এবার ঈদ-উল-আজহাও তেমন জাঁকজমক ও আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হতে পারছে না করোনা মহামারীর কারণে। গত ঈদ-উল-ফিতরও কেটেছে একরকম উৎসবহীন পরিবেশে। তখন দেশজুড়ে চলছিল লকডাউন। প্রায় গৃহবন্দী জীবনযাপন। বাস, লঞ্চ, স্টিমার, ট্রেন, এমনকি বিমান চলাচলও বন্ধ ছিল। ফলে মানুষ নাড়ির টানে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উৎসব উদযাপন করতে পারেনি। তবে এর মধ্যেও ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিশেষ করে গার্মেন্টস শ্রমিকরা দলে দলে হেঁটে অথবা নানা কষ্টসাধ্য কৌশলে ছুটে গেছে গ্রামের বাড়ি। ফলে স্বভাবতই বেড়েছে সংক্রমণের ঝুঁকি। সে তুলনায় করোনা পরীক্ষার কেন্দ্র সীমিত থাকায় রোগ নির্ণয় হয়েছে কম। গত ঈদে বিধিনিষেধ থাকায় মানুষ জাতীয় ঈদগাহসহ দেশের উন্মুক্ত ঈদগাহ প্রাঙ্গণে এক কাতারে শামিল হয়ে নামাজ পড়তে পারেননি। মসজিদে যাওয়ার অনুমতি থাকলেও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ নানা বিধিনিষেধ থাকায় খুব কম সংখ্যক মানুষ যেতে পেরেছেন মসজিদে। এবারের ঈদেও তার ব্যতিক্রম ঘটবে না। ঈদগাহ কিংবা উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে একসঙ্গে সার বেঁধে নামাজ আদায় করা যাবে না। মসজিদে নামাজ আদায় করতে গেলেও মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধিসহ সামাজিক দূরত্ব রক্ষা। কোলাকুলি, হাত মেলানো নিষিদ্ধ। মুখে মাস্ক থাকতে হবে অবশ্যই। এতে কি সামাজিকতা, সভ্যতা-ভব্যতা, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি আদৌ বজায় রাখা সম্ভব? অথচ ঈদ আসে মানুষে মানুষে ধনী-গরিব পারস্পরিক সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি-মঙ্গল আকাঙ্খার বার্তা নিয়ে। এসব আবার কবে ফিরে আসবে মানুষের মধ্যে -তা বলা কঠিন।
ঈদ-উল-ফিতরের চেয়ে ঈদ-উল-আজহায় অর্থনৈতিক কার্যক্রম বেড়ে যায় বহুগুণ। এর প্রধান আকর্ষণ কোরবানি। ইতোমধ্যে জানা গেছে, কোরবানির হাট বসেছে সীমিত সংখ্যক। পশুর আমদানিও কম। কেননা, পশুর হাটে ক্রেতা সমাগম নেই তেমন। মানুষের আয়-উপার্জন কমে যাওয়ায় কোরবানিও হবে কম। ফলে খামারি ও পশু ব্যবসায়ীরা রয়েছেন দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনায়। একটু যারা সচ্ছল ও সম্পন্ন তারা গরু কিনছেন অনলাইনে। বিপাকে পড়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। যে কারণে এবার কাঁচা চামড়া রফতানির কথা ভাবছে সরকার। অন্যদিকে বন্যার উপদ্রবে অন্তত ২৩টি জেলা দুর্যোগকবলিত। বানভাসি দুর্গত মানুষদের অবশ্য ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার পাচ্ছেন অন্ত ১২ লাখ পরিবার। হয়তো নগদ আর্থিক সহায়তাও দেয়া হবে ঈদ উপলক্ষে। ঘরমুখো মানুষের ভিড়ও কম থাকবে। ফলে এবার টিকেটের হাহাকার নেই বললেই চলে।
রাজধানী ও আশপাশের এবং বন্দর এবং বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রামেরও অধিকাংশ শ্রমজীবী ও কর্মজীবী প্রধানত বহিরাগত। ফলে ঈদের ছুটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পড়িমরি করে যে যেভাবে পারে হয়তো ছুটে যাবে গ্রামের বাড়িতে। এ সময় কার্যত দূরপাল্লার যানবাহন, ট্রেন ও নৌচলাচল সীমিত থাকলেও মানুষ একটা না একটা উপায় বের করে নেবে। সুতরাং লাখ লাখ শ্রমজীবীর কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার চরম দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা থাকবেই। সর্বস্তরের মানুষের এই দুর্ভোগ সত্যি বলতে কি ঈদ-উল-আজহায় অনেক বেশি হবে। যা হোক, আমরা আশা করব, করোনা পরিস্থিতির যদি উন্নতি হয় এবং সাধারণ ছুটি যদি আর বাড়ানো না হয় তাহলে ট্রেনসহ সবরকম যানবাহন চলবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। সর্বস্তরের মানুষ যাতে দুর্ঘটনাসহ যে কোন ঝুঁকি ব্যতিরেকে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে আসতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে সরকার, রেল, নৌ ও যানবাহন কর্তৃপক্ষসহ বেসরকারী পরিবহন মালিকদেরও সবিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। তখন যেন কোনক্রমেই লেজেগোবরে পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। এজন্য সর্ব স্তরের মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। ঈদে করোনার সংক্রমণ যেন বেড়ে না যায় সেজন্য সতর্কতা জরুরি।