করোনা নেগেটিভ সনদ সংগ্রহ নিয়ে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া প্রবাসী বাংলাদেশীর দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সময়মতো করোনা নেগেটিভ সনদ না পাওয়ায় তাদের বিদেশ যাত্রা বাতিল হচ্ছে। বিদেশযাত্রায় এখন গলার কাঁটা করোনা সনদ। ইতোমধ্যে অনেক যাত্রীকে নমুনা দিয়ে সঠিক সময়ে করোনা সনদ না পাওয়ায় গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হতে পারেনি। তাতে গচ্চা গেছে যাত্রীদের টিকিটের অর্থ।
আকাশপথে বিদেশ গমনকারীদের জন্য সরকার ২৩ জুলাই থেকে কভিড-১৯ (নেগেটিভ) পরীক্ষার সনদ বাধ্যতামূলক করেছে। সেক্ষেত্রে বিমানযাত্রার ৭২ ঘণ্টা আগে কোনো নমুনা জমা নেয়া হবে না এবং ২৪ ঘণ্টা আগে রিপোর্ট ডেলিভারির ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু এই নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটায় প্রবাসী যাত্রীরা চরম ক্ষতির মুখে পড়ছে।
বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা নেগেটিভ সনদের জন্য নমুনা দিতে গেলে বিদেশগামী যাত্রীদের পাসপোর্ট কপি, ভিসার কপি এবং টিকিটের কপি সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়। যাত্রীরা ফ্লাইটের নির্ধারিত সময়ের ৪৮ ঘণ্টা আগে নমুনা দিতে পারছে। তারপর সনদ পেলে তবেই তাদের বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হবে।
কিন্তু ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিকেল ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে সনদ দেয়ার কথা থাকলেও ওই সময়ের মধ্যে সাড়া মিলছে না। ই-মেইলে পাঠানোর কথা বলা হলেও তা পাঠানো হচ্ছে না। আবার কল সেন্টারে ফোন করেও কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। সেবার এমন নমুনায় ক্ষুব্ধ প্রবাস যাত্রীরা।
সূত্র জানায়, করোনার নেগেটিভ সনদ নিয়ে কড়াকড়িতে প্রতিদিনই যাত্রী ফেরত পাঠানো হচ্ছে। শুধু তাই নয় নির্ধারিত মেডিকেল সেন্টারে বাইরে থেকে সনদ নিলেও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষতা তা গ্রহণ করছে না। এ ক্ষেত্রে কেবল নির্ধারিত কেন্দ্রগুলো থেকে করোনাভাইরাস পরীক্ষার সনদই কেবল প্রযোজ্য। সেগুলো থেকে করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়েই যাত্রীরা যাচ্ছে।
সেক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। হার্ডকপি এবং সফটকপি পরীক্ষা করে তবেই একজন যাত্রীকে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বিদেশ যেতে করোনা টেস্ট করাতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিদেশগামীরা। অনেকেই সময়মতো টেস্টের ফলাফল হাতে পাচ্ছে না। ফলে ফ্লাইট মিস করছে।
সূত্র আরো জানায়, করোনা পরীক্ষা নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশ যাত্রার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করে। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী যাত্রীদের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করা হয়েছে। বিদেশযাত্রায় সরকার নির্ধারিত কেন্দ্রগুলো থেকে করোনা পরীক্ষার সনদ নেওয়ার বাধ্যবাধকতার প্রথমদিন গত ২৩ জুলাই থেকেই ওই বিষয়ে কঠোর অবস্থানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে এ প্রসঙ্গে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ জানান, করোনা সনদ নিয়ে শুরু থেকেই ঝামেলা হচ্ছে। ওয়েবসাইটে করোনা সনদ না পেলে আমাদের কিছু করার নেই। এভাবেই আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে মহাখালীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আইসোলেশন সেন্টারের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান জানান, অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে স্যাম্পল নেয়ার কাজ সরাসরি তত্ত্বাবধান করা হচ্ছে। এরপরে তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মীরা ল্যাবে টেস্টের জন্য নিয়ে যাচ্ছে। ডাটা এন্ট্রি, রিপোর্ট তারা দেখভাল করছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাজটি করছে এবং সিটি করপোরেশন তাদের সহায়তা করছে।
আর ল্যাবের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের কারণে রিপোর্ট দিতে কিছুটা দেরি হয়। ২০টি কাউন্টারের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। সেখানে মহিলা, বয়স্ক, বিদেশিদের জন্য আলাদা কাউন্টার করা হয়েছে। কোনো যাত্রী ফিরে যাচ্ছে না। আর লোকবল সংকটের কারণে বাসা থেকে স্যাম্পল নিতে পারছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের লোকবল বাড়ছে। আশা করা যায় তা চালু হবে।