পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের গ্রুপিং কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় ইউনিয়ন যুবলীগ সহসভাপতি রাকিব উদ্দিন রুম্মান (৩০) ও যুবলীগ নেতা সাব্বির আহম্মেদ ইসাদ তালুকদার (২৭) নামের দু‘ চাচাতো ভাই নিহত হয়। রোববার সন্ধায় উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের কেশবপুর বাজারের এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ সোমবার বিকাল পর্যন্ত ১১জনকে আটক করেছে। এদিকে জোড়া খুনের পর গ্রেপ্তার অতংকে এলাকা পুরুষ শূণ্য হয়ে পড়েছে। সোমবার বাদ আসর কেশবপুর কলেজ মাঠে জানাজা শেষে স্ব স্ব পারিবারিক কবরস্থানে জোড়া লাশের দাফন কাজ সম্পাদন করা হয়েছে।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেশবপুর কলেজের অধ্যক্ষ সালাউদ্দিন পিকু জানান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ইউ.পি. চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন লাভলু দলীয় নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানী, খামখেয়ালী করে অধিকার বঞ্চিত সহ জনগনের ন্যায্য পাওনা না দিয়ে নিজের মনগড়া কাজকর্ম করে আসছেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রভাব বিস্তার নিয়ে দির্ঘ দিন ধরে এদের দু‘ পক্ষের সমর্থকদেও মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এ ঘঁটনায় সভাপতি অধ্যক্ষ সালাহউদ্দিন পিকু শুক্রবার (৩১ জুলাই) বিকেলে কেশবপুর কলেজে একটি জরুরী মিটিং ডাকেন। দুপুর বারোটার থেকেই সাধারন সম্পাদক সমর্থিত লোকজন মিটিংএ আসতে পারেন এমন সম্ভাব্য নেতাকর্মীদেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটিংয়ে না আসার জন্য বাধা প্রদান করতে থাকে। বাধা প্রদানের ঘটনায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি ইব্রাহিম, বশির, যুবলীগ নেতা রুম্মান, পিন্টু মিঠু গং প্রতিবাদ করলে সাধারন সম্পাদক সমর্থিত যুবলীগ নেতা রফিকুল রাশমোহন সহ অন্যান্যরা দুপুর দুইটার দিকে সভাপতি সমর্থিত কর্মীদের উপর হামলা করে। এ ঘটনায় সভাপতি সমর্থিত ইউপি সদস্য যুবলীগ নেতা সুজন তালুকদার, ছাত্রলীগ সভাপতি ইব্রাহিম, বশির, যুবলীগ নেতা রুম্মান, পিন্টু মিঠুকে আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান, রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কেশবপুর বাজারে রুম্মান নবী আলীর চায়ের দোকানে চা খাইতেছিল এবং রুম্মান ওই দোকানের সামনে দাড়ানো থাকা অবস্থায় আচমকা ফারুক, রাফিক, রাশমোহন, ইব্রাহিম, রাসেল, নুরুল ইসলাম গংরা ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে রুম্মান ও নিশাতের উপর আক্রমণ করলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সালাউদ্দিন পিকুর আপন ভাই যুবলীগ নেতা রাকিব উদ্দিন রোমান ও চাচাতো ভাই ইশাত তালুকদারসহ ৬জন আহত হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আখতারুজ্জান জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই নিশাতের মৃত্যু হয়। অপর দিকে রাত নয়টার সময় রাকিবকে নিয়ে আসলে কুড়ি মিনিট পড়েই তার মৃত্যু হয়। তাদের শরীরে ধারালে অস্ত্রের কোপসহ লোহার রডের আঘাত রয়েছে।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আবুল বশার খান বলেন, শুক্রবারের হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ সভাপতি ইব্রাহিম ও কলেজ ভাংচুরের ঘট্ঁনায় কলেজের কর্মচারী মিন্টু বাদী হয়ে পৃথক দুটি এজাাহার দায়ের করে। এ ঘটনায় মামলা রুজু করলে খুনের মত ঘটনা ঘটতো না।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, লাশ ময়না তদন্তের জন্য জেলা মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় সোমবার পর্যন্ত এগারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এলাকায় বিপুল পরিমান পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সোমবার বেলা ৪ টা পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। যে কোন সময় অভিযোগ আসতে পারে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পটুয়াখালী মর্গে ময়না তদন্ত শেষে সোমবার বাদ আসর কেশবপুর কলেজ মাঠে জানাজা শেষে স্ব স্ব পারিবারিক কবরস্থানে জোড়া লাশের দাফন কাজ সম্পাদন করা হয়েছে। জানাজা অনুষ্ঠানে স্থানীয় সাংসদ জাতীয় সংসদের সরকারী প্রতিষ্ঠান সমুহের সভাপতি আলহাজ্ব আ.স.ম ফিরোজ উপস্থিত ছিলেন।