজন পড়ে। বিপরীতে এবার প্রায় দেড় লাখ কোরবানির জন্য উপযুক্ত পশু উৎপাদিত হয়েছে। কিন্তু এমন মহামারি পরিস্থিতির কারণে হাট কেন্দ্রীক সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে লালমনিরহাটে বড় খামারিদের অনলাইনে পশু বিক্রির পরামর্শ দিলেও তা করেননি খামারিরা।
জানা গেছে, করোনার কারণে আর্থিক সঙ্কটে রয়েছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণি। যারা সাধারণত একাধিক ভাগে কোরবানি দিয়ে থাকেন। ফলে তাদের অনেকেই এবার কোরবানি দিতে পারা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। এতে করে কোরবানির পশু বিক্রি কম হচ্ছে।
এদিকে রোববার সন্ধা পর্যন্ত সরেজমিনে লালমনিরহাট জেলা শহরের বিডিআরহাটে আগতদের বেশিরভাগদের মুখে মাস্ক না পরাসহ সামাজিক দূরত্ব মানতে দেখা যায়নি। আর মুখে মাস্ক না থাকলে ক্রেতা-বিক্রেতাকে হাটে প্রবেশে নিষেধ থাকার বিষয়ে কোন তদারকি লক্ষ্য করা যায়নি। হাটের প্রবেশ মুখে শরীরের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণকারী যন্ত্রের ব্যবস্থা চোঁখে পড়েনি। হাটের মধ্যে একটি পশু থেকে আরেকটির দুরত্ব পাঁচ ফুট থাকার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন সচেতন সমাজ।
এ বিষয়ে সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের ‘বড়বাড়িহাট ইজারাদার আসহাবুল হাবিব লাভলু বলেন, ‘মাস্ক পরার জন্য সার্বক্ষনিক বললেও সকলেই মানতে চাচ্ছেন না। এবার দেশি গরুর প্রাধান্যই বেশি। যদিও লালমনিরহাট জেলার প্রায় চারপার্শে ভারতীয় সীমান্ত। এরপরেও অল্প কিছু ভারতীয় গরু বিভিন্নভাবে এসেছে। কিন্তু বেচাকেনা খুবই খারাপ। শেষ সময়েও হাট জমছে না। ফলে এলাকার খামারিরা বেশি দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
লালমনিরহাট পৌরসভার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শরিফ মোঃ বজলুর রহমান বলেন, পৌর এলাকার সব হাটেই হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য এখন থেকে হাটের দিন লোক পাঠানো হবে।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন পশুরহাট হাটগুলোতে দেখা যায়, কাঁদা ও সম্পূর্ন নোংরা অস্বাস্থ্যকরভাবে হাট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। যে কারণে হাট সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ তুলে বলছেন, জেলার এই হাট গুলো থেকে বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব পেলেও হাটের কোন উন্নয়ন করা হয়নি। আপনারা নিজেরাই দেখতেই পাচ্ছেন সম্পূর্নহাট কাঁদা পানিতে তলিয়ে রয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতেও এ সমস্যা সমাধানে উপজেলা প্রশাসন কোন উদ্যোগ নেননি। আর জেলার এসব হাটেই ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জজনা।
এ বিষয়ে জানতে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আবু জাফর জানান, জেলার প্রতিটা হাটে কাদায় একেবারে চলা মুশকিল। অনেক হাটে হাঁটু পর্যন্ত কাদা। আমাদের অফিসের অনেকেই গরু কিনতে গিয়ে দেখেছেন। হাট গুলো কেনো সংস্কার করা হচ্ছে না, তা জানার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নিকট জানতে চাওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই ব্যবস্থা নেবেন উপজেলা প্রশাসন।