করোনার এই দুঃসময়ে বানের পানিতে বন্দি প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও মধ্যাঞ্চল বানের পানিতে ভাসছে। রাজধানী ঢাকার চারপাশের মানুষ দুশ্চিন্তায় রয়েছে। বন্যার এখন আগ্রাসী রূপ। খোদ রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় বানের পানি ঢুকে পড়েছে। আগস্টজুড়েই থাকবে বন্যা। এর মধ্যেই কোরবানির ঈদ। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ১৯৮৮ সালের বন্যাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে এবারের বন্যা। নদীভাঙনও দেখা দিয়েছে অনেক স্থানে। নদীগর্ভে যাচ্ছে স্কুল-কলেজ, পাকা স্থাপনা। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ঢাকা সিটির নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। তুরাগ নদের মিরপুর ও টঙ্গী পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে। ঢাকার পাশের জেলাগুলোতেও সত্বর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা নেই। আবহাওয়া অফিস বলেছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয়। গত সোমবার থেকে দেশের প্রায় সব জেলায় টানা বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও কোথাও ভারি বর্ষণ হচ্ছে। এ কারণে নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। উজানেও ভারি বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া অফিস। ফলে ঈদের আগে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বন্যা থাকবে, বলেছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। সংস্থাটি জানিয়েছে, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা কম। শরীয়তপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর ও রাজবাড়ীর বন্যা পরিস্থিতি আগের মতোই থাকবে। উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে উত্তরাঞ্চলের ধরলা ও তিস্তার পানি আরো বাড়তে পারে। কুশিয়ারা ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই সময়ে বর্ষাকালীন রোগ ও বন্যাজনিত অসুস্থতায় বিপর্যস্ত মানুষ, বিপর্যস্ত দেশের জনস্বাস্থ্যব্যবস্থা। রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলÑঘরে ঘরে মানুষ ভুগছে কোনো না কোনো রোগে। বর্ষাজনিত জ¦র, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, কালাজ¦র, টাইফয়েডের মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। নানা রোগে মৃত্যু বাড়ছে প্রতিদিন। বিশেষ করে ডায়রিয়া নিয়ে এবার বেশি উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিভাগ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে বন্যাজনিত অসুস্থতায় এ পর্যন্ত মারা গেছে ১২৯ জন। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৪ হাজার ৩৩৬ জন। করোনার সঙ্গে বন্যা ও বর্ষাজনিত রোগ স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। এক দুর্যোগের ওপর আরেক দুর্যোগ হাজির হয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।